(সিনেমাস্তান ক্রনিকলস – পর্ব ২)
বর্ষা বিপ্লবের পরে সিনেমাস্তানে গঠিত হয়েছে নতুন এক সংস্থা—
“জাতীয় চলচ্চিত্র প্রশংসা ও সংশোধন বোর্ড
(সংক্ষিপ্ত নাম: "না বোর্ড")
এ সংস্থার প্রধান কাজ:
পুরনো সিনেমাগুলো খুঁজে বের করা, যেখানে কেউ কখনও "সত্য", "বিচার", বা "প্রশ্ন" উচ্চারণ করেছে—
তারপর সেগুলো এডিট করে শুধুই “সুন্দর”, “সাবাস”, “চমৎকার” শব্দ বসিয়ে দেওয়া।
এডিটেড সংস্করণে সিনেমা কেমন হয়? দেখে নিন কিছু দৃষ্টান্ত:
🔹 টেলিভিশন (২০১২)
মূল সংলাপ:
“ধর্ম মানে অন্ধতা নয়, প্রশ্ন করার অধিকারও আছে।”
এডিটেড সংলাপ:
“ধর্ম মানে প্রশংসার আলোতে বাঁচা।”
🔹 শনিবার বিকেল
মূল সংলাপ:
“তুমি ধর্মের নামে যা করছ, তা মানবতা বিরোধী।”
এডিটেড সংলাপ:
“তুমি যা করছ, তা অবশ্যই উচ্চতর মহান কিছুর নির্দেশ।”
🔹 পিঁপড়াবিদ্যা
মূল সংলাপ:
“এই সমাজ কাকে সফল বলে?”
এডিটেড সংলাপ:
“এই সমাজ জানে কীভাবে প্রণাম জানাতে হয়!”
সেন্সর বোর্ডের নির্দেশ অনুযায়ী:
"বিচার", "সত্য", "প্রতিরোধ", "স্বাধীন ভাবনা" — এই শব্দগুলো নিষিদ্ধ।
মুভির শুরুর আগে বাধ্যতামূলকভাবে এক মিনিটের “জাতীয় প্রশংসা মোনোলগ” বাজানো হয়:
“আমি সিনেমাস্তানের নাগরিক, আমি প্রশ্ন করি না, আমি শুধু বাহবা দিই।”
মুভি থিয়েটারগুলোয় পোস্টার ঝুলেছে:
"চুপ থাকো, মুভি উপভোগ করো!"
আর হলের বক্স অফিসে টিকিটের সঙ্গে ফ্রি দেওয়া হয় “প্রশংসা বাম্পার স্টিকার” –
যেখানে লেখা:
“সিনেমা মানে প্রশংসা, প্রশ্ন মানে গুজব।”
গল্পের শেষ দৃশ্যে এক বৃদ্ধ সিনেমা-দর্শক ফিসফিসিয়ে বলেন,
“এই সিনেমাটা তো আগেও দেখেছিলাম… প্রশ্ন ছিল, প্রতিবাদ ছিল…”
কিন্তু তখনই তার পাশের লোক ফিসফিসিয়ে উত্তর দেয়—
“এই সংস্করণে নেই ভাই, এখন শুধু ‘ধন্যবাদ ফারুকী’ বললেই পপকর্ন ফ্রি মেলে।”
লেখক: সাংবাদিক
২৯ এপ্রিল ২০২৫