এক গ্রামে থাকতো অয়ন নামে এক ছেলে। ছোটবেলা থেকেই তাকে সবাই বলতো—"তুই পারবি না। তুই তো গরীবের ছেলে। বড় স্বপ্ন দেখিস না।" কথাগুলো যেন বাতাসের সাথে মিশে গিয়েছিল, কারণ ওর চারপাশের সবাই একই সুরে গাইত।
অয়ন যখন মাঠে কাজ করতো, তখন সে আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবতো—"পাখিরা তো জানে না ওরা গরীব না ধনী, তবুও ওরা উড়তে পারে। আমি কেন পারবো না?"
একদিন হাটে গিয়ে সে দেখল এক বৃদ্ধ লোক মাটির হাঁড়ি বানাচ্ছে। লোকটা ক্লান্ত হলেও বারবার চেষ্টা করছিল, কারণ প্রথম দুটো হাঁড়ি ভেঙে গিয়েছিল। অয়ন কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করল,
— "দাদা, বারবার ভাঙছে, তবুও কেন বানাচ্ছেন?"
বৃদ্ধটা হেসে বলল,
— "ভাইরে, ভাঙা মানেই শেষ না, ওটাই শেখা। যতবার ভাঙবে, ততবার শিখবি ঠিক কোথায় ভুল করিস। হাঁড়ি ভাঙা না শিখলে মাটি সোনা হয় না।"
এই কথাটা যেন আগুনের মতো জ্বলতে শুরু করল অয়নের ভেতরে। সে ঠিক করল—এবার সে থামবে না।
দিনে মাঠে কাজ করত, রাতে কেরোসিনের আলোয় বই পড়ত। সবাই হাসত, বলত, "বই পড়ে কি তুই রাজা হবি?"
কিন্তু অয়ন আর কারও কথা শোনেনি।
একদিন সে বড় শহরে গেল পরীক্ষায় অংশ নিতে। প্রথমবার সে ব্যর্থ হল। দ্বিতীয়বারও হল। চারপাশ থেকে ছায়ার মতো অন্ধকার নামতে লাগল। সবাই বলল, "তুই তো বলেছিলাম, পারবি না।"
কিন্তু অয়ন জানত, ছায়া তখনই হয়, যখন আলো আসে। সে আবার চেষ্টা করল। তৃতীয়বার, শেষবারের মতো। আর সেইবার অয়ন হয়ে গেল দেশের সর্বোচ্চ সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার টপার।
গ্রামে ফিরে সে হাঁটছিল সেই হাটের পথে। বৃদ্ধ হাঁড়িওয়ালা তখনও হাঁড়ি বানাচ্ছিল। অয়ন হাসল, আর মনের ভিতর বলল,
— "হাঁড়ি ভাঙতে শিখেছিলাম বলেই আজ জীবন গড়তে পারলাম।"