শীতল জানালার পাশে বসে ছেলেটা চুপচাপ আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। তার হাতে একটা চিঠি, একটু পুরোনো, ভাঁজ করা। চিঠিটার কাগজে এখনো এক ফোঁটা চোখের জল শুকিয়ে গিয়ে দাগ হয়ে আছে।
চিঠির উপরে লেখা—
"আমার প্রিয় মানাফ,
তুমি যদি এই চিঠিটা পড়ো, তাহলে বুঝবে, আমি আর নেই..."
চিঠিটা লিখেছিল তার ছোট বোন রিমি। ক্যানসারের সাথে তিন বছর লড়াই করে হেরে গিয়েছিল রিমি, মাত্র ১৬ বছর বয়সে। মৃত্যুর এক সপ্তাহ আগে সে এই চিঠিটা মানাফের বইয়ের মধ্যে লুকিয়ে রেখে যায়। মানাফ তখন ঢাকায়, ভার্সিটিতে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিল।
চিঠিতে লেখা ছিল—
“তুমি কাঁদবে না, ভাইয়া। আমি জানি, তুমি সবসময় হাসিখুশি থাকতে চাও। আমিও চাই তুমি তাই থাকো। কিন্তু একটা কথা মনে রেখো—মা-বাবার মতো আর কেউ আমাদের ভালোবাসতে পারবে না। তুমি যখন অনেক বড় হয়ে যাবে, তখন হয়তো আমাকে ভুলে যাবে। কিন্তু আমি চাঁদের আলো হয়ে তোমার পাশে থাকব, বিশ্বাস করো ভাইয়া।”
মানাফ চিঠিটা বুকের কাছে চেপে ধরল। ছাদে উঠে চাঁদের দিকে তাকিয়ে কাঁদতে লাগল—আবেগ চেপে রাখা আর সম্ভব হলো না।
তার মনে পড়ে গেল ছোট্ট রিমির সেই খিলখিল হাসি, হাসপাতালের বিছানায় পড়েও রঙিন স্বপ্ন দেখা চোখগুলো। সেই স্বপ্ন এখন ধূসর, কিন্তু স্মৃতিগুলো আজও বেঁচে আছে।
রিমির মৃত্যুদিনে মানাফ এখন প্রতিবছর চুপিচুপিই চিঠিটা পড়ে। চিঠির শেষ লাইনে লেখা—
"ভাইয়া, আমি তোমার মধ্যে বেঁচে থাকতে চাই। তুমি ভালো থেকো, খুব ভালো থেকো।"
সেই শব্দগুলোই মানাফের জীবনের সবচেয়ে বড় প্রেরণা।