এক---
বিহারি ক্যাম্পের ঢালু কাঁচা রাস্তায়পড়ন্ত বিকেলের আলোয় ধুলো ও কুয়াশামিশে এক অদ্ভুত বায়ুমণ্ডলতৈরি করে। ভাঙাচোরা পিচেরউপর উড়ে বেড়াচ্ছে একটাছেঁড়া ব্যানার — “নতুন জীবন পুনর্বাসনকেন্দ্র” লেখা থাকলেও, অর্ধেকটাছিঁড়ে গেছে।
নাফিস ও রিদয় ধীরেধীরে বাইক ঠেলে রাস্তায়ঢুকে। চারদিকে পোড়া রাবারের গন্ধ, কুকুরের ডাক, আর বাতাসেভাসছে অব্যক্ত শঙ্কা।
রিদয় সিগারেটের ধোঁয়া ছেড়ে হালকা গলায় বলে, “ভাই, জায়গাটা আগেরমতোই। রূহুলের সাথে কথা হইছে, প্রস্তুতসব।”
নাফিস কিছু বলে না।তার চোখে ক্লান্তি, কিন্তুকোনো দ্বিধা নেই। মনে হয়, এই ক্যাম্পে ঢুকে সে নিজেরএকটা অংশকে মুছে ফেলতে এসেছে।পথের ধারে বাচ্চারা তাকিয়েথাকে, কিন্তু মুখে কোনো শব্দনেই। দেয়ালে সাঁটানো ফিকে হয়ে যাওয়াএক ছেঁড়া বিজ্ঞাপন — “বিশ্বাস ফেরাতে পারবো না, কিন্তু ভুলেথাকতে পারি।” নাফিস তার দৃষ্টি আটকেরাখে সেখানে।
রিদয় ফিসফিস করে, “এইখানে সবাই কারও নাকারও দোষে ঠেকা।”
নাফিসের পকেটে থাকা এক টুকরোকাগজের উপর তার আঙুলশক্ত হয়ে ওঠে। সেজানে, এই জায়গার পথতার গন্তব্য নয়, কিন্তু তাকেনিয়ে যাচ্ছে এমন এক সত্যেরকাছে, যেখান থেকে ফেরা সম্ভবনয়।
দূরে দেখা যায় একটাটিনশেড ঘর, যার ছাদেবাতাসে দুলছে ছেঁড়া ওড়না।
দুই---
ক্যাম্পের সরু গলিতে বাতাসভারি হয়ে উঠছে। দেয়ালেঝুলে থাকা পুরনো পোস্টারগুলোধীরে দুলছে। একটি টিনশেড দোকানেরসামনে লোকজন জটলা করে দাঁড়িয়েআছে, কিন্তু কোনো কোলাহল নেই — যেন সকলে অপেক্ষা করছেকিছু একটা ঘটার।
এক কিশোর, কাঁপা হাতে কিছু ভাঙাটাকা বের করে এগিয়েআসে। লোকজনের ফাঁক দিয়ে দেখাযায় — রূহুল, দোকানের ছায়ায় বসে আছে। চোখঅর্ধেক বন্ধ, গায়ে ধুলো জমা জামা, ঠোঁটে সিগারেটের দাগ। সে যেনজেগে আছে না ঘুমাচ্ছে, বোঝা যায় না, কিন্তুউপস্থিত সকলেই জানে — সে দেখছে।
কিশোর কোনো কথা নাবলে টাকা বাড়ায়। রূহুলতার দিকে তাকায়, কিছুনা বলে হাতে থাকাএক বাটন ঘুরাতে থাকে।পাশে দাঁড়ানো একজন লোক ইশারায়এগিয়ে আসে, পকেট থেকেএকটা মোড়ানো প্যাকেট কিশোরের হাতে দিয়ে দেয়।কোনো শব্দ হয় না।
পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল এক পুলিশ — সে মাথা নিচু করেদাঁড়িয়ে থাকে। রূহুল তাকিয়ে ঠোঁটে হালকা ইঙ্গিত দেয়। পুলিশ মাথা নেড়ে ধীরেসরে যায়। যেন এই ক্যাম্পেআইন চলে না, চলেইশারা।
রূহুল ধীরে উঠে দাঁড়ায়, গামছা ঝাঁকায়, প্যান্টের ধুলো ঝাড়ে। তারহাঁটা ধীর — অহংকারহীন, কিন্তু চারপাশ যেন তার উপস্থিতিতেমাথা নিচু করে। সবাইজানে, এই গলির অন্ধকারশুধু ছায়া নয় — রূহুল নিজেই।
সন্ধ্যার অন্ধকার আরও গাঢ় হয়।ক্যাম্পের এক সরু গলিরশেষ প্রান্তে রূহুল দাঁড়িয়ে আছে, নিঃশব্দে। নাফিসও রিদয় সেখানে আসে ধীরপায়ে। কেউকারও দিকে সরাসরি তাকায়না, কেবল অভ্যস্ত ইঙ্গিতবিনিময়।
রূহুল নিচু গলায় বলে, “এক পোয়া?”
নাফিস পকেট থেকে মোড়ানোটাকা বের করে এগিয়েদেয়। রূহুল গুনে দেখে না — তার দরকারও নেই। পাশে থাকাএক ছায়ামূর্তি প্যাকেটটা এগিয়ে দেয়। নাফিস সেটি নিয়ে পকেটেঢুকিয়ে রাখে। রিদয় চুপচাপ বলে, “চল ভাই।”
রূহুল আবার ছায়ার মধ্যেমিলিয়ে যায়, যেমন ছিল। হঠাৎইনাফিসের চোখে এক ঝলকএকটা নারী মুখ ভেসে ওঠে — ঝাপসা, নিঃশব্দ। তার চোখ নিচু — কোনো কথা নয়, শুধুহাঁটা।
গলি থেকে বেরিয়ে আসারসময় পেছন থেকে একমেয়ের পদচিহ্ন পড়ে । তারহাতে ভাঙা গ্লাসসহ একপুরনো থালা। এক মেয়ে রাস্তাঝাড়ু দিচ্ছে। নাফিস থেমে দাঁড়ায়। মেয়েটিরদিকে তাকায় — একটু বেশিক্ষণ।
সে ধীরে জিজ্ঞেস করে, “এই মেয়েটা... কে?”
রিদয় কিছুই দেখে না। সেবিস্ময়ে তাকিয়ে বলে, “কোন মেয়ে? কিসেরকথা বলস?”
নাফিস আবার তাকায়। কিন্তুএবার কেউ নেই।
দূর থেকে ভেসে আসেথালার শব্দ — যেন কিছু পড়েগেল। পকেটে রাখা প্যাকেটটা তখনআর আগের মতো হালকামনে হয় না।
তিন---
সেই রাতে তারা চলেআসে ক্যাম্পের এক কোণায়, যেখানেরূহুলের কথামতো একটা ছোট ঘরভাড়া পাওয়া যাবে। ঘরের সামনে পৌঁছেনাফিস থেমে যায়। দরজারফাঁক গলে হলুদ আলোবেরোচ্ছে। মেঝেতে পানি ছড়ানো, যেনকেউ সবে পরিষ্কার করেছে।
একটা ছায়ামূর্তি নিচু হয়ে মেঝেঘষছে — মাথা নিচু, চুলঝুলে পড়েছে কপালে। নাফিস চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। তার দৃষ্টি আটকেযায়। যেন বহুদিনের কোনোবিস্মৃত মুখ হঠাৎ সামনেএসে দাঁড়িয়েছে।
মেয়েটা মাথা তোলে ।চোখে চোখ পড়ে। চোখজোড়াগভীর, শান্ত। কিন্তু সেই শান্তির নিচেচাপা কিছুর ছায়া লুকিয়ে আছে।
মেয়েটা অপরূপা সুন্দরী। তার গায়ের রংএকটু ভিন্ন ধরনের ফর্সা — যেন বাঙালিদের মতোনয়, বরং কোনো পুরনো, ভিন্ন সংস্কৃতির ছায়া মাখা। চোখদুটো বড়, কপালের মাঝখানেচুলের ছায়া নেমে এসে তাকেআরও রহস্যময় করে তোলে। হাঁটারভঙ্গিতে লজ্জা ও অভ্যস্ততা মিশেথাকে, যেন সে এইজগতে আছে কিন্তু তারসঙ্গে পুরোপুরি মিশে নেই।
নাফিস স্তব্ধ। যেন শব্দ হারিয়েফেলে।
ভেতর থেকে একটি বয়স্কনারীর কণ্ঠ ভেসে আসে — “কাকে চাইছেন?”
নাফিস চমকে ওঠে। গলাশুকিয়ে আসে। “আমি... রূহুলের কাছ থেকে আসছি।”
একটা পর্দা সরে যায়। দরজারকোণ থেকে একজন বৃদ্ধা — খালা — চোখ সরু করেদেখে। মাথা নাড়ে। কিছুবলে না। কেবল সরেদাঁড়ায়।
মেয়েটি, যে তখনও মাটিঘষছে, একবার নাফিসের দিকে তাকায়। তারচোখে কোনো প্রশ্ন নেই, কোনো প্রত্যাশাও নয় — শুধু এক গভীরবোঝাপড়া। যেন সে নির্ভরকরতে চায় না, বরংজানতে চায়: “তুমি নিশ্চিত তো, আমি সত্যি?”
চার---
নাফিস এখন এই ঘরেইথাকে, কিন্তু প্রতিটি দিন যেন আরেকটিনতুন ধাঁধা। সময়ের সাথে সাথে মেয়েটিরউপস্থিতি তার চারপাশে গেঁথেযেতে থাকে — সে কোথা থেকেআসে, কোথায় যায়, কিংবা আদৌ যায় কিনা — এসব প্রশ্নের উত্তরনেই। অথচ প্রতিটি সন্ধ্যায়সে হাজির হয়, জল রাখে, চলে যায়।
এক রাতে ঘুমের ঘোরেনাফিস টের পায় — কেউতার পাশ দিয়ে হেঁটেযাচ্ছে। চোখ মেলে দেখে, মেয়েটি জানালার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়েআছে। বাতাসে তার চুল দুলছে, কিন্তু জানালা বন্ধ।
নাফিস ধীরে উঠে বসে। “কে তুমি?”
মেয়েটি ফিরে তাকায় না।শুধু বলে, “আকাশের ওপারে কেউ ডাকে।”
“কে?” — নাফিসের গলা কাঁপে।
মেয়েটি ধীরেপেছন ফিরে তাকায়। তারচোখে একরকম তীব্র শূন্যতা। “তুমি কি বিশ্বাসকরো আমি এখনো এখানে?”
নাফিস কথা হারিয়ে ফেলে।ঘরের চারপাশে তাকায় — সবকিছু একই আছে, অথচমনে হয় বহু কিছুবদলে গেছে।
পরদিন সকালে খালাকে জিজ্ঞেস করে, “আপনার মেয়ে?”
খালা বিভ্রান্ত চেহারায় বলে, “আমার তো কোনোসন্তানই নেই বাবা।”
নাফিস নিঃশ্বাস বন্ধ করে বসেথাকে অনেকক্ষণ। তার মাথার ভেতরজোরে শব্দ হতে থাকে — পাখির পাখা ঝাপটানোর মতো, কাঁচ ভাঙার মতো।
পেছন থেকে কেউ ফিসফিসকরে বলে, “আমি কখনো ছিলামনা, জানো?”
সে ফিরে তাকায়। কেউনেই। শুধু জানালার কাচেভেসে থাকে একটা ছায়া।
পাঁচ---
নাফিসের ঘুম ভেঙে যায়পরদিন ভোরে, বুকের ভেতর কেমন ফাঁকাফাঁকা লাগে। জানালার ফাঁক দিয়ে আলোঢুকছে, কিন্তু সেই আলোয় যেনকোনো উষ্ণতা নেই। ঘরের ভেতরনিঃশব্দ। টেবিলের উপর রাখা গ্লাসটাখালি — গতরাতে পানি রেখেছিল মেয়েটি, সে কি নিয়েও গেছে?
সে উঠে দাঁড়ায়, ধীরেপা টেনে বারান্দায় যায়।বারান্দা শুনশান। খালা ঘরে নেই, রান্নাঘর নিঃস্তব্ধ। মেয়েটি? সে নেই। যেনসে কখনো ছিলই না।
নাফিস বাইরে বের হয়। পাশেরঘরের বাচ্চা যে সবসময় হট্টগোলকরত, আজ কোনো শব্দনেই। পেছনের গলির চায়ের দোকানটাওবন্ধ। পাখির ডাক নেই, মানুষেরকথাও না। চারপাশটা যেনকুয়াশায় মোড়ানো।
সে রাস্তা ধরে হাঁটে, হাঁটতেহাঁটতে সেই পুরনো দোকান — যেখানে প্রথম রূহুলের দেখা — সেখানে যায়। দোকানটা ফাঁকা। রূহুল নেই। লোকজন নেই।যেন সে একা।
হঠাৎ পিছন থেকে একমেয়ের কণ্ঠ আসে — “তুমিযদি আরেকবার জিজ্ঞেস করো, আমি কিছিলাম — আমি চলে যাবো।”
সে ফিরে তাকায়। কেউনেই।
তবে বাতাসে সেই পরিচিত গন্ধ — যেটা শুধু সেই মেয়েটার গায়েথাকত।
নাফিস এখন জানে, সেআর ফিরে যেতে পারবেনা। সে হারিয়ে গেছে, এমন এক জায়গায়, যেখানেমানুষ নয়, স্মৃতি হেঁটেবেড়ায়।নাফিস এখন এই ঘরেইথাকে, কিন্তু প্রতিটি দিন যেন আরেকটিনতুন ধাঁধা। সময়ের সাথে সাথে মেয়েটিরউপস্থিতি তার চারপাশে গেঁথেযেতে থাকে — সে কোথা থেকেআসে, কোথায় যায়, কিংবা আদৌ যায় কিনা — এসব প্রশ্নের উত্তরনেই। অথচ প্রতিটি সন্ধ্যায়সে হাজির হয়, জল রাখে, চলে যায়।
ছয়---
এক সকালে জানালার ফাঁক দিয়ে সূর্যেরআলো এসে পড়েছে মেয়েটিরমুখে। সে বসে আছেচুপচাপ, জানালার ধারে, মেঝেতে। নাফিস তাকিয়ে থাকে অনেকক্ষণ—কিছুবলার নেই, কিছু বোঝারওনা। শুধু মনে হয়, এই দৃশ্যটা আগেও কখনো ঘটেছিল।হুবহু এমনই।
মেয়েটিরগায়ে হালকা সাদা কামিজ, চুলখোলা, চোখে নিঃশেষ ধৈর্য।সে জানালার বাইরে তাকিয়ে বলে, “মানুষ কি প্রতিবার মরে, না একবারেই?”
নাফিসপ্রশ্নটা ধরে রাখতে পারেনা। “তুমি... কাকে বলছো?”
মেয়েটিএবার মুখ ঘুরিয়ে তাকায়, “তোমার দিকে, কিন্তু হয়তো তুমিও নেই।”
ঘরেরবাতাস ভারী হয়ে ওঠে।পাখার ঘুরন্ত শব্দও যেন থেমে যায়।নাফিস চোখ সরিয়ে জানালারকাচে তাকায়—সেখানে তার প্রতিবিম্ব নেই।
সে হঠাৎ উঠে দাঁড়ায়, দরজা খুলে বাইরে আসে।চারদিক শুনশান। মানুষ নেই, শব্দ নেই, দোকানগুলো বন্ধ। যেন পুরো ক্যাম্পনিঃশেষ।
দরজায়ফিরে এসে মেয়েটিকে জিজ্ঞেসকরে, “তুমি কি আসলেইছিলে?”
মেয়েটিতখন নেই। কেবল জানালারগ্লাসে একটি স্যাঁতসেঁতে হাতেরছাপ।
নাফিসএকা দাঁড়িয়ে থাকে। যেন এই ঘর, এই মেয়ে, সবই কোনো একশূন্যরেখার ভেতর তৈরি হয়েআবার মিলিয়ে যাচ্ছে।
সাত---
ঘরেরদেয়ালে আগের মতোই পোকামাকড়েরচলাচল, বাতাসে ধুলোর গন্ধ। তবু কোথাও যেনসময় থেমে গেছে। নাফিসজানে — আজ তাকে চলেযেতে হবে। কোথাও, কোনোজায়গায়, যেখান থেকে মেয়েটির প্রশ্নআর ফিরে আসবে না।
সে শেষবারের মতো বিছানার চাদরটাগুছিয়ে রাখে। দেয়ালে চোখ যায় — একটুকরোকাগজ পিন দিয়ে আটকেআছে, সেখানে লেখা: “ভুলে থেকো না, আমি একদিন সত্যি ছিলাম।”
সে কাগজটা পকেটে রাখে। দরজা খুলে বেরিয়েআসে। বাইরে ক্যাম্পের গলি — ঠিক আগের মতোইনোংরা, ঠিক আগের মতোইজীবন্ত।
দোকানখোলা, মানুষজন হাঁটছে, একটা ছেলে পাশদিয়ে দৌড়ে যায়। নাফিস থেমে তাকিয়ে থাকে — যেন এতদিন পরে সে আবারবাস্তবে ফিরেছে।
রিদয়এসে বলে, “চল ভাই, বাইকরেডি। আজ তুই অনেকশান্ত দেখাচ্ছিস।”
নাফিসহাসে। “হয়তো শান্তি বলে কিছু নেই।শুধু চেনা কষ্টটাই অভ্যস্তহয়ে যায়।”
রিদয়কিছু না বলে বাইকেওঠে। নাফিস পিছনে বসে। গলি পেরিয়েতারা ক্যাম্প ছেড়ে বেরিয়ে আসে।
দূরে, ভাঙা দেয়ালের গায়ে মেয়েটির একটা পুরনো ছবি — সাদা জামায়, চুল খোলা, চোখেস্থির তাকিয়ে থাকা।
ছবিরনিচে লেখা — “রুকাইয়া আক্তার। নিখোঁজ: ২০০০ সাল।
আট---
ভোরের কুয়াশা এখনো পুরোপুরি সরেনি। নাফিস যা ভেবেছিল তাই হয়েছে। তার আর ক্যাম্প থেকে যাওয়া হয়নি। ক্যাম্পের শেষ মাথায় পুরনো পানির পাম্পটার পাশে বসে আছে নাফিস। হাত ঝুলে পড়েছে হাঁটুর উপর, চোখে একধরনের ফাঁকা ভাব — যেন সে স্বপ্ন আর জাগরণ মাঝামাঝি কোথাও থেমে আছে।
কিছু দূরে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসে রউফ কাকা। তার গায়ে পুরনো পাঞ্জাবি, চোখ লালচে, কণ্ঠে কাশির শব্দ। পায়ের শব্দে নাফিস চমকায় না — যেন জানত, কেউ আসবে।
রউফ কাকা পাশে বসে।
রউফ কাকা (নরম কিন্তু ভারী গলায়): — ভাইজান... এই ক্যাম্পে ভালোবাসলে টিকে থাকা যায় না।
নাফিস তাকায় না। চুপচাপ বসে থাকে। তার আঙুল যেন অদৃশ্য কিছু ধরতে চাইছে — যা এখন আর নেই।
রউফ কাকা চোখ সরু করে গলির দিকে তাকায়: — এই গলি দয়া বোঝে না ভাইজান। এখানে আইন আসে টাকার পেছনে, আর মন...? মন ত্যানা প্যাঁচে মরে পড়ে থাকে।
একটা হালকা বাতাস আসে। রউফ কাকার পাঞ্জাবি দুলে ওঠে।
রউফ কাকা (গলা শক্ত করে): — রুকাইয়া ভালো মাইয়া ছিল... — কিন্তু ভালো হইলেই এই ক্যাম্পে বাঁচা যায় না।
নাফিস ধীরে মাথা তোলে। চোখে ক্লান্তি, তবু বিদ্রোহ নেই।
নাফিস (আস্তে): — জানি।
রউফ কাকা হালকা হেসে: — জানলে... পালান ভাইজান। না হইলে এই গলি আপনাকে গিল্লা খাইবো।
রউফ কাকা ধীরে উঠে যায়। তার ছায়া মিলিয়ে যায় কুয়াশায়। পেছনে পড়ে থাকে নাফিস, একা — তার চোখ পানির পাম্পের জং ধরা নলের দিকে, যেখানে কিছুই নেই, কিন্তু সে শুনতে পায় ভেতরের এক ফিসফাস।
সমাপ্ত