সত্যজিৎ রায়ের জিনেই সাহিত্য ছিল বলে উল্লেখ করেছেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই কথা বলেছেন। ২ মে বিখ্যাত এই বাঙালি চলচ্চিত্র পরিচালক, চিত্রনাট্যকার, লেখক, গীতিকার, ম্যাগাজিন সম্পাদক, চিত্রকর, ক্যালিগ্রাফার এবং সুরকারের জন্মবার্ষিকী ছিল। এ দিন তার কলকাতার বিশপ লেফ্রয় রোডের বাড়িতে লোকে লোকারণ্য ছিল। সাধারণ মানুষের জন্য এই বাড়ির দরজা ছিল খোলা। সকাল থেকেই ফুল ও ফুলের মালা হাতে অসংখ্য অনুরাগী ভিড় জমাতে শুরু করেন।
সত্যজিৎ এর জন্মদিন উপলক্ষে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শীর্ষেন্দু বলেছেন, বংশানুগতির ধারায় সাহিত্য তার মধ্যে অবস্থান করছিল। তার ঠাকুরদা উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী, তার বাবা সুকুমার রায়, লীলা মজুমদারসহ তার পরিবারের প্রায় প্রত্যেকেই প্রখ্যাত লেখক ছিলেন।
তিনি বলেন, প্রথম যে বিষয়টি আমাকে তার লেখার প্রতি আকৃষ্ট করেছে, তাহলো প্রারম্ভিক লাইনের উপর তার দক্ষতা। তিনি প্রথম লাইন থেকেই পাঠকদের আকৃষ্ট করতে পারতেন, তাদের মধ্যে আগ্রহের সৃষ্টি করতেন। প্রথম কয়েক শব্দ থেকেই তাদের কল্পনাশক্তি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারতেন। খুব বেশি লেখকের এই ক্ষমতা নেই। এই বিরল ক্ষমতাই তাকে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধায় এবং শরদিন্দু বন্দোপাধ্যায়ের মত মহান লেখকদের কাতারে নিয়ে এসেছে।
বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় এই লেখক জানান, সত্যজিৎ রায়ের চলচ্চিত্রে অনেক শক্তিশালী এবং স্মরণীয় নারী চরিত্র ছিল। কিন্তু তার লেখা বইয়ে উল্লেখযোগ্য কোন নারী চরিত্র নেই। এই বিষয়ে তিনি বলেন, তার গল্পগুলোতে নারী চরিত্রের বিরল উপস্থিতি সত্ত্বেও, হোক তা জনপ্রিয় ফেলুদা কিংবা প্রফেসর শংকু সিরিজ, এমনকি তার ছোট গল্পগুলো, আমাদের অর্থাৎ তার পাঠকদের কাছে এটা কখনোই ভুল বলে মনে হয়নি। চলচ্চিত্রের মত তার লেখায় কেন নারী চরিত্রের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি নেই এই ব্যাপারে আমার কোন ধারণা নেই।
শীর্ষেন্দু বলেন, সত্যজিৎ এর গল্প বলার রীতি স্বতঃস্ফূর্ত এবং সহজাত। তিনি এমন একজন সাবলীল লেখক যে আপনি সহজেই তার গল্পের মধ্যে ডুবে যেতে পারেন। তার অনন্য কাহিনী, গল্পের শেষে টুইস্টসহ টানটান প্লট সবকিছু মিলেই তিনি নিজস্ব একটি ঘরানা সৃষ্টি করেছেন। বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, অতিপ্রাকৃতিক বিষয়, রহস্য নিয়ে তিনি লেখালেখি করেছেন। তার প্রতিটি গল্পের মধ্য দিয়ে তিনি আমাদের ভিন্ন এক যাত্রায় নিয়ে গেছেন। তিনি আমাদের কল্পনার সীমানা ঠেলে দিয়েছেন এবং বিশ্ব সম্বন্ধে আমাদের যে জানাশোনা তার প্রতি চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন।
সবশেষে তিনি বলেন, সত্যজিৎ রায় যখন লেখালেখি করেছেন তখনো তিনি অবিশ্বাস্য রকমের জনপ্রিয় ছিলেন, এবং তিনি চলে যাওয়ার এত বছর পরে আজও তিনি সমান জনপ্রিয়। তিনি এখনো অন্যতম সেরা গল্পকার হিসেবেই রয়েছেন।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া