প্রথম অধ্যায়: অচেনা বাড়ি
বৃষ্টি নামছিল ঝমঝম করে। আকাশ কালো মেঘে ঢাকা, বিদ্যুতের চমক আর বজ্রপাতের শব্দে প্রকৃতি যেন রাগান্বিত। রাত তখন প্রায় এগারোটা। অর্পণ গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিল একাকী, তার গন্তব্য— শ্যামপুরের সেই রহস্যময় বাড়ি, যা সে সম্প্রতি কিনেছে অত্যন্ত সস্তায়।
বাড়িটির ইতিহাস অজানা। স্থানীয়রা বাড়িটিকে "ভূতের বাড়ি" বলে ডাকে। কেউ কাছে যায় না, সন্ধ্যার পর তো নয়ই। কিন্তু অর্পণ ছিল বিজ্ঞানমনস্ক, ভূত-প্রেতে বিশ্বাস করত না। সে ভেবেছিল, সস্তায় একটা সুন্দর বাংলো পেয়েছে।
গেটের সামনে গাড়ি থামিয়ে অর্পণ বের হলো। বিশাল আকারের বাড়িটি অন্ধকারে ডুবে আছে। সামনের বাগানটা জঙ্গলে পরিপূর্ণ, গাছের ডালপালা যেন অদৃশ্য হাত বাড়িয়ে তাকে স্বাগত জানাচ্ছে।
দরজা খুলতে গিয়ে অর্পণের হাত কাঁপছিল। কেন? সে নিজেই বুঝতে পারল না। দরজার তালা ভাঙাচোরা, সহজেই খুলে গেল। ভেতরে ঢুকতেই একটা পচা গন্ধ নাকে এল। বাড়ির ভেতর অন্ধকার, শুধু তার টর্চের আলোয় সামনের দিকে পা বাড়াল সে।
হঠাৎ— ক্যাঁচ!
পেছন থেকে দরজাটা ধড়াম করে বন্ধ হয়ে গেল! অর্পণ ফিরে তাকাল, কিন্তু কাউকে দেখতে পেল না। বাতাস? কিন্তু জানালা তো সব বন্ধ!
দ্বিতীয় অধ্যায়: অদৃশ্য উপস্থিতি
অর্পণ টর্চ জ্বালিয়ে সামনে এগোতে লাগল। বাড়ির ভেতরের দেয়ালে ঝুলছে পুরনো ছবি— কার ছবি? মুখগুলো বিকৃত, চোখগুলো যেন তাকিয়ে আছে তার দিকে।
হঠাৎ সে শুনতে পেল— টাপ... টাপ... টাপ...
পায়ের শব্দ! কিন্তু সে তো দাঁড়িয়ে আছে! শব্দটা আসছে ওপর তলা থেকে। অর্পণের গলা শুকিয়ে এল। সাহস করে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে লাগল। প্রতিটি ধাপে কাঠের সিঁড়ি চিৎকারের মতো শব্দ করছে।
ওপরের হলওয়েতে পৌঁছেই সে দেখল— একটা সাদা কাপড় পরা মেয়ে দাঁড়িয়ে! লম্বা কালো চুলে মুখ ঢাকা, সে ধীরে ধীরে হাত বাড়াল অর্পণের দিকে!
"কে... কে তুমি?!" অর্পণ চিৎকার করে উঠল।
মেয়েটি কোনো উত্তর দিল না, বরং হঠাৎ করে অর্পণের দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ল!
তৃতীয় অধ্যায়: রক্তলেখা
অর্পণ তড়িঘড়ি নিচে নামতে গিয়ে পড়ে গেল। টর্চটা নিভে গেল। অন্ধকারে সে শুনতে পেল— কান্না... কারো কান্না...
সে হামাগুড়ি দিয়ে একটা ঘরে ঢুকল। ঘরটা ঠান্ডা, বরফের মতো। হঠাৎ দেয়ালে রক্ত দিয়ে লেখা— "এখানে আমার মৃত্যু হয়েছে।"
অর্পণের হৃদয় ধড়াস করে উঠল। সে জানালা দিয়ে লাফ দেওয়ার চিন্তা করল, কিন্তু জানালাগুলো সব... বন্ধ from the outside!
পেছন থেকে শুনতে পেল— "তুমি আমার জায়গায় থাকবে..."
ফিরে তাকাতেই সে দেখল— সেই মেয়েটি, তার চোখ দুটো কালো গর্ত, মুখে রক্তাক্ত হাসি!
চতুর্থ অধ্যায়: শেষ চিৎকার
সকালে স্থানীয়রা বাড়ির সামনে অর্পণের গাড়ি পড়ে থাকতে দেখে। দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই তারা ভয়ে কেঁপে উঠল—
অর্পণ ছিল না। শুধু তার ফোনটা পড়ে ছিল মেঝেতে, ভিডিও রেকর্ডিং চালু। ভিডিওতে অর্পণের চিৎকার, আর শেষ ফ্রেমে— সেই মেয়েটি, ক্যামেরার সামনে হাসছে!
Epilogue:
শ্যামপুরের লোকেরা আজও বলে, রাতের বেলা বাড়িটা থেকে কান্না শোনা যায়। কেউ কেউ দেখেছে অর্পণকে— সে এখনও বাড়িটায় ঘুরে বেড়ায়, চিৎকার করে বলে— "আমাকে বের হতে দাও!"
আর যদি কখনো শ্যামপুরের সেই বাড়ির সামনে যাও, সাবধান... কেউ যেন তোমার পেছনে দাঁড়িয়ে ফিসফিস করে না বলে— "এসো... ভেতরে এসো..."
THE END.