ভাস্কর
কুমার অরবিন্দ
এক
কিছুতেই রাজি হয় না অলকা। স্বামীর কথায় তার গা ঘিনঘিন করে। বমিবমি পায়। প্রথমবার কথাটা শুনেই বিদ্যুতের শক খাওয়ার মতো বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে থাকে। এমন অসভ্য কথা কেউ তার বউকে বলতে পারে!
সুজয় কুমার মিস্ত্রি এখনও বউকে ভালোভাবে বুঝে উঠতে পারেনি। মাত্র দুই মাস হলো বিয়ে হয়েছে। বউয়ের গা থেকে এখনও বিয়ের গন্ধ যায়নি। অলকা কাছে এলে এখনও সে নতুন বউ নতুন বউ গন্ধ পায়।
সুজয়ের বহুদিনের লালিত স্বপ্ন একটা ভাস্কর্য তৈরি করবে। বউকে মনের কথা বলতেই কিছুক্ষণ হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইল। তারপর ধীরে ধীরে বলল, তোমার মাথা ঠিক আচে? সুস্ত আচো?
সুজয় বুঝে পেল না মাথা বেঠিক হওয়ার মতো সে কী বলল। অভাবের সংসার। নানা ধরনের মূর্তি তৈরি করেই এখন দিন চলছে। কাঠ কেটে কবি-সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে দেব-দেবীর মূর্তি তৈরি করে। দেব-দেবীর মধ্যে সরস্বতী আর রাধাকৃষ্ণের মূর্তি বেশি বিক্রি হয়, সাহিত্যিকদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথের আর রাজনীতিবিদদের মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমানের।
সিজন বুঝে সুজয় কাজ করে। দশহাতি দুর্গা প্রতিমা বানানো বেশ কঠিন। দুর্গা মায়ের পায়ের কাছে অতিরিক্ত একটা অসুরও বানাতে হয়। তবে দুর্গা পূজার সময় দুর্গা প্রতিমার কদর বেড়ে যায়। দামটাও পাওয়া যায় আশানুরূপ।
যে কোনো নাম-কীর্তনের মেলায় যুগল রাধাকৃষ্ণেরও ব্যাপক চাহিদা থাকে। কেউ কেউ আবার অর্ডার দিয়েও মূর্তি বানিয়ে নেয়। সাধারণত একফুটের মধ্যে সুজয় তার মূর্তিগুলো বানায়। শিরীষ কাগজ দিয়ে ঘষে ঘষে মসৃণ করে কাঠের আঁশগুলো। শেষে বার্ণিশ দিয়ে মূর্তিগুলোর স্থায়িত্ব ও ঔজ্জ্বলতা আনে। এক একটা মূর্তি পুরা করতে একদিন থেকে তিনদিন পর্যন্ত সময় লাগে। পাঁচশ থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত তা বিক্রি হয়।
দাদু সুবল কুমার মিস্ত্রির কাছেই কাঠ কেটে ভাস্কর্য বানানোর হাতেখড়ি হয় সুজয়ের। ছোটবেলায় কত রকমের মূর্তি কাঠ দিয়ে দাদু বানিয়ে দিতেন! দাদুর কাছে তার বায়নাও ছিল আশ্চর্য রকমের। মুখ হা-করা সিংহ ছিল তার আবদারগুলোর মধ্যে অন্যতম।
দাদুর দেখাদেখি ছোট্ট সুজয়ও হাতে হাতুড়ি, বাটালি তুলে নেয়। তখন থেকেই সে সাধারণ কাঠকে অসাধারণ শিল্পে পরিণত করার অবিরাম সাধনা করে চলছে।
সুজয়ের বাল্যবন্ধু জাকির খন্দকার। ঢাকার তিতুমির কলেজ থেকে ইতিহাসে মাস্টার্স শেষ করেছে। মাঝেমধ্যে বাড়িতে আসে। তার ল্যাপটপে প্রায় দুই বছর আগে সুজয় কিছু ভাস্কর্য দেখেছিল। পাথর কেটে কেটে ভাস্কর্যগুলো বানানো হয়েছে। কতগুলো বানানো হয়েছে গুহার মধ্যে!
জাকিরের কাছে ওইসব ভাস্কর্য তৈরির ইতিহাস শুনে অবাক হয় সুজয়। এও কি সম্ভব! শক্ত পাথর বা পাহাড় কেটে কেটে একের পর এক বিমূর্ত দেব-দেবীকে মূর্ত করা হয়েছে। ঘোর লাগে সুজয়ের। দুই হাজার বছরেরও আগে এগুলো মানুষ বানিয়েছে!
কাঠ কেটে ভালো মূর্তি বানাতে পারে বলে এতদিন তার একটা চাপা গর্ব ছিল। জাকিরের কাছ থেকে এই মূর্তিগুলো দেখে তার ভুল ভাঙে। এতদিন কি বোকাই না সে ছিল! পৃথিবীর ভাস্কর্য সম্পর্কে তার তো কোনো ধারণাই নেই।
কিছুটা চোখ ফোটে সুজয়ের। ভাস্কর্যের একটা থিম তার মাথার মধ্যে এপার-ওপার করে।
একফুটের মূর্তি অনেক বানিয়েছে, এবার সুজয় ছয়ফুটের ভাস্কর্য বানাবে। সেজন্য একটা গামারি কাঠের কাণ্ডও যোগার করেছে। কিন্তু গোল বেঁধেছে অন্যখানে। ভাস্কর্যটির প্রকৃত রুপদান করার জন্য তার নিরাবরণ এক নারীকে প্রয়োজন।
মাথার মধ্যে যে ভাস্কর্যটি গেঁথে আছে তা বানাতে না পারলে কোনো কিছুতেই সুজয় মন বসাতে পারছে না। এতদিন যা করেছে টাকার জন্য করেছে। এটা করবে নিজের জন্য। সে সৌন্দর্য সৃষ্টি করতে চায়।
গামারির কাণ্ডটিকে হাতুড়ি আর বাটালির সহযোগিতায় কিছুটা কাঠামো দিয়েছে। কিন্তু আর এগোতে সে সাহস পাচ্ছে না। দুই বছর ধরে মনের মধ্যে ধীরে ধীরে ভাস্কর্যটিকে সে পোক্ত করেছে। কিন্তু কোনো জীবন্ত নগ্ন নারী ছাড়া সেই কল্পনাজাত মোহনীয় ভঙ্গিমা কিছুতেই সে কাঠের মধ্যে ধারণ করাতে পারবে না। কিন্তু তার স্বপ্নকে সার্থক করতে তেমন নারীকে সে কোথায় পাবে? যে নিজের সৌন্দর্যকে ঢেলে দিয়ে শিল্পীর হাতে উন্মোচিত হবে নতুন সৌন্দর্যে!
বিয়ের জন্য যখন মেয়ে দেখা শুরু হয় তখন সুজয় সমস্যা সমাধানের একটা পথ খুঁজে পায়।
সুজয়ের বাবা-মা আজ বড় বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়েছেন। সেখানে কয়েকদিন থাকবেন।
সুজয়ের শোবার ঘরের পাশেই তার কাজের ঘর। যেখানে সে দিনরাতের অধিকাংশ সময় ব্যয় করে। ঘরটির পেছন দিকটা ছোটবড় কাঠে ভরা। এর দুইদিকে দরজা। একটা বাইরে রাস্তার দিকে, অন্যটা এঘর থেকে শোবার ঘরে যাবার জন্য।
লক্ষ্মীমূর্তিতে বার্ণিশ দিচ্ছে সুজয়। অলকা কাছে আসে। লম্বা গামারির কাণ্ডটিকে দেখিয়ে বলে, এটা দিয়ে কি বানাবা গো?
সুজয়ও মোক্ষম সুযোগটা পেয়ে যায়। একটু হেসে বলে, একটা লজ্জা পাওয়া নারীর ভাস্কর্য...।
মানে কী? তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন করে অলকা।
একটা মেয়ের ভাস্কর্য বানাব। কিন্তু তার গায়ে কিছু থাকবি নানে।
যাহ্, তোমার মাথার মধ্যে যত শয়তানি বুদ্ধি!
সুজয় বউয়ের কথায় ঠোঁট প্রসারিত করে হাসে। কাজ রেখে বউয়ের সামনে একটা খুঁটি হেলান দিয়ে দাঁড়ায়। ডানহাতের তালুর সাহায্যে লুঙ্গির ওপর দিয়ে শিশ্ন ঢাকে। বাম হাতের কব্জি রাখে মাথার পেছনে। বাম পা হাঁটুতে ভাঁজ করে পেছনে ঠেস দিয়ে দেহের ভারসাম্য রক্ষা করে। মুখটা ডানদিকে কিছুটা বাঁকা, দৃষ্টি আড়চোখে বুক বরাবর সামনে। মুখে লজ্জামিশ্রিত মৃদু হাসি।
অলকাকে দেখিয়ে দিয়ে সুজয় তাকে সেভাবে দাঁড়াতে বলে। অলকা জানায় সে পারবে না। সুজয় কিছুটা আগ্রহ নিয়ে বউকে হেলান দিয়ে দাঁড় করায়। কিন্তু অলকা সরে আসে। সুজয় বলে, জানো, আমি দুই বছর ধরে অপেক্ষা করতেছি। এটা আমি বানাবোই। কিন্তু চোখে একবার দেখতি না পারলি ঠিকঠিক ভাঁজগুলো দিতি পারব নানে। তুমি একটু এমনে খাড়াও না।
কাপড়চোপড় খুলে তুমি যেমনে দেখালে তেমন দাঁড়াতে হবি?
হ, পারবা না?
বিষয়টা কল্পনা করেই অলকার গা গুলাতে থাকে। রাতের বিছানায় স্বামীর সঙ্গে নিরাবরণ হওয়া আর তার সামনে নগ্ন মডেল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এক জিনিস নয়।
সুজয় বলে, কি হলো কথা কও না যে?
অলকা চোয়াল শক্ত করে, আমি পারব না, কিছুতেই পারব না। সারা দুনিয়ার মানুষরে আমার ন্যাংটা মূর্তি দেখাতি চাও!
আরে তুমি পাগল না কি? মুখটা তো আর তোমার থাকবি নানে। আমার শুধু তোমার দেহের ভঙ্গিমা দরকার, ভাঁজগুলো দরকার। তোমার মুখের সাথে সে মুখের মিলই থাকবি নানে।
সুজয় দুই হাতের মুঠোর মধ্যে বউয়ের ডান হাতটা নেয়। অনুনয়ের সুরে বলে, তোমার সামনে কি আর কেউ থাকবি না কি? আমিই তো থাকব। আমার কাচে লজ্জা কী!
তোমার কাচে আমার কোনো লজ্জা নেই কিন্তু আমার কাচে আমার লজ্জা আচে।
অলকা ওঘর থেকে শোবার ঘরে আসে। খাটে এসে বসে। পেছন পেছন সুজয়ও। সে শান্ত গলায় বলে, তুমি জানো, দেব-দেবীর কত মূর্তি আচে এমন। হর-পার্বতীর মিথুনরত মূর্তি আচে। যক্ষেরও আচে।
তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেচে। তুমি যাও।
আমার মাথা খারাপ হয়নি। পৃথিবীর অনেক বিখ্যাত শিল্পকর্ম আচে, ন্যাংটা। যারা সেইগুলো বানাইচে তাগার কি মাথা খারাপ ছিল? না, তারা শিল্প সৃষ্টি করচে। সৌন্দর্যকে শিল্পের ভেতর দিয়ে ধরচে।
তোমার ওসব কথা আমি বুঝিনে। যা ইচ্চে হয় তাই করো। তবে তুমি যা কইচো তা আমি কোনোদিন করতি পারব নানে। কারোর সামনে ন্যাংটা হয়ে দাঁড়ান অসম্ভব।
সুজয় বুঝতে পেরেছে অলকাকে সে শিল্প বোঝাতে পারবে না। তার ভেতরের সৃষ্টিশীল সত্তা বোঝার ক্ষমতা অলকার নেই। এতিদিন ভেবে এসেছে বিয়ের পর বউকে সামনে রেখে স্বপ্নের ভাস্কর্যটি সে তৈরি করবে। আর কারোর জন্য নয়, শুধু নিজের জন্য।
রাতে ঘুম হয় না সুজয়ের। বউকে আবার বোঝায়, কত কী বলে বোঝায়। কিন্তু বউ তার সিদ্ধান্তে অনড়।
সুজয় তার সমস্যা নিয়ে বন্ধু জাকিরের সঙ্গে কথা বলে। জাকির ছোটবেলা থেকেই সুজয়ের কাজকে উৎসাহ দেয়। সে বলে, ভাস্কর্য হচ্ছে শিল্পকলার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। তুই তো ব্যাটা ভাস্কর! তুই চিন্তা করিসনে, আমি সব ব্যবস্থা করে দেব।
বন্ধুর আশ্বাসের ধাক্কা সুজয়ের চিন্তার জগদ্দলকে বেশিদূর সরাতে পারে না। সারাক্ষণ মাথার মধ্যে জেঁকে বসে অনবরত পিষতে থাকে। কখনওবা ঘুণপোকা হয়ে শিরা-উপশিরাগুলো কেটে কেটে মনটাকে অস্বস্তিতে ভরে তোলে। এই কাজটা শেষ করতে না পারলে তার শান্তি নাই।
দুই
রাত এগারোটার মতো বাজে। বাইরের দরজায় শব্দ, ঠকঠক। সুজয় দরজা খোলে। রাত জেগে কাজ করা তার পুরোনো অভ্যাস। বউ ঘুমিয়ে কাদা হয়ে গেলেও গভীর রাত পর্যন্ত সুজয় মিস্ত্রির হাতুড়ি-বাটালির ঠুকঠুক শব্দ হয়।
মেয়েটিকে দেখে তার বুকেও শব্দ হয়, ধকধক। ভয়ে। মেয়েটা ঘরে এলেই দরজা বন্ধ করে দেয় সুজয়। মেয়েটা চারদিকে তাকিয়ে একটু হাসে। কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে বলে, কী করতি হবি আমারে তাড়াতাড়ি ক।
সুজয় আগেই তাকে বলেছিল। খাতায় আঁকা একটা ছবি দেখায়। এ রকম হয়ে দাঁড়াতি হবি।
মেয়েটা খাতায় আঁকা ছবির মতো দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। সুজয় তাকে দেখিয়ে দেয়। কিন্তু কিছুতেই মনের মধ্যে গ্রথিত ছবিখানির মতো হয় না। অনুচ্চ স্বরে মেয়েটিকে বোঝায়। সুজয় মেয়েটিকে গায়ের সব খুলতে বলে।
মেয়েটি একেএকে গায়ের আবরণ খুলত খুলতে বলে, তোর মতো আবাল পুরুষ আমি জীবনে দেহি নেই। টাহা দিয়ে মেয়ে মানুষ আনে কেউ দাঁড় করায়ে কাঠ কাটে!
সুজয় কিছু বলে না। বস্ত্রহীন মেয়েটিকে দেখে। বয়স আর কত হবে, উনিশ-বিশের মধ্যে। কিন্তু মেয়েটিকে তার ভালো লাগে না। এই বয়সেই বুক দুটি ঝুলে লেপ্টে আছে পেটের সাথে। ডানহাত ঊরুসন্ধিতে আর বামহাত মাথার পেছনে রাখলে দুই বুকের গঠনের যে পার্থক্য হওয়ার কথা ঝুলে পড়া বুকে তা হয় না। মন খারাপ হয় সুজয়ের। এই মেয়েকে দুই ঘণ্টার জন্য পাঁচশ করে টাকা দিতে হবে! অলকার কাছে এই মেয়ে কিছুই না, সিংহির কাছে নেড়ি কুত্তা।
একটি মেয়ে রাতে তার ঘরে; এটা জানলে বউ লঙ্কাকাণ্ড বাঁধাবে। আর এলাকার লোকজন জানতে পারলে কেলেঙ্কারির শেষ থাকবে না। তাকে এলাকা ছাড়াও করতে পারে। তবু সুজয় মেয়েটিকে আসতে বলেছে। সে তো আর দশ জনের মতো না, সে ভাস্কর!
নাই মামার চেয়ে কানামামা ভালো। সুজয় মিস্ত্রি মেয়েটিকে দাঁড় করিয়ে পায়ের দিক থেকে কাজ শুরু করে। একভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে মেয়েটির পায়ে ঝিঁঝিঁ লাগে। সে বলে, মিস্ত্রি একটু জিরায়ে নেই?
কাজের সময় অলকার কথা মনে থাকে না সুজয়ের। তাছাড়া সেও সারাদিন পরিশ্রমের নানা কাজ করে। ঘুমালে তার আর হুঁশ থাকে না।
মেয়েটিকে নিয়ে পরপর তিনদিন কাজ করেছে সুজয়। মেয়েটির শারীরিক গঠন তার মনের মতো না হলেও কিছুটা কল্পনার মিশেলে বাটালি আর র্যাঁদা চালায়। কোমর পর্যন্ত মোটামুটি হয়েছে।
চতুর্থ দিন পেটের ওপর থেকে শুরু করছে সুজয়। বারবার মেয়েটির শুকনো ঝুলে পড়া মাই দুটোর দিকে চোখ যাচ্ছে। কোমরের নিচ পর্যন্ত কিছুটা হলেও ওপরের অংশের ভঙ্গিমা কিছুতেই হচ্ছে না। ছবিটা দেখিয়ে মেয়েটির গায়ে হাত দিয়ে সুজয় বোঝানোর চেষ্টা করে।
অলকা কখন এসে পেছনে দাঁড়িয়েছে বুঝতে পারে না। মেয়েটি সুজয়কে ইশারা করে বলে, তোর বউ না?
সুজয় ঘাড় ঘুড়িয়ে অলকাকে দেখে। স্থির চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। কথাহীন মুখে হাজারো কথার ঝড়। চোখে রাবণের চিতা।
মেয়েটিকে অলকা চলে যেতে বলে।
মেয়েটি বলে, এক টাহাও কিন্তু কম দিতি পারবা নানে, মিস্ত্রি।
অলকা হাতের মুঠো থেকে পাঁচশ টাকার একটা মোচড়ানো নোট মেয়েটির হাতে দেয়। বলে, আর যেন তোমারে এদিকে না দেহি।
মেয়েটি টাকা পেয়ে বেড়িয়ে যায়। সুজয় অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, তুমি সব জানতে?
তুমি শিল্পী, এইডে আমার গর্ব। তুমি ঠাকুর-দেবতার মূর্তি বানাও। তোমার বানানো মূর্তিতে কতজন পুজো দেয়। আমিও তোমার বানানো রাধাকৃষ্ণকে নিত্য পুজো দেই। কিন্তু শিল্প মারাতি যায়ে একটা বেশ্যারে ন্যাংটা করে প্রতিরাতে ঘরে রাখবা, গায়ে হাত দিয়ে শিল্প বুঝাবা বউ হয়ে এইডে সহ্য করি ক্যামনে? এর চেয়ে...।
সুজয় কী বলবে বুঝতে পারে না। এইভাবে বউয়ের কাছে ধরা খাবে সে ভাবেনি। চুরি করতে গিয়ে ধরা খাওয়া চোরের মতো নির্বাক, অসহায় তাকিয়ে থাকে।
আঠারো বছরের অলকা এক এক করে কাপড়, সায়া, ব্লাউজ খোলে। পরে থাকা খাতাটার ছবির দিকে একবার তাকিয়ে সে দাঁড়ায়। এনার্জি বাল্বের সাদা আলোতে সুজয় বউকে দেখে। না, সে বউকে দেখে না! অজন্তা বা ইলোরার গুহা থেকে উঠে আসা কোনো দেবী আজীবনের লালিত সৌন্দর্য হয়ে ভাস্করের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে!