(সিনেমাস্তান ক্রনিকলস – পর্ব ৩)
বর্ষা বিপ্লবের পরে সিনেমাস্তানে প্রশ্ন করাটা এতটাই অতীত হয়ে গেছে যে, সরকার সিদ্ধান্ত নিল—
“স্বাধীন চিন্তা” এখন ইতিহাসের অংশ। তাই সেটাকে রাখা হবে জাদুঘরে।
তৈরি হলো নতুন প্রতিষ্ঠান:
“জাতীয় স্বাধীন চিন্তা জাদুঘর ও মূর্খতা উৎসাহ কেন্দ্র”
লোকমুখে নাম: “চিন্তানগর স্মৃতি নিকেতন”
ভেতরে ঢুকলেই লেখা চোখে পড়ে—
"ভুলের ইতিহাস জানো, যেন আর কেউ সাহস না করে!"
প্রথম কক্ষে রাখা মাথাগুলো:
• একজন শিক্ষক, যিনি বলেছিলেন, “চিন্তা করো, বিশ্বাস করো না অন্ধভাবে।”
• একজন কবি, যার কবিতায় লেখা ছিল, “যে প্রশ্ন করে, সেই তো বাঁচে।”
• একজন ছাত্র, যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে বলেছিলেন, “পথভ্রষ্ট উন্নয়ন মানে শোষণ।”
প্রতিটি মূর্তির নিচে লালচে পিতলের ফলকে লেখা:
“চুপ থাকলে বাঁচতেন। বেশি ভেবেছিলেন।”
দ্বিতীয় কক্ষ: স্বাধীনতা সিমুলেটর
ভিজ্যুয়াল রিয়ালিটি চশমা পরে কেউ চাইলেই দেখতে পারে
“একটা বিকল্প বাস্তবতা, যেখানে মানুষ প্রশ্ন করে, আর সরকার জবাব দেয়।”
কিন্তু ৩০ সেকেন্ডের পরেই স্ক্রিনে ভেসে আসে–
"আপনার চিন্তা সীমা অতিক্রম করেছে। টিকাদান কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।"
তৃতীয় কক্ষ: প্রশংসা অনুশীলন চেম্বার
এখানে দর্শনার্থীদের মুখে বসানো হয় অটোমেটিক প্রশংসা-মন্ত্রপাঠ যন্ত্র।
যন্ত্রটি মুখ নড়লেই বলে—
“আমার কোনো প্রশ্ন নেই, কারণ আমি নাগরিক নই, শুধু দর্শক!”
শেষ কক্ষে রাখা এক বিশাল আয়না,
যার নিচে লেখা—
“তুমি যদি ভাবো তুমি আলাদা, তাহলে এই আয়নার মানুষটা ভুল।”
জাদুঘরের শেষ প্রান্তে এক শিশু দাঁড়িয়ে থাকে, সে দেয়ালে ছোট করে পেনসিল দিয়ে লিখে দেয়—
“তোমরা যা রেখেছ স্মৃতি হিসেবে, সেটাই একদিন আবার স্বপ্ন হয়ে ফিরবে।”
দ্রুত এসে এক রোবোটিক গার্ড তার পেনসিল কেড়ে নেয়।
সে চিৎকার করে ওঠে—
“সিনেমা প্রশ্ন করে, আমি কেন পারি না?”
পর্দা নামে।🫵
লেখক: সাংবাদিক
২৯ এপ্রিল ২০২৫