Posts

গল্প

চাঁদের হাসি

April 30, 2025

Tahmeed Safwan

77
View

#চাঁদের হাসি

যাহ, শালার এই চাকরিও মনে হয় হবে না । মুখে একরাশ বিরক্তি নিয়ে ফুটপাতেই বসে পরলো আনিস। পরনের সাদা শার্ট টা ঘামে ভিজে একসা, টাই টা ফাঁসের মতো লাগছে গলায় এখন। আজ এই নিয়ে চার নম্বর ইন্টারভিউ দিলো। শুনেছিল রেজাল্ট টা ভালো থাকলে চাকরিতে ঠেকে না কেউ। তাহলে ওকে আটকাচ্ছে টা কে, সেটাই বড় প্রশ্ন। ফোন টা বের করতেই দেখে পাঁচটা মিসড কল। দুইটা শফিক এর, তিনটা আবির এর। আবির এর ফোন দেখে একটু অবাক হয় আনিস। আবির এর মতো নিশাচর প্রাণী এই ভরদুপুরে ফোন দিলো কেনো সেটাও রহস্য একটা। আবিরকে ফোন ব্যাক করতেই রিসিভ করলো আবির, অবাক হওয়ার পারদ যেনো উপরের দিকেই উঠছে আজ আনিসের। আবির ওপাশ থেকে ব্যাস্ত কণ্ঠে বলল, এই আনিস, চালু চালু গলির মাথায় আয়। ঘোড়ার ডাইল এর ইন্টারভিউ মারাইতে গেছস সকাল থিকা...... এরপরেই কুৎসিত গালাগাল এর যাত্রা শুরু, সে সুযোগ না দিয়ে আনিস বললো, আমি আসতেসি এখনি। একটা পাঠাও ডেকে তাতে চেপে বসে তাড়াতাড়ি ।

গলির মাথায় এসে দেখে হুলুস্থুল কাণ্ড, মিজান মামার টং এর সামনে তরু বসে আছে, পাশে আবির, শফিক, হৃদিতা। আনিস সামনে যেতেই হৃদিতা বলে ওঠে, আনিস যে কথাটা বলবো সেটা হচ্ছে গিয়ে তোর এই মুহূর্তে কাজী অফিস ছাড়া গতি নাই, আমরা তোর সাথী হচ্ছি এই শুভ যাত্রায়। একটা চড় দেয়ার ইচ্ছা অনেক কষ্টে দমন করে আনিস। শান্ত সুরে বলে, তরু আগে কিছু কথা বলা দরকার আমাদের। তরু চুপ চাপ উঠে আসে বেঞ্চ থেকে, আনিস ওকে নিয়ে একটু সামনে এগিয়ে যায়। তরু মনে হয় কান্নাকাটি করেছে, ফর্সা মুখ লালচে বর্ণ ধারণ করেছে। তরু যেটা বললো তার সারমর্ম হচ্ছে, ওর বাসা থেকে ওর চাচা আজকেই ওকে বিয়ে দিয়ে দেবে। তার কারখানার সুপারভাইজার পদে আছে ছেলেটা। ফোঁপাতে ফোঁপাতে বললো তরু, আম্মু আব্বু আর নেই, এখন চাচা ঘাড় থেকে ফেলতে পারলে বাঁচে। তুমি এখন কি করবে দেখো, নাহলে .... ভেবো না আত্মহত্যা করবো বা এমন কিছু, পালিয়ে যাবো আমি । আমাকে আর পাবে না বলতেসি আমি। আনিস এতক্ষণে মুখ খুললো, ঠিক আছে বুঝলাম। ভাবিকে একটা ফোন দেয়া দরকার আগে। সমূহ সম্ভাবনা আছে এই খবর ভাইয়ার কানে গেলে তোষক বালিশ বিছানা তিন তলা থেকে নিচে ফেলবে আমার। কি করবে দেখো, আমি জানি না কিছু বলে আবার ফোঁপাতে থাকে তরু। আনিস মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তরু দিকে, তরুর কান্না করার ভঙ্গিটা সুন্দর লাগে ওর অনেক। একটা রুমাল বা টিস্যু নাকে চেপে ধরে ফিচ ফিচ করে কাঁদে। কিন্তু এখন মুগ্ধ হওয়ার সময় না, বড়ই অসময়। চোখে শুধু সর্ষেফুল না, গোলাপফুল, জবাফুল সব একসাথে দেখছে আনিস।

সন্ধ্যা নেমেছে বেশ কিছুক্ষণ হলো। জোরালো বাতাস বইছে। কাজী অফিস থেকে বের হয়ে হাঁটছে দুইজন। তরুর মুখ হাসি হাসি, কিন্তু চোখ এ পানি। সুখের অশ্রু বোধহয় একেই বলে। আনিস চিন্তিত মুখে বলে, বাসায় গেলে কী যে হবে.... আহ্! এখন এইসব না বলে আমাকে একটা আইসক্রীম কিনে দাও। তুমি একটা , আমি একটা । একটু পরেই দেখা গেলো দুইজন হাত এ দুইটা আইসক্রীম নিয়ে হাঁটছে পাশাপাশি। তরু শক্ত করে আনিসের হাত টা জড়িয়ে ধরে হাঁটছে, যেনো হাত ছেড়ে দিলেই কোথাও হারিয়ে যাবে আনিস। আর হ্যাঁ, আজকে আকাশে অনেক বড় একটা চাঁদ উঠেছে। চাঁদটা যেন হাসছে ওদের দেখে।

Comments

    Please login to post comment. Login