Posts

গল্প

সেই রাতে আকাশে চাঁদ ছিল না

April 30, 2025

Tahmeed Safwan

76
View

ফোন এ দুইবার রিং হতেই কেটে দেয় পিপ্লু। একটু পর আবার বেজে ওঠে ফোন। রিংটোন এর হালকা রিনিঝিনি আওয়াজটাও বড্ড বিরক্তিকর ঠেকে ওর কাছে। একরাশ বিরক্তি নিয়ে রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ভেসে আসে এক কান্না জড়ানো কণ্ঠ, এই অন্ধকার আমার অসহ্য লাগছে পিপ্লু। আমায় নিয়ে যা প্লিজ। এদিকে পিপ্লু বজ্রাহত হয়ে বসে আছে বিছানার ওপর ফোনটা হাত এ নিয়ে। মনে ঝড় চলছে রীতিমত। এই কণ্ঠ তো ইশিতার। কিন্তু, ইশিতা কিভাবে ? কিভাবে সম্ভব , ভাবতে ভাবতে একটা তীক্ষ্ণ চীৎকার শুনতে পায় ওপাশ থেকে। ফোনটা হাত থেকে পরে যায় ওর। হাত এ নিয়ে চেক করতেই দেখে কলটা কেটে গেছে, নাম্বার টা চেক করতে গিয়ে আবারো হতভম্ব পিপ্লু। লাস্ট কল রিসিভ এ কোন নাম্বার ই নেই। ওর লাস্ট কথা হয়েছিল শিপন এর সাথে রাত ১১ টায়। ওইটাই দেখাচ্ছে। বিছানা ছেড়ে উঠে দাড়ায় পিপ্লু। টেবিল এর ওপর হাতড়ে হাতড়ে সিগারেট এর প্যাকেট টা হাত এ নেয়। একটা সিগারেট ধরিয়ে ভাবতে থাকেকি হচ্ছে এসব। ইশিতার কল। আর ভাবতে পারে না পিপ্লু, ফোনটা হাত এ নিয়ে শিপন কে কল দেয় একটা, কয়েকবার রিং হতেই শিপন রিসিভ করে কল। ঘুম ঘুম কণ্ঠে বলে, দোস্ত, প্লিজ এখন বের হব না, দোহাই আল্লাহর...... ইশিতার কল পেলাম একটু আগে, বলছে ওর অন্ধকারে ভালো লাগছে না, কি করব ? ওপাশে পিনপতন নীরবতা। শিপন একটু কেশে উঠে, বলে দোস্ত তুই ৫ মিনিটের ভেতর রাস্তার মোড় এ আয়। এক্ষন বের হচ্ছি আমি, বলেই রেখে দেয় ফোন। পিপ্লু এদিকে গায়ে শার্ট আর একটা শাল জরিয়ে নেয়। শীত যাব যাব বলে যাচ্ছেই না। 
রাস্তার মোড় এ আসতেই দেখে শিপন দাড়িয়ে আছে চুপচাপ। কাছে আসতেই বলল কি বলল রে ইশিতা। পিপ্লু চিন্তিত ভাবে বলে, ওর নাকি অন্ধকারে কষ্ট হচ্ছে। দোস্ত চল ওকে নিয়ে আসি। ভোর হতে দেরি নেই বেশি। ওকে আমি কাজি অফিস এ বিয়ে করে ফেলব। যা হবে দেখা যাবে। শিপন ওকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করে, আরে এত টেনশন করিস না, এখন চল বাসায় চল তো। পিপ্লু বিরক্তভরা কণ্ঠে বলে, সিরিয়াস টাইমে এসব কি বলিস ভাই, ওকে রুম এ আটকে রেখেছে , আর আমি বাসায় যাব এখন ??  আচ্ছা তাহলে কি করতে চাস? পিপ্লু হাত ধরে টানে শিপন কে, চল তাড়াতাড়ি চল। শিপন ফোনটা বের করে কাকে যেন মেসেজ করে, তারপর পকেট এ ঢুকিয়ে বলে চল তাহলে, বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। হাঁটতে হাঁটতে জিজ্ঞেস করে পিপ্লুকে, প্রায়ই ফোন দেয় নাকি ইশিতা, নাহ, অভিমান ভরা কণ্ঠে বলে পিপ্লু। আজ অনেকদিন পর দিল, কিন্তু কাঁদছিল জানিস। বুকের ভেতরটা মোচর দিল কান্না শুনে ওর, একটু থেমে শিপন এর দিকে তাকায়, আজকে দেখেছিস আকাশে চাঁদ ওঠে নি। ওইদিন রাত্রেও আকাশে চাঁদ ছিল না, আফসোস। কথা বলতে বলতে ওরা একসময় থমকে দাড়ায়। শিপন বিস্ফারিত চোখ এ দেখে ওরা কবরস্থান এর সামনে দাঁড়ানো। কি ব্যাপার দাড়িয়ে গেলি কেন? চল বলে ভেতরে ধুকে যায় পিপ্লু। দুইজন এ ভেতরে ঢুকে পরে। একটা প্রায় নতুন কবরের সামনে দাড়ায় দুইজন। পিপ্লু কতক্ষন স্থানুর মত দাড়িয়ে থাকে, পরক্ষন এ ফিসফিস করে বলে, ইশিতা, চল তোমাকে নিতে এসেছি। আজকে তোমাকে নতুন বেলি ফুলের মালা কিনে দিব, বলতে বলতে হাসা শুরু করে, উন্মাদের হাশি। শিপন পাশে হতভম্ব দৃষ্টিতে তাকিয়ে। হাসি থামিয়ে পিপ্লু গুন গুন করে একটা গান গাইতে থাকে, অস্পষ্ট সুরে সেই গান শুনে গা হিম হয়ে আসে শিপনের। তৎক্ষণাৎ পিপ্লুকে জাপটে ধরে শিপন। টেনে নিয়ে আসার চেষ্টা করে কবরস্থান থেকে, ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে কোথা থেকে আরও দুইজন এসে ধরে ফেলে পিপ্লুকে। টেনে বের করে আনে ওকে কবরস্থান থেকে। পিপ্লু এদিকে উন্মাদের মত চিৎকার করছে, পরক্ষনেই হাসছে। শিপন চিৎকার করে একজনকে বলে , এই মুহূর্তে ডক্টর আমিনকে কল দে। বাসায় নিয়ে যা আগে আমার ওকে। 
এদিকে পিপ্লু বলছে, সেইদিন আকাশে কোন চাঁদ ছিল না ইশিতা। তুমি ছিলে শুধু। তুমি কোথায়? কোথায় তুমি?

Comments

    Please login to post comment. Login