Posts

প্রবন্ধ

জান্নাত ও জাহান্নাম কি। জানতে হলে পড়তে থাকুন।

May 16, 2025

Golam Kibria

99
View

জান্নাত ও জাহান্নাম ইসলামী বিশ্বাসে পরকালীন জীবনের চূড়ান্ত পরিণতি। কুরআন ও হাদিসে এদের বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে, যা মানবজাতিকে সঠিক পথের অনুসরণে উদ্বুদ্ধ করে।

### জান্নাত: স্বর্গের মহিমা  
জান্নাত (আরবি: جَنَّة) হলো আল্লাহর নেক বান্দাদের জন্য প্রস্তুত চিরস্থায়ী সুখের আবাস। কুরআনে একে “জান্নাতুল ফিরদাউস” (সুরা আল-কাহফ, ১৮:১০৭), “জান্নাতুন নাঈম” (সুরা আল-মায়িদা, ৫:৬৫) প্রভৃতি নামে উল্লেখ করা হয়েছে। এর বর্ণনায় রয়েছে—নদীপ্রবাহিত উদ্যান, স্বর্ণ-রৌপ্যের প্রাসাদ, স্বচ্ছ ঝর্ণা, এবং নানাবিধ সুস্বাদু ফল (সুরা আর-রাহমান, ৫৫:৪৬-৭৬)। জান্নাতবাসী শান্তি, সম্মান ও ঐশ্বর্য ভোগ করবে, যেখানে কোনো ক্লান্তি, রোগ বা হতাশা থাকবে না (সুরা আল-ওয়াকিয়াহ, ৫৬:২৫-৪০)।  

মুমিনদের জন্য জান্নাত লাভের শর্ত হলো তাওহিদে বিশ্বাস, নবীর প্রতি আনুগত্য, নামাজ-রোজা-জাকাত-হজ্জ পালন, এবং নৈতিক জীবনযাপন। আল্লাহ বলেন, “যে ব্যক্তি সৎকর্ম করে এবং মুমিন হয়... তার জন্য জান্নাত রয়েছে” (সুরা ত্বহা, ২০:৭৫-৭৬)। হাদিসে জান্নাতের স্তর বর্ণিত হয়েছে, যেখানে সর্বোচ্চ স্তর “ফিরদাউস” (সহিহ বুখারি, ২৭৯০)।

### জাহান্নাম: নরকের ভয়াবহতা  
জাহান্নাম (আরবি: جَهَنَّم) হলো কুফর, শিরক ও পাপাচারের শাস্তিস্থল। কুরআনে একে “লাজা” (সুরা আল-মাআরিজ, ৭০:১৫), “হুতামা” (সুরা আল-হুমাজাহ, ১০৪:৪-৫) ইত্যাদি নামে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর আগুনের তীব্রতা, ধোঁয়া ও গর্জন (সুরা আল-মুলক, ৬৭:৭-৮) এবং শাস্তির বিবরণে রয়েছে—পুঁজ পান, লোহার কশাঘাত, ও চিরন্তন যন্ত্রণা (সুরা আল-হাজ্জ, ২২:১৯-২২)। জাহান্নামিরা অনুতপ্ত হবে, কিন্তু তখন মুক্তি অসম্ভব (সুরা আল-মুনাফিকুন, ৬৩:১০-১১)।  

জাহান্নামের কারণ হলো আল্লাহ ও রাসুলের অবাধ্যতা, অহংকার, জুলুম ও নৈতিক পতন। আল্লাহ সতর্ক করেন, “নিশ্চয়ই যারা সীমা লঙ্ঘন করে ও দুনিয়ার জীবনে ভোগ-বিলাসে মত্ত হয়, আমি তাদের জাহান্নামে নিক্ষেপ করব” (সুরা মারিয়াম, ১৯:৫৯-৬০)। হাদিসে জাহান্নামের সাতটি দরজার উল্লেখ রয়েছে (সহিহ বুখারি, ৩৩৩০)।

### বিশ্বাসের তাৎপর্য  
জান্নাত ও জাহান্নামের ধারণা মুমিনের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে। এটি তাকওয়া (আল্লাহভীতি) ও রহমতের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে। একদিকে, জান্নাতের আশা মানুষকে সৎকর্মে উদ্দীপিত করে; অন্যদিকে, জাহান্নামের ভয় পাপ থেকে বিরত রাখে। কুরআনে বলা হয়েছে, “তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমা ও সেই জান্নাতের দিকে ধাবিত হও, যার প্রশস্ততা আসমান ও জমিনের সমান” (সুরা আল-ইমরান, ৩:১৩৩)।  

### উপসংহার  
জান্নাত ও জাহান্নামের বিবরণ ইসলামী বিশ্বাসের কেন্দ্রবিন্দু। এগুলি কেবল শাস্তি ও পুরস্কারের স্থান নয়; বরং আল্লাহর ন্যায়বিচার ও রহমতের প্রকাশ। মুমিনের কর্তব্য হলো দুনিয়াকে পরীক্ষার স্থান হিসেবে বিবেচনা করে সৎপথে চলা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “জান্নাত কষ্টের আবরণে ঢাকা আর জাহান্নাম ভোগের আবরণে ঢাকা” (সহিহ মুসলিম, ৭১৫৮)। সুতরাং, ইহকালীন কর্মের মাধ্যমেই পরকালীন সাফল্য নির্ধারিত হয়।

Comments

    Please login to post comment. Login

  • Golam Kibria 6 months ago

    আখেরাত অতি নিকটে