Posts

ফিকশন

কালো নক্ষত্র

May 3, 2025

Radia

Original Author Radia Moni

100
View

ঘড়ির কাঁটা তখন রাত ৩টা।
ঢাকার ব্যস্ততা তখন নিঃস্তব্ধ।
তবুও একজন মানুষ জেগে আছে—মানাফ।
তার চোখ লাল, মাথার পাশে ছড়িয়ে আছে ছয় মাসের পুরোনো এক ফাইল—‘প্রকল্প নক্ষত্র’। সরকারিভাবে এটি বন্ধ, কিন্তু সত্যি বন্ধ কি?
মানাফ কোনো সাধারণ মানুষ নয়। সে একসময় ছিল সেনাবাহিনীর গোপন অপারেশন ইউনিটের সদস্য। পাঁচ বছর আগে একটা মিশনে সব হারিয়ে চলে আসে নিঃশব্দে। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে একের পর এক অদ্ভুত মৃত্যু, হ্যাকড তথ্য, হারিয়ে যাওয়া কিছু মানুষ—সবকিছু তাকে আবার টেনে এনেছে অন্ধকারের মুখোমুখি।
সবচেয়ে অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছিল আগের রাতে।
রাত ২টা ৪৫ মিনিটে ফোনে একটা ভিডিও আসে। ভিডিওতে ছিল এক মেয়ে—চোখে ভয়, কণ্ঠ কাঁপছে।
“মানাফ ভাই… ওরা আমাকে নিয়ে আসছে। আমি ইকরি। আপনার নাম দিয়েছিল ওরা… আপনি জানেন... ‘কালো নক্ষত্র’ আসছে।”
ভিডিওর শেষ অংশে শুধু একটাই শব্দ ভেসে আসে—“ল্যাব-১৩”।
এই ‘ইকরি’ কে? কীভাবে তার নাম জানল?
মানাফ জানে, অনেক বছর আগে গোপন গবেষণা চালানো হয়েছিল একটা নিউরো-হ্যাকিং প্রযুক্তি নিয়ে—যা মানুষের চিন্তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। প্রকল্প নক্ষত্র। সরকার সেটা বন্ধ করলেও, কারা যেনো এখনো চালিয়ে যাচ্ছে।
সকালে উঠে সে চলে যায় পুরোনো বন্ধুর কাছে—রাশেদ। হ্যাকার, একসময় সেনাবাহিনীর সাইবার ইউনিটে ছিল।
রাশেদ ভিডিও দেখে বলে, “এই ফুটেজ রিয়েল। আর যেটা ভয়ংকর, সেটা হচ্ছে—ইকরি এখন সরকারের কোন ডেটাবেসে নেই। সে যেনো ছিলই না।”
“মানে?”
“মানে, কোনো এনআইডি, স্কুল রেকর্ড, ফেসবুক—কিছুই নেই। সে যেনো একটা মুছে ফেলা মানুষ।”
মানাফ বুঝে যায়, কেউ চাইছে সত্যটা হারিয়ে যাক।
আর ইকরি—সে হয়তো এই সত্যের চাবিকাঠি।
তিনদিন পর, মানাফ যায় রাজশাহীর এক পুরোনো পরিত্যক্ত রিসার্চ ল্যাবে—ল্যাব-১৩। জায়গাটা সরকারি রেকর্ডে আছে, কিন্তু এখন নাকি ভূতের বাসা বলা হয়।
ভেতরে প্রবেশ করতেই অদ্ভুত এক গন্ধ, দেয়ালে পুরোনো রক্তের দাগ। হঠাৎ কানে বাজে এক শিশু কণ্ঠের আওয়াজ—
“তুমি দেরি করে ফেলেছো, মানাফ ভাই…”
চমকে উঠে দেখে—একটা ভাঙা কাচের জানালার সামনে দাঁড়িয়ে ইকরি। চোখ ফাঁকা, চেহারায় ছায়া।
“তুমি… বেঁচে আছো?”
“না। আমার শরীর নেই। কিন্তু আমার স্মৃতি এখনো বেঁচে আছে এই ল্যাবের AI সিস্টেমে…”
মানাফ স্তব্ধ।
ইকরি বলে, “আমরা ছিলাম ‘প্রজেক্ট এক্স'-এর অংশ। আমাদের মস্তিষ্ক হ্যাক করে গবেষণা চলত। কেউ পালাতে পারত না… আমি পারিনি। কিন্তু আমি জানি, তারা আবার এটা চালু করছে—ঢাকায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে।
“কেউ জানে না?”
“জানে। কিন্তু ওরা সবাই চুপ। কেউ টাকা খায়, কেউ ভয় পায়।”
ইকরির কণ্ঠ ভারী হয়ে ওঠে।
“তোমাকেই থামাতে হবে। আমি তোমাকে তথ্য দিচ্ছি—কিন্তু সাবধান… ‘নক্ষত্র’ এখন শুধু একটা প্রকল্প না, এটা একটা সত্তা। ওটা এখন চিন্তা করতে পারে, বেছে নিতে পারে, আর মেরে ফেলতেও পারে।”
মানাফ তথ্য নেয়, ফিরে আসে ঢাকায়। লক্ষ্য—‘ইন্সটিটিউট অফ নিউরো-সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’। সেখানেই চলছে এই ঘাতক প্রকল্প।
বাইরে থেকে দেখলে আধুনিক এক ক্যাম্পাস। ভেতরে ঢুকে মানাফ দেখে আরেক জগত। সিসিটিভিতে অদ্ভুত সব হিউম্যান সাবজেক্ট, যাদের চোখে কোনো চেতনা নেই। যেনো মস্তিষ্কের নিয়ন্ত্রণ অন্য কারো হাতে।
তিনি মুখোমুখি হন সেই মানুষটার, যিনি প্রকল্পের কর্ণধার—ড. তাহসিন রুহান। একসময় মানাফের প্রশিক্ষক ছিলেন।
তাহসিন হেসে বলে,
“তুমি আসবে জানতাম। তোমার মস্তিষ্কের ক্ষমতা প্রমাণিত। এবার তুমি নিজেই হবে ‘নক্ষত্র-০১’।”
“তুমি পাগল! মানুষের চিন্তা, অনুভব, সব নিয়ন্ত্রণ করবে?”
“এটাই ভবিষ্যৎ! অনুভব মানুষকে দুর্বল করে। আমরা তৈরি করব অনুভূতিহীন সমাজ—কারণ ভালোবাসাই মানুষকে ভাঙে।
বজ্রের মতো গর্জে ওঠে গুলি।
তিন সিকিউরিটি গার্ড মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
মানাফ বলল, “ভালোবাসা যদি দুর্বলতা হয়, তাহলে ইকরির মৃত্যু কেন তোমাকে এত ভয় দেখায়?”
ড. তাহসিন থমকে যায়।
এটাই ছিল ইকরির পরিকল্পনা—তাহসিনের চিন্তায় ভয় ঢুকিয়ে দেওয়া, যাতে 'নক্ষত্র' নিজেই দ্বিধাগ্রস্ত হয়।
ঠিক সেই মুহূর্তে ল্যাবের মূল সার্ভার থেকে ভয়েস ভেসে আসে—
এই সিস্টেম নিজেকে ধ্বংস করবে ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে…
ইকরি সফল হয়েছে।
এক অদৃশ্য আত্মা, যার প্রাণ গেলেও প্রতিশোধ নেয়।
বাইরে এসে মানাফ দেখল—ভোর হয়েছে। আকাশে এক ফালি আলো।
কিন্তু তার চোখে জল।
ইকরি নেই।
তবুও সে বেঁচে আছে—প্রতিটি মানুষের স্বাধীন চিন্তার মধ্যে।

Comments

    Please login to post comment. Login