ঘন কুয়াশার সাথে লেপ্টে থাকা সূ্র্যের আলো কাঠের বন্ধ জানালা ভেদ করে পরলো গিয়ে রুদ্রের চোখে।
ঘুম ভাংতেই চোখ গেলো ঘড়ির দিকে....
ঘড়ির কাটায় ঠিক ৮ টা।
রুদ্র তরিগরি করে ঘুম থেকে উঠে গামছা কাধে চলে গেলো সোজা পুকুর পারে!
বাশের বাধানো পুরানো ঘাট ,খানিক নরবরে।
সেখানে বসে কনকনে শীতে ঠান্ডা পানিতে গোসল করতে শুরু করলো রুদ্র।
গোসলের সাথে সাথে গানের সুর ধরেছিল সে"তুমি আসবে বলে *
গোসল থেকে ফেরার পথে পা পিছলে পায়ের চোটি খানা ছিরে যায়।
পুরানো -পাতলা চটি খানা হাতে নিয়ে রুদ্র আকাশের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস নেয়।
এর পর চটি সেলাই এর সরঞ্জাম নিয়ে বসে পরে উঠানের এক পাশে।হাতের চটি খানা দেখেই বোঝা যাচ্ছে এর আগেও বেস কয়েক বার সেলাই পরেছে তাতে তাই এবার অনেক টা যুদ্ধ করেই সেলাই করতে হচ্ছে।তবে রুদ্র কে দেখে মনে হচ্ছে সে খুব খুশি মনে পরম যত্নে চটি খানা সেলাই করছে।
চটি খানা সেলাই করতে করতে সেই একি গান গাইতে শুরু করে রুদ্র।
চটি খানা সেলাই হলে পায়ে পরে হাটা হাটি করে দেখে ঠিক আছে কিনা!
একটা সস্তির নিশ্বাস নিয়ে সোজা চলে যায় নিজের ঘরে।
ঘড়িতে সময় তখন ৮:৪০ এর মত হবে হয়তো।রুদ্র তাড়াতাড়ি করে তৈরী হয়ে নিল।
বের হবার আগে নিজেকে আয়নায় একবার দেখে নিলো।ভাংগা আয়নায় নিজেকে আবিষ্কার করতে একটু অসুবিধা হচ্ছিল।সে নিজের শরীরে চোখ বুলিয়ে নিলো.....
আধ ময়লা শার্ট,রং জলে যাওয়া একটা প্যান্ট,শত সেলাই দেয়া পুরানো চটি
ঘন কালো চুলে চিপ চিপে তেল।কিছু একটা ভেবে রুদ্র খানিক ঝিম দিয়ে ছিল।
এর পর খাটের নিচ থেকে একটা পুরানো কাপরের ব্যাগ বের করে।সেখান থেকে কালো রং এর একটা শাল বের করে নিজের গায়ে জড়িয়ে নেয়।
শালের গায়ে পরম আদরে হাত বুলায় আর মুচকি হাসে।
দেড়ি হয়ে যাচ্ছে মনে পরতেই রুদ্র ঘর থেকে বের হয়।
জীর্ণ শীর্ণ প্রায় ওর ঘর খানা।কোন মতে রশি দিয়ে দরজা খানা বেধে দ্রুত হাটতে শুরু করে রুদ্র।
গ্রামের পথ ধরে কিছু দূর হেটে ছোট একটা নদির কাছে পৌছায় রুদ্র।
কোথাও কোন নৌকা নেই,কোমড়ে হাত দিয়ে ভাবছিল
আজ হয়তো তার রক্ষা নেই,
এতোটা দেড়ি হয়ে গেলো বুঝতেই পারলাম না।
দূর থেকে একটা ছোট নৌকা আসতে দেখে রুদ্র হাফ ছেড়ে বাচে জোড় গলায় ডেকে বলে:মাঝি মামা আমি এক কাঙ্গাল দাড়িয়ে আছি,আমাকে পার করো ,এই নদি পার করে বাচাও আমাকে।নয়তো আজ আর রক্ষে নেই।
শান্ত নদি শীতের দমকা বাতাশে নিরবতা জড়িয়ে ধরতেই ,নিরবতার বাধ ভেঙ্গে গান গাইতে শুরু করে রুদ্র।
"দেখেছি রুপ সাগরে মনের মানুষ "
গান থামিয়ে মাঝি প্রশ্ন ছুড়ে দিলো...... শহরে যাচ্ছেন নাকি বাবু???
"হ্যা মামা শহরের দিকেই যাচ্ছি।"
"কোন কামে যাইতাছেন নাকি?"
"মাঝির প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে রুদ্র পাল্টা প্রশ্ন করে.....
মামা আপনি কখনো প্রেম করেছেন??
প্রেমিকার জন্য কবিতা লিখেছেন কখনো?
কিংবা ঝুম বৃষ্টিতে কাক ভেজা হয়ে কদম হাতে বলেছেন ভালোবাসি।"
কি যে কন!!! কবিতা কেমনে লেখমু ওতো তো শিক্ষিত মানু না আমরা।বাপ মা ছোট বেলায় বিয়া দিয়া দিছে,হের লগে এহনো সংসার করতাছি আপনাগো দোয়ায়।ফুল মুল ও দেই নাই কোন দিন।তয় সারা দিন কাম কাজ কইরা দিন শেষে আমনের চাচিরে দেহি এডাই আমার শান্তি।
ভাত রানতে দেরি হইছে মাইরা আইছি কিন্তু দুফুর বেলা যাইয়া দেখমু আমার লেইকজ্ঞা না খাইয়া অপেক্ষা করতাছে এইডাই আমগো ভালোবাসা।"
রুদ্র খিল খিলিয়ে হেসে দেয়।
ভালো বলছেন মামা।
"ঘাটে পৌছালে ভাড়া বুঝিয়ে দিয়ে রুদ্র চলে যাচ্ছিল মাঝি পিছু ডেকে বলে ,মামা আপনি কই যাইতাছেন কইলেন নাতো!"
"অপেক্ষায় অপেক্ষমান এক নারীর অপেক্ষাদের মুক্তি দিতে যাচ্ছি।"
"মাঝি কথার কিছুই বুঝে উঠে না কেবল নিরব চাহনীতে রুদ্রের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে অপলক"