Posts

প্রবন্ধ

গ্যাস্ট্রিক ও পেটের অসুখ থেকে বাঁচার উপায়

May 16, 2025

Golam Kibria

91
View

**গ্যাস্ট্রিক ও পেটের অসুখ থেকে বাঁচার উপায়**  
আধুনিক জীবনযাত্রা, অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, এবং মানসিক চাপের কারণে গ্যাস্ট্রিক ও পেটের নানা রোগ এখন সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গ্যাস-অম্বল, বদহজম, অ্যাসিডিটি, পেটব্যথা, বা আলসার থেকে রক্ষা পেতে সচেতনতা এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা অত্যন্ত জরুরি। এখানে এমন কিছু কার্যকরী উপায় আলোচনা করা হলো, যা অনুসরণ করে আপনি এসব অসুখ থেকে মুক্ত থাকতে পারেন।

### **১. সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন**  
পেটের সমস্যার মূল কারণ হলো অস্বাস্থ্যকর খাবার ও অনিয়মিত খাওয়ার রুটিন। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে খাবার খান এবং অতিরিক্ত তেল-মসলাযুক্ত, ভাজাপোড়া, বা মশলাদার খাবার এড়িয়ে চলুন। গ্যাস তৈরি করে এমন খাবার যেমন: ডাল, রাজমা, ফুলকপি, পেঁয়াজ, বা কার্বনেটেড ড্রিংকস কম খান। প্রতিবার খাবার ভালো করে চিবিয়ে খান; তাড়াহুড়ো করলে হজমে সমস্যা হয়। সকালের নাস্তা কখনো বাদ দেবেন না এবং রাতের খাবার ঘুমানোর কমপক্ষে ২-৩ ঘণ্টা আগে সেরে ফেলুন। এছাড়া, পর্যাপ্ত পানি পান করুন (দিনে ৮-১০ গ্লাস), কিন্তু খাওয়ার ঠিক আগে বা পরে বেশি পানি নয়। প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ দই বা ঘরে তৈরি ফার্মেন্টেড খাবার হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।

### **২. জীবনযাত্রায় আনুন ইতিবাচক পরিবর্তন**  
শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা ও অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস পেটের অসুখের ঝুঁকি বাড়ায়। নিয়মিত হালকা ব্যায়াম, যোগাসন, বা হাঁটাহাঁটি করুন—এটি হজমে সহায়তা করে এবং স্ট্রেস কমায়। ধূমপান ও মদ্যপান সম্পূর্ণ বর্জন করুন, কারণ এগুলো গ্যাস্ট্রিক মিউকোসাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণেও সচেষ্ট হোন; মেডিটেশন বা শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম চর্চা করুন। পর্যাপ্ত ঘুম (৭-৮ ঘণ্টা) শরীরের বিপাক প্রক্রিয়া সচল রাখে।

### **৩. স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন**  
খাওয়ার আগে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, খাবার ঢেকে রাখা, এবং বাইরের অস্বাস্থ্যকর খাবার এড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাস্তার খোলা খাবার বা পানি থেকে ব্যাকটেরিয়া-ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে, যা ডায়রিয়া বা ফুড পয়জনিংয়ের কারণ হয়। ফল ও শাকসবজি ভালোভাবে ধুয়ে রান্না করুন। বাসি খাবার খাবেন না এবং ফ্রিজে রাখলেও তা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবহার করুন।

### **৪. ওষুধের ব্যবহারে সতর্কতা**  
ব্যথা বা গ্যাসের সমস্যা হলেই নিজে থেকে অ্যান্টাসিড বা ব্যথানাশক ওষুধ খাবেন না। এগুলো দীর্ঘদিন ব্যবহার করলে কিডনি বা লিভারের ক্ষতি হতে পারে। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ সেবন করবেন না। যদি ঘনঘন পেটে সমস্যা হয়, তাহলে গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্টের শরনাপন্ন হোন। এন্ডোস্কোপি বা ব্লাড টেস্টের মাধ্যমে আলসার, গ্যাস্ট্রাইটিস, বা এইচ. পাইলোরি ইনফেকশন শনাক্ত করে চিকিৎসা নিন।

### **৫. প্রাকৃতিক উপায়ে প্রতিকার**  
কিছু ঘরোয়া উপায়েও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। যেমন: খাওয়ার পর এক চিমটি অ্যাজওয়াইন বা জিরা চিবানো, আদা-লেবুর রস খাওয়া, বা গরম পানিতে মধু মিশিয়ে পান করা। এছাড়া, তুলসি পাতা বা পুদিনার রস অ্যাসিডিটি কমাতে সাহায্য করে।

### **উপসংহার**  
গ্যাস্ট্রিক ও পেটের রোগ প্রতিরোধে সচেতনতাই প্রধান হাতিয়ার। স্বাস্থ্যকর খাবার, নিয়মিত ব্যায়াম, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, এবং চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ—এই চারটি স্তম্ভ মেনে চললে পেটের জটিলতা থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব। মনে রাখবেন, সুস্থ শরীরের ভিত্তি হলো সুস্থ পেট। তাই আজ থেকেই নিজের যত্ন নিন এবং অসুখের আগেই প্রতিরোধ গড়ে তুলুন।

Comments

    Please login to post comment. Login