Posts

চিন্তা

শিক্ষকের রোযনামচা-০৩ (শিক্ষা খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দের প্রচার!)

May 4, 2025

মাহমুদুল হক

123
View

    আজ ০৩/০৫/২০২৫ শনিবার বিকেলে বর্তমান সরকারের 'ছাত্র' উপদেষ্টা জনাব আসিফ মাহমুদ এর ফেসবুক একাউন্ট এএকটা ফটোকার্ড সম্বলিত পোস্ট করা হয়েছে এডমিন এর পক্ষ থেকে। ফটোকার্ডে বড় রঙিন অক্ষরে লেখা, "আগামী জাতীয় বাজেটে (২০২৫-২০২৬ অর্থ বছরে) শিক্ষা খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখা হবে"। 

শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন চান এমন যেকোনো ব্যক্তি এবং একজন শিক্ষকের জন্য সংবাদটি খুশির। যদি বিস্তারিত না পড়েন!

  

  পোস্ট বিবরণিতে উপদেষ্টার এডমিন বরাদ্দের খাত বর্ণনা করেছেন মাউশির সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়েরের রেফারেন্সে। সচিব বলেছেন,"নতুন নতুন ভবন নির্মাণ, আধুনিক ল্যাবরেটরি ও কম্পিউটার ল্যাবরেটরির কাজ হচ্ছে। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এক বা একাধিক মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম চালু করতে কাজ করছি।"

এই বক্তব্য থেকে স্পষ্ট  অবকাঠামো এবং ল্যাব এই দুই খাতে বরাদ্দের জন্য সর্বোচ্চ বরাদ্দ হবে।

   প্রথম কথা হলো, বর্তমানে সরকারি পদস্থ এবং অপদস্থ (যারা সরকারি বিভিন্ন বিভাগ, অনুবিভাগে  জাতির স্বার্থে মূলত দালালির স্বার্থে  দৌড়াদৌড়ি করেন!) কর্তাব্যক্তিরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ঘোষণা দেন। ঘোষাণার বাস্তবায়ন  না হলে  পরে  আর তার  দায় নেন না। বাজেট বিষয়ে অর্থ বা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা অধিক সত্য  হওয়ার সম্ভাবনা রাখে। তবুও আমরা আশাবাদী, শিক্ষা সচিবের কথা বাস্তবায়ন হোক।

    দ্বিতীয় কথা হলো, শিক্ষার উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা চলে আসছে দীর্ঘদিন থেকে। বিভিন্ন সংস্থা এ নিয়ে সভা সেমিনার ও করে থাকেন। যেগুলোতে অবকাঠামোগত উন্নয়নই শিক্ষার উন্নয়ন নয় এ বিষয়েও আলোচনা হয়। তাছাড়া একজন সর্বোচ্চ শিক্ষিত, মেধাবী এবং চৌকস (সাধারণ মানুষ এবং তারা নিজেরা মনে করে) সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে সচিবদের এ বিষয়টা  অজানা থাকার কথা   নয়। তথাপিও তারা অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং উলুবনে মুক্তা ছড়ানোর মতো ল্যাব বসানোকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন। একজন শিক্ষক হিসেবে আমি প্রশ্ন রাখতে চাই, কেন? কাদের স্বার্থে?

তৃতীয় কথা হলো, অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং ল্যাব তৈরি ব্যতীত শিক্ষা খাতের বরাদ্দে আর কি কি গুরুত্ব পেতে পারে বিশেষ করে সামনের বাজেটে পাওয়া উচিৎ?

১. শিক্ষক নিয়োগ: 

    বর্তমানে সরকারি এবং বেসরকারি উভয় ধারায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক (বেসরকারিতে লক্ষাধিক হতে পারে) শিক্ষক পদ শুন্য। যা শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে প্রধান বাধা বলে মনে করি। সরকার অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ দিয়ে নিয়োগ কমিশন করে হলেও দ্রুত শিক্ষক পদগুলো পূরণ করতে পারে।

২. শিক্ষক প্রশিক্ষণ:

     শিক্ষক প্রশিক্ষণ একজন নতুন শিক্ষকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং বাধ্যতামূলক। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের দেশে পর্যায়ক্রমে প্রশিক্ষণের সময় আসতে আসতে অনেকের চুল পেকে যায়। এজন্য বিভাগ ভিত্তিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (মাধ্যমিক, মাদ্রাসা, কারিগরির জন্য আলাদা) স্থাপন করা যেতে পারে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অবকাঠামোগত উন্নয়নের সাথে শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সমান গুরুত্বের দাবি রাখে 

৩. পাঠ্যপুস্তক বোর্ড উন্নয়ন: 

     পাঠ্য পুস্তক বোর্ডকে উপযুক্ত বরাদ্দ দেওয়া যেতে পারে যাতে তারা মেধাবী, দেশপ্রেমিক এবং কর্মঠ পর্যাপ্ত লোকদের সিলেবাস এবং পুস্তক প্রণয়ন কমিটিতে নিয়োগ দিতে পারে। যারা অর্থাভাবে অথবা অর্থের লোভে অসৎ এবং দেশবিরোধীদের কাছে নিজেদের বিক্রি করবে না। বরং নিজ মেধা, শ্রম ব্যয়  করে সমাজ ও সময়োপযোগী সিলেবাস এবং পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করবে। 

৪. দক্ষ আইসিটি শিক্ষক এবং ইন্সট্রাক্টর তৈরিতে:     বর্তমানে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা তো আছেই খোদ কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে যোগ্য আইসিটি শিক্ষক, বিভিন্ন ট্রেড ইন্সট্রাক্টর এর অভাব রয়েছে। এজন্য মেধাবীদের বৃত্তি এবং যথাযোগ্য বেতন স্কেল দিয়ে দক্ষ আইসিটি শিক্ষক এবং ইন্সট্রাক্টর তৈরি প্রয়োজন। যা উপযুক্ত বরাদ্দের দাবি রাখে।

০৪. শিক্ষকতাকে প্রথম শ্রেণীর পেশায় উন্নীতকরণ: 

      শিক্ষকতা মহৎ পেশা। কিন্তু এই মহৎ পেশা বর্তমানে সবচেয়ে নিম্নমানের পেশায় পরিণতি হয়েছে সরকারের অবহেলা এবং সুযোগ সুবিধার অপ্রতুলতায়। যার সুদূর প্রসারী প্রভাব পড়েছে সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থায়। এজন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ এবং পরিকল্পনা দিয়ে শিক্ষকতাকে প্রথম শ্রেণীর পেশায় উন্নীতকরণ প্রয়োজন। যার জন্য বরাদ্দ গুরুত্বপূর্ণ ।

সর্বশেষ কথা হলো,  সুচিন্তিত বাস্তবসম্মত আবহমান বাংলার ধর্ম, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য বিধৌত আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা প্রয়োজন। যার জন্য সরকারের আন্তরিকতা এবং উপযুক্ত পরিকল্পনা, বাজেট আবশ্যক। না হয় অবকাঠামো, ল্যাব প্রতিষ্ঠা জাতীয় চোখে ধরে এমন উন্নয়ন  বহুলাংশে ক্ষমতার নির্যাসভোগীদের উন্নয়ন ঘটাবে শিক্ষা ব্যবস্থার নয়। যা আমরা বিগত সময়গুলোতে দেখে এসেছি।

০৩.০৫.২৫

শনিবার। রাত ৯.০০টা

রাজিবপুর, সদর, লক্ষ্মীপুর 

Comments

    Please login to post comment. Login