ওয়াহিদ ওয়াসেক—তরুণ ছড়াকার। শিশুসাহিত্যিক। লুৎফর রহমান রিটন তাঁকে বলছেন ‘ছন্দের ফেরিওয়ালা’। তাঁর প্রথম বই বেরিয়েছে দু হাজার পঁচিশের বইমেলায়। শিশুতোষ ছড়ার বই। নাম ‘ইতি-বিথী’। বইটিতে মোট চৌদ্দটি ছড়া আছে। কয়েকটি ছড়ার নিয়ে পড়াপড়ি করা যাক!
বইটির প্রথম ছড়া ‘আমাদের পিচ্চিটা’। পিচ্চিদের ছড়ার বই শুরু হয়েছে পিচ্চিদের নিয়ে ছড়ার মাধ্যমে। ছড়াকার শুরুতে বলছেন—
আমাদের পিচ্চি—
কী কী করে কী কী খায়
সব বলে দিচ্ছি!
শিশুরা শিশুদের প্রতি আগ্রহী থাকে। তাদের পেলে উৎফুল্ল হয়। তাই বলা যায়—ইতি-বিথীর শুরু সুন্দর।
ছড়াটির চার নম্বর স্তবক—
দাদাজির গালে খায়
চকোলেটে চুম্মা
দাদিজিকে চুমো দেয়
চপচপ, উম্মা!
চকোলেটে চুম্মা—শব্দ দুটো, কিন্তু অর্থ বিশাল। বাচ্চাদের যখন চকোলেট ইত্যাদি দেওয়া হয়, তখন তারা আনন্দ পায়। চুমু খায়—এটাকেই `চকোলেটে চুম্মা’ বলে বুঝিয়েছেন ছড়াকার।
শিশুদের শিশুকাল হাসিখুশি-মাখা হওয়া উচিত। রঙিন হওয়া উচিত। কিন্তু পড়ালেখার চাপে তা কি আর হয়? হয় না। তাহলে কী কী হয়—‘বৃষ্টি দিদি’ ছড়ায় দেখে আসি। প্রথম স্তবক—
সকাল সকাল ইশকুলে যাই—
পড়ার ভীষণ চাপ
কিন্তু কড়া দুষ্ট রোদের
প্রচণ্ড উত্তাপ!
আমার পিঠে বইয়ের বোঝা
ক্যাডস পরেছি পায়ে;
নেই তো কোথাও একটু ছায়া
বৃক্ষ কাটার দায়ে!
সকালের ঝাঁঝালো রোদে স্কুলে যাওয়ার আগের চিত্র উঠে এসেছে এই দুই স্তবকে। নেই তো কোথাও একটু ছায়া/বৃক্ষ কাটার দায়ে, এখানে গাছ না কাটার প্রতিও উৎসাহ দিচ্ছেন ছড়াকার।
স্কুলে গিয়েও যে শান্তি পাওয়া যায়, তা কিন্তু না। যেমনটা বলা হলো তিন নম্বর স্তবকে—
দুঃখ আমার বলব কী আর—
এত্ত গরম ক্যান?
কেলাশরুমে ঘুমোয়, ঝিমোয়
তিনটে ডানার ফ্যান!
অনেক স্কুলেরই চিত্র এমন। অথচ পড়াশোনার সাথেসাথে পারিপার্শ্বিক সব ঠিক আছে কি না, তাও দেখা জরুরি।
‘গাঁয়ের ছেলে’ ছড়ার মাধ্যমে ছড়াকার শহুরে শিশুদের কাছে গাঁয়ের ছেলেকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন। শহরের ছেলে আর গাঁয়ের ছেলেদের মধ্যে অনেক অনেক পার্থক্য দেখা যায়, যদিও এই ছড়ায় একটি পার্থক্যের কথা বলা হয়েছে। চার নম্বর স্তবকে বলা হচ্ছে—
আমন খেতের ধান পেকেছে
এসব এখন তুলতে হবে—
মাড়াই-ঝাড়াই, সবজি চাষে
ট্যুর কী জিনিশ ভুলতে হবে।
ছোটরা ছড়াটি পড়ে আমন ধান কী, মাড়াই কী—তা জানতে আগ্রহী হবে। বাবা তাদের গাঁয়ে নিয়ে যাবেন, তারা গাঁয়ের ছেলেদের সাথে মিশে যাবে!
ছড়া নিছক অন্ত্যমিলের খেলা নয়, ছড়া দিয়েও জ্ঞান ছড়ানো যায়৷ ‘গ্রীষ্মের ফল’ ছড়াটি তার ভালো উদাহরণ। শুরু করেছেন এভাবে-
গ্রীষ্মেই গাছে-গাছে পাকে কী কী ফল?
জেনে নেবে? জেনে নাও শিশুদের দল।
লিচু পাকে ঝোপা ঝোপা আর পাকে আম
তরমুজ, পেয়ারা ও সাদা-কালো জাম।
ছড়াটি শিশুদের ফল চেনাবে। ফলের প্রতি আগ্রহ বাড়াবে। আগ্রহ বাড়লে ফল খাবেও! আর ফল খেলে পুষ্টি হবে; তা বলাই বাহুল্য।
সাবলীল শব্দে, চমৎকার অন্ত্যমিলে মোড়ানো, শিশুদের জন্য আনন্দদায়ক ও শিক্ষণীয় ছড়ার বই ‘ইতি-বিথী’ দু হাজার পঁচিশ বইমেলায় সপ্তডিঙা থেকে বের হয়েছে। প্রচ্ছদ করেছেন মনিরুজ্জামান পলাশ, অলংকরণ কবির আশরাফ-এর। বইটির ফ্ল্যাপ লিখেছেন শিশুসাহিত্যিক লুৎফর রহমান রিটন। বইটির মূল্য একশো টাকা মাত্র।