Posts

ফিকশন

ছায়ার মানুষ পর্ব ২

May 2, 2025

Radia

Original Author Radia Moni

107
View

মানাফ নিখোঁজ হওয়ার তিন সপ্তাহ কেটে গেছে। পুলিশ তদন্ত বন্ধ করে দিয়েছে। গ্রামে তাকে যারা শেষ দেখেছিল, তারা বলছে—মানাফ আর মানুষ ছিল না, ছায়া হয়ে গিয়েছিল।
তবে এই গল্প শুরু হচ্ছে ঢাকায়—একজন তরুণ লেখিকা, নাবিলা-কে নিয়ে, যে ছিল মানাফের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। মানাফের ঘরের জিনিসপত্র নিতে গিয়ে সে পায় একটি পুরনো খাতা।
খাতার প্রথম পাতায় শুধু একটি লাইন:
“এবার আমার গল্প, তোর হাতেই লিখবে।”
নাবিলা প্রথমে গুরুত্ব দেয়নি। ভেবেছিল মানাফ হয়তো ভয়ের মধ্যে পড়ে কিছু এলোমেলো লিখেছে। কিন্তু রাতে ঘরে ফিরে খাতাটা খোলার পর ঘটতে থাকে অদ্ভুত সব ঘটনা।
প্রথম রাতে সে খেয়াল করে খাতার কিছু পৃষ্ঠা নিজে নিজেই উলটে যাচ্ছে। বাতাস নেই, জানালা বন্ধ, তবুও পাতার শব্দ—শাঁ শাঁ করে।
দ্বিতীয় রাতে সে দেখল, খাতার ফাঁকা পাতায় তার নিজের হাতে লেখা কিছু শব্দ—যা সে কখনো লেখেনি।
“ধুলামাটি আবার ডাকছে। ছায়া এখন পেছনে নয়, সামনে।”
নাবিলা ঘুমাতে চায়, কিন্তু ঘুম আসে না। প্রতিনিয়ত মনে হয়, খাতাটা তাকিয়ে আছে। তার বিছানার পাশের দেয়ালে ধীরে ধীরে ছায়া জমে।
তৃতীয় রাতে সে স্বপ্ন দেখে—সে দাঁড়িয়ে আছে ধুলামাটির সেই পোড়োবাড়ির সামনে। দরজা নিজে থেকেই খুলে যায়, আর ভিতর থেকে বেরিয়ে আসে... মানাফ।
কিন্তু তার চোখ কালি, মুখে হাসি নেই, ঠোঁটে একটা বাক্য:
“আমি এখনো লিখছি... ছায়ার হয়ে।”
পরদিন সকালে সে সিদ্ধান্ত নেয়, ধুলামাটি গ্রামে যাবে। মানাফের শেষ অবস্থান অনুসন্ধান করবে। সে ক্যামেরা, নোটবুক আর সেই ছায়ার খাতা নিয়ে রওনা হয়।
গ্রামে পৌঁছে, ফজলু চাচাকে দেখে চমকে যায়। চাচা বলে,
“তুই যদি খাতা নিস, তবে তোর ছায়াও আর তোর না। সময় থাকতেই ফিরে যা।”
নাবিলা শুনল না। রাতেই সে গেল সেই পোড়োবাড়ির দিকে। চাঁদহীন আকাশ, বাতাস নেই, কুয়াশা ঘন।
বাড়ির ভিতরে ঢুকে সে দেখে আগের থেকে ভেতরের অবস্থা আরও ভাঙা। কিন্তু দেয়ালে একটা নতুন ছবি—নাবিলা নিজে, কালো পোশাকে, চোখে ফাঁকা দৃষ্টি।
তারপর আবার শোনা গেল সেই পরিচিত কণ্ঠ:
“এবার তুই লিখবি, রক্তে নয়, ছায়ায়।”
নাবিলা চিৎকার করে খাতাটা ছুঁড়ে ফেলে। কিন্তু খাতাটা বাতাসে ভেসে ফিরে আসে হাতে। পাতাগুলো নড়তে থাকে, এবং লেখা হয়—
“তোর ছায়া এখন আমার। তুই যা লিখবি, তা বাস্তব হবে।”
তৎক্ষণাৎ বাড়ির ভিতর থেকে ছায়াগুলো বেরিয়ে আসে—লম্বা, অবয়বহীন, ফিসফিস করে। একজন বলল,
“মানাফও চেয়েছিল সত্য লিখতে, কিন্তু সত্য তো সব সময় আলোয় থাকে না।”
হঠাৎ, বাইরের আলো চমকালো। ভোর হয়ে গেছে। ছায়াগুলো ধীরে ধীরে গলে যায়।
নাবিলা বুঝতে পারে, এই খাতা শুধু এক গল্প নয়—এটি এক বন্ধন, এক প্রাচীন অভিশাপ। যেই লেখে, সেই নিজেই চরিত্র হয়ে যায়।
সে সিদ্ধান্ত নেয়, সে শেষ করবে গল্পটা। সত্যটা লিখবে, মানাফকে ফিরিয়ে আনবে।
শেষ পৃষ্ঠায় সে লেখে—
“মানাফ ফিরে এলো, কিন্তু তার ছায়া আর ছিল না। ছায়া এখন আমার...”

Comments

    Please login to post comment. Login