Posts

চিন্তা

নারীর যৌনতাকে সম্মান করো

May 14, 2025

Ajmain Rashid Enan

114
View

প্রায়সই আমরা বলে থাকি পুরুষের যৌনতাকে সম্মান করো। পুরুষের যৌনতা আছে বলেই তোমার জন্ম হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ইদানিং এমন পোস্ট অহরহই দেখা যাচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো নারী কি আদো পুরুষের যৌনতাকে অসম্মান করেছে? নারী কি পুরুষের যৌনতাকে চরিত্রহীনতা সম্ভাষিত  করে কোন সাহিত্য রচনা করেছে? নিজের স্বামী পরের সাথে অনিয়ন্ত্রিত সম্পর্ক করেছে তারপর ক্ষমা প্রার্থনা করেছে আর সে ক্ষমা করে তার যৌনতার প্রতি সম্মান দেখায় নি,এমন ঘটেছে? নারীজাতির সদস্যগণ পুরুষজাতির সদস্যগণের অংশবিশেষের  দ্বারা ধর্ষিত হয়েও তারা কি পুরুষ জাতির আর তার যৌনতার প্রতি শ্রদ্ধা দেখায় নি? তাদের উপর আস্থা রাখে নি? কোন নারীর থেকে প্রত্যাক্ষিত কোন পুরুষ পুরো নারীজাতিকে এ হেতুতে যে দোষী সাব্যস্ত করেছে, নারী কি বিপরীতক্ষেত্রে তা করেছে? আপনি হয়তো এর বিপরীতে কিছু দৃষ্টান্ত দেখাতে পারেন কিন্তু তা পুরুষের দৃষ্টান্তের চাইতে কেবল সিকি-আধুলিই হবে।
কিন্তু নারীর যৌনতার উপর কি পুরুষজাতি এবং নারীজাতিরও একটি অংশ কি সম্মান রাখতে পেরেছে? নারীকে তার যৌনতার জন্য চরিত্রহীন সম্ভাষন করা হয়েছে। তার যৌনতার জন্য তার মাতৃত্ব, তার স্ত্রীত্ব,তার সন্তানত্বকেও অসস্মান করা হয়েছে? বলা হয়েছে সে এসবকে ও এ সমাজকে ধ্বংস করেছে? তাই যে আবেগকে দেখিয়ে পুরুষের যৌনতাকে সম্মান করো বলা হয়েছে, সে আবেগ দ্বারা প্রকৃতপক্ষে মানবজাতির সমগ্রতার, সৃষ্টার সৃষ্টির সমগ্রের যৌনতাকে সম্মান কর হয়ে উঠে না, এতে কেবল পুরুষের অনিয়ন্ত্রিত যৌনতাকেও আবেগের দ্বারা ন্যায্যতা প্রতিপাদনের চেষ্টা করা হয়। 

ইতিহাসে নারীর অধস্তন অবস্থা কবে থেকে কীভাবে  সূচনা হয়েছে তা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। আদি কাল থেকেই ধর্মীয় বিভিন্ন কেতাবি ব্যাখ্যায় সৃষ্টির সূচনা পর্যায় থেকেই এ নারীর এ অধস্তন অবস্থার কথা উল্লেখ রয়েছে। তবে এ ধারণার কিছু পরিবর্তন লক্ষ্যণীয় হয় পূর্ববর্তী ইতিহাস পর্যালোচনায়। সেখানে পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার মতো নারীতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার প্রভাব ও অবস্থান ততটা তীব্রভাবে দেখা না গেলেও তখন নারীদের আত্মপ্রত্যয়ী ও শৃংখলমুক্ত অবস্থান ছিল। ভাস্কর শিল্পী মারলিন স্টোন বিশ্বব্যাপী ঘুরে এবং প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সকল ধর্মের উদ্ভবের আগের সময়ের মূর্তিগুলো পরীক্ষা করে দেখেন যে সে সময়কার প্রায় সকল মূর্তিই ছিল নারী মূর্তি। খ্রিষ্টপূর্ব ২৫ হাজার বছর আগেও পুরুষেরা নারীর সৌন্দর্য  প্রতি আকৃষ্টতা থেকে ঈশ্বররূপে নারীমূর্তিকে কল্পনা করতেন।[বই-হোয়েন গড ওয়াজ এ ওমেন ]
৫০০ খ্রিষ্টাব্দে নারী-ঈশ্বর মন্দির ভা'ঙ্গার এবং ওল্ড টেস্টামেন্ট নারীমূর্তি পুজার উপর বি'ষাদগার থেকে পুরুষের আধিপত্যের বিকাশ লক্ষ্য করা যায়। এরপর ঈশ্বরের লিঙ্গের পরিবর্তন দেখা যায় নারীরূপমূর্তির স্থলে পুরুষরূপমূর্তির অবির্ভাব ঘটে। পুরুষের আধিপত্য সৃষ্টির সেই কালে প্রচুর র'ক্তাক্ত ও নির্মম ঘটনার মধ্য দিয়ে নারীকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। এরপর থেকে দাস, ভুমিদাস,নারী, শ্রমিক, নিম্মবর্গের মানুষকে শাসকশ্রেণী  আত্মস্বার্থের তাগিদে দমন করে তাকে সভ্যতা ও অগ্রগতির স্বার্থে প্রয়োজন বলে প্রতিষ্টা করে। ধীরে ধীরে দেবী থেকে নারীকে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করা হয় ডাইনী হিসেবে। কেবল ডাই'নী অ্যাখ্যা দিয়ে হ'ত্যা করা হয় ১ কোটি নারীকে( সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য সংখ্যা ৬০ লাখ)। যুদ্ধব্যতীত পৃথিবীর ইতিহাসে নারী হত্যাই সবচেয়ে বড় গণ'হ'ত্যার ইতিহাস।

Comments

    Please login to post comment. Login