আমার একটা চাদর ছিল। চাদরটা ঠিক আমার না, আমাদের ৫ তলায় শামস নামের একটা ছেলে ছিল। চাদরটা তার। তার কাছ থেকে নিয়ে আর ফেরত দেয়া হয়নি। গায়ে পড়ার মোটা চাদর, ধূসর বর্ণ। শীতকালে আমি চাদরটা যতটুকু না ব্যবহার করতাম তার থেকে বেশি ব্যবহার করতাম বর্ষাকালে। আজকে অঝোর ধারায় বৃষ্টি পড়ছে। আজকে থেকে বেশ কয়েক বছর আগে এমনই এক বর্ষায় আমি চাদরটি হারিয়ে ফেলি। আমি হারাই নি আসলে , আমার আম্মা হারিয়ে ফেলে। কারণ আমার জামা-কাপড় এইগুলার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ছিল আম্মার। দুই -তিন বা পাঁচ-ছয় বছর আগে এমনই এক বৃষ্টির দিনে আমি সারা বাসা খুঁজে ও চাদরটি পায় নি। চাদরটি হারিয়ে গেছে।
চাদরটি গায়ে পেঁচিয়ে ঝুম বৃষ্টিতে হেঁটে বেরানো আমার ভাল লাগা ছিল। একা বেরোতাম। সাথে কেউ না থাকার কারণ ছিল তারা এটাকে ভাল লাগার মতো কোন বিষয় মনে করতো না। আমি একাই হেঁটে বেরাতাম। বৃষ্টি আমার খুব ভালো লাগে।
চাদরটি হারিয়ে যাবার পর শখ করে আর বৃষ্টিতে হাঁটা হয়নি। আজকে ঝুম বৃষ্টিতে হঠাৎ করেই আমার সেই চাদরটির কথা মনে পড়ে গেল। চাদর নেই, বৃষ্টিতে হাঁটা নেই, সেই ভালো লাগা নেই। একটা চাদরের সাথেও মানুষের ভালবাসা হয়। ভালোবাসা হারিয়ে গেলে অতি প্রিয় জিনিসও মানুষকে কাছে টানে না।
বাইরে বৃষ্টি পড়েই যাচ্ছে। আমি নস্টালজিয়ায় ভুগছি। জীবনে ভালোবাসার মানুষ এসেছিল আবার চলেও গিয়েছে। বিশেষ বিশেষ মুহূর্তে তাদের মনে পড়ে আবার কখনো পড়ে না। ভালবাসার কিছু অভ্যাস ছিল। সে অভ্যাসও টানে না।
নর-নারীর প্রেমই শেষ কথা নয়। একটা চাদরের সাথেও মানুষের ভালবাসা হয়। মানুষ এরকম অনেক ভালোবাসা জীবন থেকে হারিয়ে ফেলে। যেখানে প্রিয়তমার ভালোবাসাও সময়ের সাথে সময় বা মুহূর্ত নির্ভর হয়ে উঠে সেখানে একটা চাদরের সাথে আমার ভালোবাসা কখনো ফিকে হয়ে যায়নি, মুহূর্ত নির্ভর হয়ে উঠেনি। ঝুম বৃষ্টি হলেই আমার ভালোবাসার চাদরকে আমার মনে পড়বেই।