Posts

প্রবন্ধ

কেয়ামতের আলামত ও ইমাম মাহদী আ আগমন।।

May 16, 2025

Golam Kibria

108
View

**কেয়ামতের আলামত ও ইমাম মাহদী (আ.)-এর আগমন**  
ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী, কেয়ামত বা মহাপ্রলয় হলো আল্লাহ তাআলার নির্ধারিত সেই ভয়াবহ দিন, যখন সমগ্র সৃষ্টিজগতের সমাপ্তি ঘটবে এবং সবাইকে মহান বিচারকের সামনে উপস্থিত হতে হবে। কেয়ামত সংঘটিত হওয়ার পূর্বে কিছু নিদর্শন বা আলামত প্রকাশ পাবে, যা সম্পর্কে কোরআন ও হাদিসে বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ইমাম মাহদী (আ.)-এর আবির্ভাব। তাঁর আগমন কেয়ামতের অন্যতম প্রধান আলামত হিসেবে বিবেচিত হয়।

### কেয়ামতের আলামত: সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা  
কেয়ামতের আলামতকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়: **ছোট আলামত** ও **বড় আলামত**। ছোট আলামতগুলো ধারাবাহিকভাবে সমাজে প্রকাশ পাবে। যেমন—নৈতিক অবক্ষয়, অজ্ঞতার প্রসার, যিনা-ব্যাভিচারের ব্যাপকতা, সন্তান কর্তৃক মাতা-পিতার অবাধ্যতা, মিথ্যা ও বিশ্বাসঘাতকতার প্রাদুর্ভাব ইত্যাদি। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, “সময় সংকুচিত হয়ে আসবে, রক্তপাত সাধারণ ঘটনায় পরিণত হবে, এবং সম্পদের প্রাচুর্য থাকা সত্ত্বেও মানুষের মনে নিরাপত্তাহীনতা বিরাজ করবে” (সহিহ বুখারি)।  

অন্যদিকে, **বড় আলামত**গুলো হবে অতিপ্রাকৃত ও চূড়ান্ত। যেমন—দাজ্জালের আবির্ভাব, ইমাম মাহদী (আ.)-এর আগমন, হযরত ঈসা (আ.)-এর পৃথিবীতে পুনরাগমন, ইয়াজুজ-মাজুজের বেরিয়ে আসা, সূর্য পশ্চিম দিকে উদিত হওয়া ইত্যাদি। এগুলোর পরই কেয়ামত সংঘটিত হবে।

### ইমাম মাহদী (আ.)-এর ভূমিকা ও পরিচয়  
ইমাম মাহদী (আ.) হলেন শেষ যুগের একজন ন্যায়পরায়ণ নেতা, যিনি ইসলামী শরিয়তের পুনরুজ্জীবন ঘটাবেন। তিনি হবেন রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বংশধর, বিশেষত হযরত ফাতিমা (রা.)-এর বংশে জন্মগ্রহণকারী। তাঁর নাম হবে মুহাম্মাদ (বা আহমাদ), এবং উপাধি হবে “মাহদী” (হিদায়াতপ্রাপ্ত)। হাদিসে উল্লেখ আছে, “মাহদীর আগমন ঘটবে যখন পৃথিবী জুলুম ও অনাচারে পূর্ণ হয়ে যাবে। তিনি এটিকে ন্যায় ও ইনসাফে পরিপূর্ণ করবেন” (সুনান আবু দাউদ)।  

তিনি মক্কায় আবির্ভূত হয়ে বিশ্বব্যাপী ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা করবেন এবং দাজ্জালের বিরুদ্ধে যুদ্ধে হযরত ঈসা (আ.)-কে সহযোগিতা করবেন। তাঁর শাসনামলে সমাজে শান্তি ও সমৃদ্ধি বিরাজ করবে। মানুষ নৈতিক ও আধ্যাত্মিক উৎকর্ষতা লাভ করবে।

### কেয়ামতের সাথে সংযোগ  
ইমাম মাহদী (আ.)-এর আবির্ভাব কেয়ামতের বড় আলামতগুলোর সূচনা করবে। তাঁর শাসনকাল শেষে দাজ্জালের উপদ্রব শুরু হবে, যা ঈসা (আ.)-এর হাতে পরাজিত হবে। এরপরই অন্যান্য আলামত প্রকাশ পাবে। যেমন—পৃথিবীর ধ্বংসপ্রাপ্তি, সমস্ত প্রাণীর মৃত্যু এবং তূর পর্বত থেকে ফুঁৎকারের মাধ্যমে পুনরুত্থান। এভাবে ইমাম মাহদীর আগমন কেয়ামতের পথ প্রস্তুত করবে।

### উপসংহার  
কেয়ামতের আলামত সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা প্রতিটি মুমিনের ঈমানি দায়িত্ব। ইমাম মাহদী (আ.)-এর আগমনের প্রতীক্ষায় থাকার অর্থ হলো অন্ধ বিশ্বাস নয়; বরং ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করা। আমাদের কর্তব্য হলো, ফিতনা ও পাপ থেকে দূরে থাকা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে অবিচল থাকা। মনে রাখতে হবে, কেয়ামতের আলামত শুধু ভবিষ্যদ্বাণী নয়—এগুলো হলো মানবজাতির জন্য সতর্কবার্তা ও আধ্যাত্মিক প্রস্তুতির আহ্বান।

Comments

    Please login to post comment. Login

  • Md Alauddin 6 months ago

    এরকম প্রবন্ধ ভালো লাগে