এক্সকিউস মি, আমাকে একটু হেল্প করবেন ? কথাটা শুনতেই ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকায় পিপ্লু । চশমা পড়া ক্যাপ মাথায় একটা মেয়ে। একটা প্যাকেট এর জুস খেতে খেতে ওকে বলল, আমার রিকশা দাড়িয়ে আছে, আপনার কাছে কি ভাংতি হবে ২০ টাকা ? কথাটা বলল ও এমনভাবে, যেন এভাবে হুট করে ভাংতি চাওয়া টা তেমন কোন ব্যাপারই নাহ। শিউর, বলেই তাড়াতাড়ি মানিব্যাগ হাতড়াতে থাকে পিপ্লু। মেয়েটা হেসে ফেলে বলে, আস্তে আস্তে আমার ট্রেন ছেড়ে দিচ্ছে না। ওর কাছ থেকে টাকা টা নিয়েই দৌড় দিল মেয়েটা। যেতে যেতে বলল , বিকাল ৩ টায় এখানে থাকবেন অবশই। পিপ্লু মেয়েটার গমনপথের দিকে তাকিয়ে থাকল কিছুক্ষন। তারপর ক্লাস এর দিকে হাঁটা দিল সোজা। ক্লাস শুরু হয়ে গিয়েছে বোধহয়।
ক্লাস এ ঢুকে দেখে ক্লাস শুরু হয় নি এখনও। ও একটু পিছনের দিকে একটা বেঞ্চে বসতে না বসতেই একটা পরিচিত কণ্ঠ শুনতে পায়, একি বললাম না ৩ টায় থাকতে, ক্লাস এ এসে হাজির দেখি। টাকা নিয়ে পালিয়ে যাব নাকি আমি হুহ। পিপ্লু তাকাতেই দেখে একটু আগের ক্যাপ পড়া মেয়েটা। যদিও এখন ক্যাপ পড়া নেই। কাধ পর্যন্ত চুল মেয়েটার, চশমাটা ওপরে উঠান। ওর হতচকিত ভাব দেখে মেয়েটা একগাল হেসে বলে, আমি ইশিতা। পিপ্লুর বেশ ভালো লাগে মেয়েটার সহজ সাবলীল এই আচরণ। আমি তৌফিক আলম। মেয়েটা ভুরু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে, ডাকনাম কি তৌফিক ? নাহ পিপ্লু।বলেই মনে মনে বলে ওঠে, গেসি গেসিরে। মেয়েটা মুখ টিপে একটু হাসে, বলে বেশ ইন্টারেস্টিং নাম। সেই শুরু, প্রথমে বন্ধুত্ব , তারপর প্রেম। পিপ্লু যেদিন ওকে প্রপোজ করে, ওইদিন আকাশে চাঁদ ছিল না। পিপ্লু ধরা গলায় বলেছিল, আজকে আকাশে চাঁদ নেই, কিন্তু আমার সামনে ইশিতা আছে। অনেকটা সিনেমেটিক ব্যাপারস্যাপার । ইশিতাও এই লাজুক, এই আবেগপ্রবণ ছেলেটার প্রেমে পরেছিল। যাকে বলে উথাল পাথাল প্রেম।
কিন্তু, এরকমই একটা রাত, যে রাত এ আকাশে ছিল না চাঁদ নিয়ে যায় ইশিতা কে পিপ্লুর জীবন থেকে। বাসায় সুইচ বোর্ড টায় বেশ সমস্যা করছিল ইশিতার। এরকমই একদিন পিপ্লুর সাথে ফোন এ কোথা বলতে বলতে লাইট জ্বালানোর জন্য সুইচ টিপতেই...... ফোন এর ওপাশ থেকে পিপ্লুর উদ্বিগ্ন কণ্ঠ, হ্যালো হ্যালো... নাহ ইশিতা জবাব দেয় নি সেদিন আর। এর পর থেকেই ও আশেপাশে ইশিতাকে দেখতে শুরু করে, কল পাওয়া শুরু করে, দৌড়ে কবরের কাছে চলে যায়। ১ বছরের মত ট্রিটমেন্ট এর জন্য ভার্সিটি থেকে বাইরে ছিল। সবাই মানসিক সমস্যা হিসেবে দেখলেও শিপন এর যেন একটু দোটানা আছে। ও নিজে পিপ্লুর বাসায় গেলে কার যেন একটা উপস্থিতি টের পায়। গরমকালেও পিপ্লুর রুম টা থাকে বরফের মত শীতল। । আর ও নিজেও ফোন এর ব্যাপারটা দেখেছে। কেউ একজন ফোন দেয় ওকে, কোন নাম্বার ওঠে না, ও কানে লাগিয়ে দেখেছে, কে যেন গুন গুন করে গান গাইছে। আর হ্যাঁ, ইশিতা খুব সুন্দর গান গাইত। এরকম মাঝে দিয়ে হচ্ছিল না ৩ মাস এর মত। আজকে দেখে আবারো একি কাণ্ড। পিপ্লুকে কড়া ঘুমের ওষুধ দিয়ে ঘুম পাড়ান হয়েছে। শিপন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে তাকিয়ে থাকে ওর দিকে......।
71
View