Posts

চিন্তা

প্রেমের সেই দিনগুলি: সওগাতকে নিয়ে এক আত্মকথন

May 3, 2025

ARIFUL ISLAM BHUIYAN

79
View

অধ্যায় ১: সেই প্রথম দেখা – অনার্সের লাইনে ব্রাহ্মণবাড়ীয়া সরকারি অনার্স কলেজ। অর্থনীতিতে অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তি হতে গিয়ে লাইনের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আরিফ। অন্য পাশে, কয়েকজন বান্ধবীকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সওগাত। কালো কাজলপরা দুটি চোখ, যেগুলো মুখে কাপড়ের আড়ালেও অনাবৃত, যেন জাদু ছড়াচ্ছে। আরিফ অপলক তাকিয়ে থাকে। সেই প্রথম ভালো লাগা, এক অচেনা টান অনুভব করে তার হৃদয়ের গহীনে।

অধ্যায় ২: ক্লাসরুমে চমক – ভালোবাসার বীজ অনার্সের প্রথম দিনের উদ্বোধনী ক্লাস। পরিচিতি পর্বে আবারও সওগাতকে দেখে থমকে যায় আরিফ। তখনও জানা হয়নি, এই মেয়েটি তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নাম হয়ে যাবে। তবে সেদিনই হয়তো প্রেমের প্রথম বীজ রোপিত হয় তাদের মাঝে, নিঃশব্দে।

অধ্যায় ৩: মৃত্যুর পরশ – এক অভিমানী প্রশ্ন ফেনিতে বন্ধুর বাসায় বেড়াতে গিয়ে হঠাৎ খবর পায় সওগাতের আব্বার ইন্তেকালের। সেখান থেকে ফিরে পিয়াসের সঙ্গে দেখা হয় আরিফের। খবর শুনে তারা যায় সওগাতদের বাড়িতে। সওগাত কষ্ট পেয়েছে, অভিমান করেছে, বলেছে— “তুমি না এসে পারলে?” এই একটি বাক্য আরিফের হৃদয়ে শেকড় গেড়ে বসে। ভালোবাসা তখন শুধুই ভালো লাগা ছিল না, গভীর আত্মিক টান হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

অধ্যায় ৪: চাপকলের পাশে – এক নীরব কবিতা আখাউড়া শহীদ স্মৃতি কলেজের মাঠের এক কোণে চাপকলের পাশে দাঁড়িয়ে অযু করছিল আরিফ। সওগাত পাশে এসে দাঁড়ায়। হঠাৎ সে নিজে হাত বাড়িয়ে চাপকল চাপতে শুরু করে, বলে— “তুমি সামনে দাঁড়িয়ে অজু করো।” সে মুহূর্ত ছিল এক জীবনের জন্য। ভাষাহীন, অথচ ভরপুর ভালোবাসার।

অধ্যায় ৫: প্রস্তাব ও প্রতিক্রিয়া – সমাজের দেয়াল চাচাতো দুলাভাইয়ের মাধ্যমে সওগাতের পরিবারে প্রস্তাব পাঠায় আরিফ। কিন্তু ওর বড় ভাই তড়িঘড়ি করে অন্যত্র বিয়ে দিয়ে দেয় সওগাতকে। কনজার্ভেটিভ পরিবার, মান-সম্মান, সামাজিক কাঠামো— সব মিলিয়ে প্রেমের স্বাধীনতা রুদ্ধ হয়ে যায়। কেউ নায়ক হয়নি, কেউ ভিলেনও নয়। ছিল কেবল চাপা দীর্ঘশ্বাস আর হৃদয়ের হাহাকার।

অধ্যায় ৬: রমজানের সওগাত – কবিতায় প্রকাশ রমজান মাসে, আরিফ যত্ন করে সওগাতের জন্য একগুচ্ছ কবিতা লিখেছিল— “রমজানের সওগাত” নামে। ভালোবাসা, অনুভূতি আর আত্মার গভীর থেকে উৎসারিত সেই কবিতাগুলো ছিল প্রেমের চিঠির চেয়েও বেশি কিছু। প্রতিটি শব্দে ছিল সওগাতের জন্য না বলা একান্ত ভালোবাসা।

অধ্যায় ৭: মাস্টার্স ও বিয়ের খবর – তাকদীরের রায় আরিফ যখন মাস্টার্স পরীক্ষা দিচ্ছিল, তখনই হয় সওগাতের বিয়ে। পরিবার, সমাজ ও সংস্কারের বেড়াজালে আবদ্ধ দু’টি জীবন, যারা চাইলেও একসাথে হতে পারেনি। তাকদীরের ফয়সালায় নিরবে মাথা নত করে নেয় তারা। কোনো বিদ্রোহ, কোনো যুদ্ধ নয়— কেবল আত্মসমর্পণ।

অধ্যায় ৮: ফেসবুকের নীরব প্রতিক্রিয়া অনেক খোঁজাখুঁজির পর সওগাতের ফেসবুক আইডি পায় আরিফ। ভালোবাসা আর স্মৃতির টানে লাইক, লাভ রিয়েক্ট দেয় কয়েকটি পোস্টে। কিছুদিন পর আইডিটি আর খুঁজে পাওয়া যায় না। হয়তো ব্লক করে দিয়েছে সওগাত— যোগাযোগের শেষ সেতুটুকুও ভেঙে যায়।

অধ্যায় ৯: আজো ভুলিনি – ভালোবাসি দিবানিশি আজও আরিফ ভুলতে পারেনি। আর ভুলবেও না। তার কাছে সওগাত শুধু এক প্রাক্তন প্রেমিকা নয়— এক জীবনের ধ্যান, প্রার্থনা, ভালোবাসার ধ্রুবতারা। যতদিন “ভালোবাসা” শব্দটি বেঁচে থাকবে, ততদিন “ভালোবাসি দিবানিশি” নামে তার হৃদয়ের রাজ্যেও বেঁচে থাকবে সওগাত।

(চলবে)

Comments

    Please login to post comment. Login