জীবনের অন্তিম প্রান্তে এসে খালেদা জিয়া যেন এক বীরোচিত অভ্যর্থনা পাচ্ছেন। গণমানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হচ্ছেন।
২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার আলাপ ইনভ্যালিড হয়ে গেছে। তাঁর সময়কার শাসনতান্ত্রিক ত্রুটিবিচ্যুতিও সবাই ভুলে গেছে। এর কারণ কী?
দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, তৎকালীন শাসক শেখ হাসিনা তাঁর বিদেশে চিকিৎসার অধিকার কেড়ে নিয়েছিলেন। বয়স্কা ও অসুস্থ এই নেত্রীকে ‘জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা’ নামের এক অদ্ভুতুড়ে, বিতর্কিত ও সন্দেহজনক মামলায় সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। আদালতের উপর প্রভাব খাটিয়ে তাঁর ৫ বছরের কারাদণ্ড দ্বিগুণ করে ১০ বছরে উন্নীত করা হয়। এরপর জেলখানা থেকে গৃহবন্দি রাখার ‘দয়া’ দেখিয়ে শেখ হাসিনা নানা ফোরামে আত্মতৃপ্তির সুরে বলেছেন, “আমি তো নির্বাহী আদেশে তাঁকে বাড়িতে থাকতে দিয়েছি, আর কী করতে পারি!”
কিন্তু বিড়ম্বনার এই দীর্ঘ যাত্রার শেষে, ৫ আগস্টে গণ আন্দোলনে হাসিনা রেজিমের পতনের পর কারামুক্ত হয়ে খালেদা জিয়া শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে একটিও তির্যক বাক্য উচ্চারণ করেননি। বরং সবাইকে নিয়ে সৌহার্দ্যপূর্ণ সহাবস্থানের বার্তা দিয়েছেন। তাঁর এই মহানুভবতায় বিশ্বাস করি তাঁর অনুসারীরাও প্রেরণা খুঁজে পাবেন।
আমরা মনে করি -জীবনের প্রত্যেকটি পর্ব কোনো না কোনোভাবে পূর্বনির্ধারিত। মানুষ যা দেয়, সেটাই একদিন ফিরে আসে। শেখ হাসিনা বারবার যেভাবে খালেদা জিয়া ও শহীদ জিয়াউর রহমানকে নিয়ে কটাক্ষ করেছেন, খালেদা ও জিয়ার সংসার জোড়া দেয়ার খোঁটা দিয়েছেন -তার অনেক কথাই খালেদা জিয়ার জীবনে আশীর্বাদ হিসেবে ফিরে এসেছে।
আজ জীবনের শেষ প্রান্তে এসে মানুষ তাঁকে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাঞ্জলিতে ভরিয়ে দিচ্ছে। নারী হিসেবে, নেতা হিসেবে, তিনি ইতিহাসে এক সম্মানিত অবস্থান অর্জন করেছেন।
নারীনেত্রী ও দেশের ফাউন্ডারের কন্যা হিসেবে শেখ হাসিনাও চাইলে এই সম্মান পেতে পারতেন -যদি তিনি ক্ষমতার লোভ সংবরণ করতেন, যাচ্ছেতাই ও বেফাঁস মুখের বচন এড়িয়ে চলতেন, কটাক্ষ ও প্রতিহিংসার রাজনীতি ছেড়ে দিয়ে আইনের শাসন নিশ্চিত করতেন, বিশুদ্ধ গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যমে সবার সুন্দর সহাবস্থান নিশ্চিত করতেন।
বিদেশে চিকিৎসা শেষে দেশে ফেরা দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও স্বাগতম জানাই। তাঁর সুস্থতা, দীর্ঘায়ু ও নারীশক্তির জয় কামনা করি।
লেখক: সাংবাদিক
৬ মে ২০২৫
114
View