মে টাইমলাইন
প্রতিবেদন: ঢাকা | ১৩ মে, ২০২৫
গত কয়েক সপ্তাহে বাংলাদেশে উচ্চ পর্যায়ের কূটনৈতিক বৈঠক, গোপন সামরিক কার্যক্রম এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার ফলে দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি ও আঞ্চলিক দৃষ্টিভঙ্গিতে গুরুতর পরিবর্তন দেখা দিয়েছে।
পরিবর্তনের শুরু স্পষ্ট হয় যখন ১৭ এপ্রিল, ২০২৫ পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালোচ ঢাকায় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে এক অতি বিরল বৈঠক করেন। গত ১৫ বছরে দুই দেশের মধ্যে এটি প্রথম উচ্চ পর্যায়ের কূটনৈতিক সংলাপ।
এরপর ১ মে, একটি ইউক্রেনীয় Antonov An-124 কার্গো বিমান (নিবন্ধন নম্বর: UR-82027) ঢাকায় অবতরণ করে। বিমানবন্দরে কেবলমাত্র সামরিক সদস্যদের প্রবেশাধিকার ছিল এবং কার্গোর প্রকৃতি গোপন রাখা হয়। বিমানটি পরে কাতারে চলে যায়। কার্গোর প্রকৃতি সম্পর্কে কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি বলেই অনুমানের সুযোগ থেকে যায় যে এসবই কোনো সামরিক পরিকল্পনার ইঙ্গিত।
৩ মে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান কাতারে দুই দিনের সফরে যান। তার সাথে ভ্রমণ করেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গুলাম মহিউদ্দিন আহমেদ, অর্ডনেন্স অর্গানাইজেশন ডিরেক্টর।
সেনাবাহিনীর ফেসবুক পেজ মতে সফরকালে, তিনি কাতারের সামরিক ও বেসামরিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ এবং সামরিক বাহিনী সংশ্লিষ্ট দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার লক্ষ্যে মতবিনিময় করবেন। বিশ্বস্তসূত্র আরো জানা যায় উক্ত সফরে, দুই দেশীয় সামরিক সহযোগিতাই শুধু নয় অবসরপ্রাপ্ত বাংলাদেশী সেনা সদস্যদের কর্মসংস্থান বিষয়ে আলোচনা হয়।
নাটকীয়ভাবে ৫ মে, “অপ্রত্যাশিত কারণে” পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার তাঁদের পূর্ব-নির্ধারিত ঢাকা সফর বাতিল করেন।
এদিকে, ৮ মে, একটি মার্কিন বিমান বাহিনী (USAF) প্রতিনিধিদল ঢাকায় পৌঁছায় কাতার এয়ারওয়েজ ফ্লাইট OR-641 এর মাধ্যমে। প্রতিনিধি দলের মধ্যে ছিলেন সিনিয়র লজিস্টিকস ও অপারেশনাল বিশেষজ্ঞরা, যার মধ্যে ছিলেন টারা লিন অ্যালেক্সান্দ্রিয়া স্ট্রাইডার, মিশন সাপোর্ট কমান্ডার। তারা গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলে অবস্থান করছেন এবং বিশেষ একটি ভারী সামরিক কার্গো ঢাকায় আসার পর তারা চলে যাবেন।
৯ মে তারিখে, পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ কক্সবাজারের কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন এবং স্থানীয় রোহিঙ্গা নেতাদের সঙ্গে জুমার নামাজ আদায় করেন।
উল্লেখযোগ্য যে, হাইকমিশনার মারুফকে বাংলাদেশের ব্যাংক কর্মকর্তাদের মধ্যে জনৈক অল্প বয়সী তরুনী স্টাফের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে ব্যক্তিগত পর্যায়ে দেখা গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কর্মকর্তার সঙ্গে তিনি কক্সবাজারে বেশ কয়েকবার সাক্ষাৎ করেছেন। এটি রাজনৈতিক বা আর্থিক কোনো সম্পর্কের ইঙ্গিত দেয় কিনা, তা নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে।
১০ মে তারিখে, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান ও সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল কামরুল হাসান এক বৈঠকে “মানবিক করিডোর” গঠনের বিষয়ে আলোচনা করেন। বলা হচ্ছে এ বৈঠকের উদ্দেশ্য হতে পারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের একটি সম্ভাব্য রূপরেখা প্রণয়ন। কিন্তু বাস্তবে কি ঘটেছে তা জনগণকে অবহিত করার কোনো দায়িত্ব সরকার গ্রাহ্য করছে না।
১১ মে তারিখে, জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান LANPAC সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য নির্ধারিত যুক্তরাষ্ট্র সফর বাতিল করেন।
এ দিনে, আচমকাই পাকিস্তান হাইকমিশনার মারুফ ঢাকা ত্যাগ করে ইসলামাবাদে ফিরে যান। ভারত-পাকিস্তানের ভেতর চলমান যুদ্ধাবস্থা যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপে বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন অনির্বাচিত সরকার দেশের সবচেয়ে বড়ো ও দীর্ঘ রাজনৈতিক পথ পরিক্রমার মধ্যে বাংলাদেশ রাষ্ট্র নির্মাণে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের ঘোষণা করে।
তার কয়েক ঘন্টা পর নির্বাচন কমিশন দলটিরে রেজিষ্ট্রেশন বাতির করে দিয়ে আগামী নির্বাচনে দলটির অংশগ্রহণের পথ বন্ধ করে দেয়।
১২ মে তারিখে, NSA খলিলুর রহমান এবং লে. জেনারেল কামরুল হাসান আবার বৈঠক করেন, আলোচনায় উঠে আসে মানবিক করিডোর এবং সম্ভাব্য সামরিক লজিস্টিক সহায়তা।
এই ঘটনাগুলোর ধারাবাহিকতা থেকে স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে বাংলাদেশ একটি জটিল কূটনৈতিক সংকটের দিকে এগোচ্ছে। সেই পথে যেতে বাধাস্বরূপ দেশের পাঁচ দশকের ওপর সময় ধরে গড়ে তোলা আভ্যন্তরীন শৃঙ্ক্ষলাকে ধ্বংস করা হয়েছে জুলাই ও অগাস্টে। তারপর থেকে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা বজায় রাখা হচ্ছে আওয়ামী লীগ বিরোধী ও ভারতবিরোধী সেন্টিমেন্টে হাওয়া দিয়ে, ১৯৭১ বিরোধী ইসলামিক স্টেট কামী ও চরমপন্ধী দলগুলোর রাজনীতিকে শক্তিশালী হতে দিয়ে।
জুলাই জাতক ইসলামিস্ট সমর্থিক কিংস পার্ট ও চরমপন্থী ইসলামিক দল ও গোষ্ঠী দিয়ে সেকুলার রাষ্ট্রের পতন ঘটানো হয়েছে। জনগণের অধিকাংশই যেহেতু সেকুলার ও ধর্মীয় সহাবস্থানের পক্ষের, তাদের ওপর ভয়-ভীতি, জীবন, সহায় ও সম্পদ হারানোর মতো নিপীড়ন চালু রাখা হয়েছে।
এ পটভূমিতে আন্তর্জাতিক সামরিক সম্পর্ক এবং সম্ভাব্য আঞ্চলিক সংঘাতের পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদীদের পরিকল্পনা অনুযায়ী, যা বাস্তবায়নের জন্যই বাংলাদেশে রেজিম বদল ঘটানো হয়েছে ও মুহাম্মদ ইউনুসকে নেতৃত্বে বসানো হয়েছে।
ইতিমধ্যে জনগণের বাক-স্বাধীনতা চূড়ান্তভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং গণমাধ্যমকে মুহাম্মদে ইউনুসের শাসনের অনুকূল করতে হাজারের ওপর সাংবাদিককে চারকীচ্যূত, ভয়-ভীতি, মামরার মধ্যে রেখে, ডজনখানেক হাউসকে ভেঙ্গেচুরে দিয়ে অবিশষ্ট মিডিয়া হাউসগুলোকে ইসলামিক স্টেট দল সালাফী জামাত ও - শিবিরের অনুকূলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে । হামলা, মামলা ও সরাসরি ভয় দেখিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
এই পটভূমিতে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ নতুন এক আঞ্চলিক সংকটমুখী পরিস্থিতিতে প্রবেশ করছে এবং এর অনেক কিচুই এই দেশটিকে কেন্দ্র করেই ঘটছে। দেশটির পররাষ্ট্র বিষয়ক নীতির ওপর থাবা বসিয়েছে ১৯৭১ এ পরাজিত পাকিস্তান ও তার এদেশীয় ইসলামিক রাজনীতির ধামাধরা কতিপয় সামরিক-অসামরিক দেশী ্র প্রবাসী, এমন কি বহুদূর থেকে পেছনে কলকাঠি নাড়ছে আরেকটি মুসলিম দেশ। ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন ও উত্তর আমেরিকার কথা বলাই বাহুল্য।
জাতিসঙ্ঘের সক্রিয় অংগ্রহণেই এসব ঘটছে। দেশের সতের কোটি মানুষের সাথে এ নিয়ে সরকার আলোচনা করেছে কি না সে বিষয়কে জাতিসংঘ গ্রাহ্য করছে বলে কোনও সংবাদ পাওয়া যায় নি।
সরকারের পক্ষ থেকে এসব বিষয়ে বিস্তারিত কোনো সরকারি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়নি।
সূত্র: পত্র-পত্রিকার খবর