মরুর বুকে বসে চিঠির পাতায় চোখ রেখেছিল সে—আরিফ। সময়টা তখন সকাল সাতটা ত্রিশ। চারপাশে নীরবতা, কিন্তু মনে ঝড়। হাতে ধরা একখণ্ড কাগজ, যেন বুক ফাটানো কষ্টের দলিল। চিঠির শুরুতেই ছিল সালাম, আর শেষে দোয়া—মাঝখানে ছিল ব্যথা, প্রেম, নিষেধ আর আত্মত্যাগ।
সওগাত—যার সাথে তার পরিচয় সহপাঠী জীবন থেকে, যার চোখে ছিল দৃঢ়তা আর কথায় ছিল কোমল স্নেহ। সওগাত একদিন শুধু বান্ধবীকে নয়, নিয়ে এসেছিল নিজের হৃদয়ের সাহসটাও। এসেছিল আরিফের মায়ের কাছে। বলেছিল, ‘‘এই ছেলে অনেক ভালো।’’
চাচাতো ভাবীর ফোনে কথা, পিয়াসদের বাড়ি গিয়ে খোঁজ নেয়া—সব কিছুই ছিল এক একটা স্পষ্ট ভালোবাসার প্রমাণ।
তবু সওগাত বলত, ‘‘তুমি আর আমি একসাথে হবো না।’’
আরিফের একদফা একদাবি ছিল—‘‘তুমি আমার, আমারই থাকবে চিরকাল।’’
চিঠিতে সওগাত লিখেছিল—
"ভালবেসে কি পেলে জানতে চেয়েছিলে, ব্যাথা ছাড়া আর কিছুই বোধ হয় পাওনি। দয়া করে আমাকে ক্ষমা করে দিও। না হলে অভিশাপ দিও, আশীর্বাদ হিসাবেই মেনে নিব।"
আরিফ পড়েছিল বারবার। শেষবার যখন পড়েছিল, চোখ ভিজে গিয়েছিল অশ্রুতে, আর ঠোঁট বলেছিল একটিই শব্দ—"ভালোবাসি।"
চিঠির পর আর দেখা হয়নি। সওগাতের বড় ভাই বিয়ে দিয়ে দেয় তাকে মীরপুরে এক প্রবাসীর সাথে। এখন সে দুবাই থাকে, ব্লক করে দিয়েছে আরিফকে—তাতে যেন লাইক, মন্তব্য, ছোঁয়া কোনো কিছু না পৌঁছায়।
তবু প্রশ্নটা রয়ে গেছে—সে কি সত্যিই ভালোবাসতো?
আরিফ জানে, যে চিঠি লেখা হয় ভালোবাসা রেখে, তাতে অভিনয় থাকে না।
তাই প্রতিটি ইবাদতের ফাঁকে, প্রতিটি রাতে, প্রতিটি নিঃশ্বাসে সে শুধু একটাই প্রার্থনা করে—
‘‘আল্লাহ, সে যেখানেই থাকুক, ভালো থাকুক।’’