Posts

গল্প

নিশাপুরের আম

May 23, 2024

জাহিদুল ইসলাম সবুজ

111
View
নিশাপুরের চারদিকে বাঁশঝাড় আর ভুট্টা খেত। উঁচুনিচু কিছু অনাবাদী জমি। দুয়েকটা ছোটোবড়ো পুকুর। আর পুকুরপাড়ে অনেক অনেক পেঁপে গাছ। মাছেরাও মাঝেমধ্যে লাফিয়ে উঠে। আবার একটু দূর তবু দূর নয় বা পাশেই বলা যায় এক নদী। নদীতে ট্রলারে পার হচ্ছে অতিরিক্ত যাত্রী। নদীতেও উত্তাল ঢেউ সমুদ্রের কাছাকাছি । এসব দেখতে যত আনন্দ তারচেয়ে বেশি আনন্দ নিশাপুরের বাঁশবাগান। ছাত্র-শিক্ষক, আবালবৃদ্ধ সবাই এখানে জড়ো হয়েছে। এখানে সবাই এসেছে মদ গাঞ্জা বা আর যতরকম নেশাপানি আছে খেতে। 
এখানে নেই তো কোনো বাঁধা। নেই শাসন। নেই কোনো মানা। একটা দিন উৎসবের মতো করে সবাই এসে এখানে নেশা করে । যথারীতি আমিও গেলাম সেখানে। ইয়া বড় বোতলে মদ নিয়ে আসছে এক ফেসবুক সেলেব্রিটি । আমাকে অফার করল মদের । আমি খাচ্ছিলাম পপারস চিপস। আমি অফার গ্রহণ না করে আপন মনে শুনতে লাগলাম গান কিংবা অগান কিছু। 
মদ আর গাঞ্জা খাওয়ার পর সবার খিদে লাগল। অপু অথবা অপি সেই ফেসবুক সেলেব্রিটিকে দেখিয়ে বলল যে, তার ভাতের হোটেল আছে। সেলেব্রিটি কোনোরকম ধুনোমুনো না করে জিজ্ঞেস করল, ‘টাকা আছে?’
আমার সাথের সবাই একবাক্যে জবাব দিল,'না'। তখন সেই ফেসবুক সেলেব্রিটি বলল যে আমি তো শশুর বাড়িতে থাকি। আর দোকানও শশুরের । এমনভাবে এত মানুষকে ফ্রিতে খাওয়ালে নানান কথা শুনতে হবে। এও শুনতে হবে ,'কাগো লগে মিশো তুমি'র মতো খোটা। একটা আমগাছের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আমার এক বন্ধু ঢিল ছুঁড়ে আম পারল। কিন্তু আমে পোকা । পেছন থেকে সেই সেলেব্রিটি বলল, ঢিল দিয়ে আম পাড়লে আমে পোকাই থাকে। উনি একটা লাঠি যোগাড়করে গুনে গুনে পাঁচটা আম পারল । আশ্চর্য রকমের এক সত্য ঘটনা ঘটল। একটা আমেও পোকা পাওয়া গেল না। আমি মনে মনে ভাবলাম শালা এ জন্যই তুমি ফেসবুক সেলেব্রিটি । 'এই আম যে পারলেন শশুর আপনাকে মারবে না' আমি বললাম। সেলেব্রিটি লজ্জা পেয়ে গেল। বলল আপনারা এত লাইক কমেন্ট করেন একটা আমও যদি খাওয়াতে না পারি তাইলে ক্যামনে। 
আমি হাসতে হাসতে অলক্ষ্যে কাদাপানিতে ফেলে দিলাম আমার বাম পা । অস্বস্তি লাগা শুরু হলো। 
মনে হতে লাগল দ্রুতই পার হতে হবে নদী। আম খাওয়ার পরপরই মাথা কেমন ঝিম ধরে গেল। নদীর ওপাড় নাকি এপাড় আমার বাড়ি ভুলে গেলাম। আর এও মনে হওয়া শুরু হলো আমার কোনো বাড়িই নেই। কিন্তু মনে হচ্ছিল নদী পাড় হলেই এর সমাধান পাবো। 
ট্রলারে এত বেশি মানুষ উঠছে যে সাহস হচ্ছে না আমার। মনে হচ্ছে কিছুদূর গেলেই ডুবে যাবে । কিংবা সবাই মূলত স্বেচ্ছায় ডুবে যাওয়ার জন্যই উঠছে। আমার কাছে জীবনের নানান গুরুত্ব ভাসতে লাগল।
আমি তো কিছুই হতে চাই না। কিন্তু মনে হচ্ছিল কিছু না হতেও একটা জীবন থাকা দরকার। মৃত্যুর পর আমি নিশ্চিত না আবার জাগব কি না। কিংবা কুত্তা বিলাই বা ধানশালিক হয়ে ফিরতে পারব? সময় চলে যায়, চলে যাচ্ছে। এই চলে যাওয়াটা দেখতে হবেই। সমুদ্রের বেলাভূমিতে গভীর রাতে সবাই যখন ঘুমিয়ে যাবে। চোর ডাকাত, এমনকি লালকাকড়ারাও তখন প্রেমিকার বুকে মাথা রেখে লেখতে হবে অমর এক কবিতা। করতে হবে মাস্টারবেশন মহাকাশ ভ্রমণে। মরে গেলে কিছুই হবে না এর। 
হঠাৎ খেয়াল করলাম পকেটে ফোন নাই। তখন সন্দেহ হতে লাগল আমার বেঁচে থাকা নিয়ে। মনে হলো আমি মারা গেছি। জীবিত থাকলে নিশ্চয়ই আমার পকেটে ফোন থাকত। হারিয়ে ফেললাম কি না এমন এক সন্দেহের বেশে আর একটু ফোনের খোঁজ নিতে একজনকে বললাম আপনার ফোন থেকে আমার নম্বরে  একটা ফোন দিবেন, ফোনটা খুঁজে পাচ্ছি না। যাকে বললাম সে হেসে চলে গেল। লজ্জা পেলাম। মানে কী সামান্য ভদ্রতাটুকুও কি প্রাপ্য ছিলাম না। হাসির রহস্য কী? ভদ্রবেশে এই লোক কি পাগল কোনো? নাকি ইতরবিশেষ । পুরনো লজ্জা ভুলে আরেকজনকে বললাম, আমাকে একটা ফোন দিবেন। সে হেসে দিলেও বলল একটা কথা , 'নতুন নাকি'? হোয়াট দ্য ফাউ কথা। কিছুই তো বুঝতে পারছি না। তৃতীয় জনের কাছে উত্তর জেনে আরও অবাক হলাম। সে বলল ফোন আবার কী জিনিস। কীসব আবোলতাবোল বকছেন । আমার কাছে তখন তিনটা বিষয় গোলমেলেভাবে আঘাত করতে লাগল। এক মনে হচ্ছিল যে আমি মারা গেছি। দুই হয়তো আমি মস্তিষ্কে ভ্রমণ করছি। তিন কেউ হয়তো টাইম মেশিনে চড়িয়ে দিয়ে আমাকে ভীষণ দূর অতীতে পাঠিয়ে দিয়েছে। 
রাগে একটা চিৎকার দিয়ে মাটিতে শুয়ে পড়লাম। শুয়ে অজ্ঞান হয়ে গেছিলাম। জ্ঞান ফেরার পর দেখলাম একটা বিশাল পাহাড়ের উপর রোদের এক হাটে ঘেমেঘুমে একাকার। পাশে প্রেমিকা রাগে গজগজ করছে আর বলছে এতটুকুতেই হাঁপিয়ে যাও তবে কেন এলে এখানে। বালামার সব আয়োজন বৃথা সব আনন্দ মাটি হলো। তোমার সাথে জীবনে আর কোথাও যাব না। 




Comments

    Please login to post comment. Login