Posts

প্রবন্ধ

ফটোগ্রাফি কম্পোজিশন ও তার দর্শন।

May 23, 2024

সাইদ সুমন

Syeed Sumon
ফটোগ্রাফির গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলো। এটা সম্পূর্ণ আলো নির্ভর মাধ্যম, এরপর ফটোগ্রাফিতে সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কম্পোজিশন। আলো উপস্থিত থাকার পরে ইমেজ কেমন হবে, বা তাকে কেমন ভাবে উপস্থাপন করা হবে তা সম্পূর্ণ নির্ভর করে ফটোগ্রাফার কিভাবে কম্পোজ করবে ইমেজকে তার উপর।)

আমরা যখন কিছু দেখি তখন আমরা কম্পোজ করে দেখি। বলা যায় স্পেসকে ‘ডিকোড'(decode) করি বা পাঠ করি, যেখানে সাদার দিকে আমাদের প্রথমে চোখ যায় বা হলুদ এর দিকে, বা আমরা বাম-দিক থেকে ডান দিকে সবকিছু পাঠ করে থাকি। অধিকাংশ সময় আমাদের ফোকাস যেখানে, তাকে কেন্দ্রে রাখি। অথবা, আমাদের চোখ লাইনে নিরিখ করে পাঠ করে, এগুলো সব আমাদের ফিজিক্যাল চোখ কিভাবে দেখে তার একটা ব্যাকরণিক বর্ণনা।

ফটোগ্রাফি এজ এ মিডিয়াম এই দেখার ব্যাকরণকে অনুসরণ করে নিজে একটা কম্পোজিশন রীতিনীতি গড়ে তুলেছে, যাকে আমরা ফটোগ্রাফি কম্পোজিশন বলি। ফটোগ্রাফার ভিউফাইন্ডারে চোখ দিয়ে existing  কম্পোজিশন কে  একটু বা বেশি এদিক ওদিক করে নতুন একটা কম্পোজিশন করে, আসলে ইমেজ ক্যাপচার এর আগেই একটা কম্পোজিশন ফটোগ্রাফার এর মাথায় তৈরি হয় তাকেই সে execute করে বা করতে ব্যর্থ হয়। কম্পোজিশন মানে আসলে সাজানো, একটা অর্ডার এ আনা। কিন্তু প্রকৃতি আমাদের চোখে সাজানো বা অর্ডারের মধ্যেই আছে বা থাকে, তাহলে কি সাজানোর বিষয় আসে ? কারণ আমরা যা চোখে দেখি তা ক্যামেরা দেখে না, তাকে দেখাতে হয় টেকনিকের মাধ্যমে। তা্রে কোন ফোকাল লেন্থ, কতটুকু আলো, কোন এঙ্গেল দিয়ে ক্যেপচার করা হবে তার উপর নির্ভর করে ইমেজটি কেমন হবে বা হতে পারে। 

এবং এই যা দেখলাম তাকে ইমেজ এ আনতে ব্যর্থ হওয়ার কারন ফটোগ্রাফার যথার্থ টেকনিক প্রয়োগ করতে পারেননি,আখাংকিত কম্পোজিশন মানে ফটোগ্রাফার ছবি ক্লিক করার আগে যে প্রি-ইমাজিনেশন করেছে সেই অনুযায়ী ছবি টা উৎপাদন করতে পারা, পূর্ণিমার চাঁদ দেখে উতলা হয়ে আপনি যদি ২৪ মিমি এ ছবি তুলেন তাহলে চাঁদ হয়ে যাবে একটা বিন্দু, যাকে আপনার চোখ বর্ণনা করছে একটা থালার মতো, কিন্তু এখানে যদি আপনি ৫০০ মিমি ব্যবহার  করেন তাহলে আপনি যা প্রি ইমাজিন করছেন তা আপনি পাবেন মানে চাঁদ টাকে বড় পাবেন আর কি!।

অতএব, ফটোগ্রাফি কম্পোজিশনের সাথে ফটোগ্রাফি টেকনিক অবিচ্ছেদ্য ভাবে জড়িত। আপনার চোখ যা দেখে তা সৃষ্টি করতে গেলে ক্যামেরা কে বলে দিতে হয়, কারণ আপনার ব্রেন আপনি কিভাবে দেখবেন তা নির্ণয় করে, আর ক্যামেরার ব্রেন হইল ফটোগ্রাফার, সে যাহা বলিবে ক্যামেরা তাহাই করিবে, আফসোসের বিষয় চোখ এতো নিখুঁত ভ্রম তৈরি করে দেখে, সেই পারফেকশন ক্যামেরাকে নেওয়া অসম্ভব হয়ে যায় প্রায়। 


আবার ফটোগ্রাফি কম্পোজিশন এর একটি institutional সাজেশন আছে, মানে প্রাক্তন মাস্টার ফটোগ্রাফার দের ইমেজ দেখে আমরা কিছু কিছু আবিস্কার করতে পেরেছি্‌, রুল অফ থার্ড যেটা অবশ্য পেইন্টিং এ আগে থেকেই ছিলও, কিংবা জ্যামিতির সুষম ব্যবহার ইমেজে, কিংবা ছায়ার গুরুত্ব বা তাকে নিয়ে খেলা, লাইন, প্যাটার্ন, মুড  এমন অনেক কিছু।

এবং একজন ফটোগ্রাফার যিনি এইসকল পড়াশুনার মধ্যে দিয়ে আসে তার আর এই নলেজ থেকে বের হওয়ার উপায় থাকেনা, তখন বুদ্ধিমান ফটোগ্রাফার রা সাধারণত এই সকল প্রাতিষ্ঠানিক ফটোগ্রাফি কম্পোজিশন এর সাজেশন কে মেনে যেখানে প্রয়োজন সেখানে ভেংগে নিজের মতো একটা ইউনিক ফর্ম দেওয়ার চেষ্টা করে। 

একটা ছবিকে কিভাবে কম্পোজ করবে একজন ফটোগ্রাফার, তার নির্দেশ আসে তার জ্ঞানকাণ্ড থেকে। কারণ সবাই একরকম ভাবে একটা সেপ্সকে পাঠ করে না। যার যার আগ্রহ অনুযায়ী ফোকাস কে নির্ধারণ করেন স্পেস এ।বা যার যার আগ্রহ অনুযায়ী চোখ যায় সেপ্সে, তাই কম্পোজিশন ও ভিন্ন হয় ফটোগ্রাফার ভেদে। এইখানে ফটোগ্রাফার এর যাপন গুরুত্বপূর্ণ, তিনি কি পড়েন, কি দেখেন, তার জীবনের দর্শন কি, এইসব নির্ধারণ করবে তার চোখ স্পেসে কি দেখবে।

ফটোগ্রাফার এর জানাশুনা ও দেখা দিয়ে তার জীবনে যে সেন্স তৈরি হয়, যাকে আমরা বলি কমন-সেন্স, এই সেন্স সব চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ফটোগ্রাফি কম্পোজিশনের জন্য, টেকনিক অর্জন করা যায়, কিন্তু সেন্স টা অর্জন হয় যাপন দিয়ে, মানে কেয়ামত থেকে কেয়ামত এর ভক্ত যে ফটোগ্রাফার আর কুবরিকের স্পেশ অডিসি’র ভক্ত যে ফটোগ্রাফার তার দুইজন দুইভাবে স্পেস কে পাঠ করে তাদের জীবনে, তারা দুই ভুবনের বাসিন্দা, তাদের ছবিও আলাদা, ভালো মন্দ এখানে বিষয় না, এবং এই দুই ভুবনের বাসিন্দা যে কেউ ভালো ইমেজ তৈরি করতে পারে, কাউরেই ছোট করে দেখার কিছু নাই ফটোগ্রাফি তে। 


*তবে এই নিজের মতো করে কম্পোজ করার মানে এই নয় বিষয়কে টেকনিকের মাধ্যমে উচুমানের মেনুপুলশেন করা। ভিউয়ার তাই দেখে যা ফটোগ্রাফার দেখায়, সেখানে ফটোগ্রাফার টেকনিক ব্যাবহার করে যদি বিকেলকে আন্ডার এক্সপোজ করে সন্ধ্যা বানায়, বা রাতকে ওভার এক্সপজ করে দিন বানায় সেটা হতেই পারে, কিন্তু ফটো-সাংবাদিকতা, স্ট্রিট ফটোগ্রাফি যেখানে সে দাবী করছেন এমনই ছিল দৃশ্য, সেখানে টেকনিক দিয়ে এমন মেনুপুলেশন অবাঞ্ছনীয়।

**ফটোগ্রাফির সাথে নান্দনিকতার সম্পর্ক অন্য সব আর্ট মাধ্যমের যেমন তেমনই, একটা পেইন্টিং যেমন নান্দনিকতার অভাবে মান হারায়, তেমনি ফটোগ্রাফিও শিল্পের ভাষাকে অনুসরন করে চূড়ান্ত নন্দন অর্জনের চেষ্টা করে, এবং সীমানা ভেংগে নতুন সীমানা দেওয়ার কাজ করে  থাকে, যেমন করে থাকে শিল্পের অন্য সকল শাখা।

 **ফটোগ্রাফি কম্পোজিশনের ক্ষেত্রে প্রচলিত যে সাধারন নিয়ম গুলো উপরে উল্লেখ্য করা হয়েছে এগুলোকে রুল অফ থার্ড, লাইন ফর্ম সেপ নিয়ে যে সাধারন চর্চা গুলো জারী আছে, বা এঙ্গেল নিয়ে যে সাধারন চর্চা গুলো চালু আছে  ইত্যাদি বুঝায়, ফটোগ্রাফার এখানে যেকোনো সাধারন চর্চার ধারাবাহিকতা ভেংগে নতুন ভাবে কম্পোজ করতেই পারে।





Comments

    Please login to post comment. Login