Posts

উপন্যাস

তোমার জন্য....(পর্ব -৪৮)

May 1, 2025

Boros Marika

45
View

দাদি এবার তৃষার মাথায় হাত রেখে বললেন,

"আচ্ছা মা, এখন ফ্রেশ হয়ে নাও। আমি কাল তোমাদের রিসেপশনের আয়োজন করেছি।"
"আমি চাই, সবাই আসুক। সবাই দেখুক আমার অপূর্ব পুত্রবধূকে!"

মিস্টার আমান সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলেন,

"দাদি, এইসবের আসলে কোনো দরকার নেই। এখন কিছুই ঠিকভাবে… হয়নি… তৃষাও প্রস্তুত না।"

দাদি একটু ভ্রু কুঁচকে তাকালেন। তারপর হাসিমুখে বললেন,

"কেন দরকার নেই? আমার এত সুন্দর পোতা-বউ পেয়েছি, সেটা তো সবাইকে জানাতে হবে!"

তারপর চোখ টিপে বললেন,

"অনুষ্ঠান তো হবেই… এটা আমার সিদ্ধান্ত!"

হেসে হেসেই চলে গেলেন দাদি, আর পেছনে আমান আর তৃষা নীরবে তাকিয়ে রইল—একটা অদ্ভুত শূন্যতা আর নতুন বাস্তবতার মধ্যে আটকে থাকা দুইটা প্রাণ।
আমান কিছুটা সংকোচ নিয়ে বললো,
"তুমি যদি অপ্রস্তুত হও, আমি এখনই দাদিকে বলি—রিসেপশন ক্যান্সেল করি। কোনো চাপ নেই।"

তৃষা একটু থেমে তাকালো আমানের চোখে। তারপর শান্ত গলায় বললো,
"না, দাদির ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাবো না। উনি যা চান, আমি রেডি আছি।"

এক মুহূর্তের জন্য আমান চুপ করে গেল। তারপর নিচু গলায় বললো,
"তৃষা… ধন্যবাদ।"

তৃষা কিছু বললো না। শুধু চোখ নামিয়ে নিলো—চোখের গভীরে লুকিয়ে থাকা আবেগ, অতীত আর ভবিষ্যতের এক অজানা দ্বন্দ্ব।
অন্যদিকে—

একটা বদ্ধ ঘর।
দরজা-জানালা সব বন্ধ। বাতাস ভারী, আলো যেন জোর করে ঢুকতে চায় কিন্তু পারে না। ঘরটা কেমন যেন স্যাঁতসেঁতে, একটা গন্ধ—পুরনো কাঠ আর আবছা সিগারেটের ধোঁয়া মিশে থাকা।

চোখ ডলতে ডলতে ধীরে ধীরে উঠলো আরিয়ান। মাথাটা যেন ঘুরছে, চোখ ঝাপসা। কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো ছাদের দিকে। তারপর হঠাৎ পাশ ফিরতেই চমকে উঠলো
দেখলো—
সামনে বসে আছে একটা মিষ্টি চেহারার মেয়ে। চোখে কাজল, ঠোঁটে গাঢ় লিপস্টিক, পরনে উজ্জ্বল রঙের একরকম আলগা পোশাক। সাজগোজটা এমন, যেন কোনো পতিতালয়ের পরিবেশ থেকে উঠে এসেছে। মেয়েটা হালকা হাসছিল, কিন্তু সেই হাসির গভীরে ছিল এক অদ্ভুত ঠাণ্ডা শূন্যতা।

ঠিক তখনই আরিয়ানের হুশ ফিরে এলো। সে লাফ দিয়ে উঠতে গেলো, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে টের পেলো—
তার শরীরে কোনো জামাকাপড় নেই।
সে থমকে গেলো। চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো চারদিকে। মুখ থেকে কোনো শব্দ বেরোল না, শুধু নিঃশব্দে চলছিল শ্বাসপ্রশ্বাস।
কানপাতে ভেসে আসছিল মেয়েটার শান্ত অথচ বিষাক্ত স্বরে বলা একটা বাক্য—
“রাতটা বেশ চমৎকার ছিল, না?”

আরিয়ানের মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেলো।

আরিয়ান কিছু বলতে যাবে, ঠোঁট কাঁপছে, মাথাটা ঘুরছে—ঠিক তখনই টোক টোক করে দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ হলো।

মেয়েটি যেন কিছুই হয়নি এমনভাবে উঠে দরজাটা খুলে দিলো।
আরিয়ান চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো।

দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে সেই লোকটা—
গতকালের সেই অদ্ভুত চেহারার, জোকারের মতো হাসি হাসা লোকটা, যাকে আরিয়ান শুধু আবছাভাবে মনে করতে পারছে।

লোকটা চোখ সরু করে আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে একটা ঠাণ্ডা হাসি দিয়ে বলল,
“ঘুম কেমন হলো, বর সাহেব?”

আরিয়ান সম্পূর্ণ অপস্তুত হয়ে পড়লো। গলার স্বর শুকিয়ে গেল। মাথায় কুয়াশার মতো অন্ধকার নেমে এলো—
“এটা কোথায়… আমি কেন… আমি এখানে কী করছি?”

লোকটা ধীরে ধীরে ঘরে ঢুকলো।
আর বলল,
“স্মৃতি ফিরে পাবে… একটু একটু করে… কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে যাবে, প্রিয় বন্ধু।”

চলবে.....
 


 

Comments

    Please login to post comment. Login