পেটুক পিংকুর বিপদ 19 may 2025
লেখকা: Raisa Chowdhurani
শব্দসংখ্যা: প্রায় ২০০০
চাটগাঁর এক ছোট্ট গ্রামে থাকত পিংকু নামের একটা বাচ্চা ছেলে। বয়স হবে আট কি নয়। কিন্তু এই ছেলেটার একটা দারুণ সমস্যা ছিল—সে শুধু খেতে আর খেতে ভালোবাসত! খাওয়ার কথায় তার চোখ চকচক করত, মুখে পানি এসে যেত। কেউ বই দিলে বলত, “পেটে পড়বে না তো!” কেউ বলত খেলতে, সে বলত, “খেলা দিয়ে পেট ভরে না!”
তার মা খুব চিন্তায় থাকত। “এই ছেলেটা যদি স্কুলের বইয়ের দিকে একবার তাকাত, যতটা না সে মিষ্টির দোকানের দিকে তাকায়!”
পিংকুর সবচেয়ে প্রিয় জায়গা ছিল গ্রামের বাজারের মোড়ে থাকা মোটা কালুর মিষ্টির দোকান। কদমা, জিলাপি, রসগোল্লা, সন্দেশ—যেন সব স্বর্গীয় খাবার! পিংকুর চোখে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় স্বপ্ন ছিল একদিন সেই দোকানটা কিনে নেওয়া।
এক অদ্ভুত সুযোগ
একদিন পিংকু বাজারে গিয়ে দেখে, কালু কাকার দোকানের সামনে লোক জড়ো হয়ে আছে। কাছে গিয়ে শুনল, কালু কাকা ঘোষণা দিচ্ছেন—
“আজ আমার দোকানের ২৫ বছর পূর্তি। তাই এক বিশেষ প্রতিযোগিতা—যে সবচেয়ে বেশি মিষ্টি খেতে পারবে, তাকে আমি এক বছরের জন্য ফ্রিতে মিষ্টি খাবার সুযোগ দেব!”
পিংকুর চোখ চকচকিয়ে উঠল! সে যেন আকাশের চাঁদ পেয়ে গেছে। এমন সুযোগ জীবনে একবার আসে!
প্রতিযোগিতা শুরু
পরের দিন প্রতিযোগিতা। বড় বড় লোকজন এসেছে—মোটা মোটা চাচারা, কিছু গম্ভীর ছাত্র, এমনকি পাশের গ্রামের খাদেম কাকাও এসেছে (যার পেট নাকি ড্রামে মাপা লাগে)।
তবে কেউ পিংকুর মত উৎসাহ নিয়ে আসেনি। সকাল ১০টায় খেলা শুরু।
প্রথম রাউন্ড—১০টা রসগোল্লা। পিংকু খেল এক নিঃশ্বাসে।
দ্বিতীয় রাউন্ড—৮টা বড় জিলাপি। হুঁশ নেই, গপগপ করে গিলে খেল।
চতুর্থ রাউন্ডে খাদেম কাকা খেতে খেতে হঠাৎ “ঢাঁশ!” করে পড়ে গেলেন। কেউ কেউ উঠে দাঁড়াল, কেউ বলল, “আমার হয়ত ডায়াবেটিস হয়ে যাবে!”
কিন্তু পিংকু চলছে একেবারে ঘোড়ার মত! তার মুখে তখনও হাসি। পেট ফুলছে, তবুও সে রুকছে না।
বিপত্তি
শেষ রাউন্ডে, কালু কাকা দিলেন এক বিশাল বাটি ক্ষীরের সাথে ২০টা সন্দেশ। সবাই বলল, “এটা কেউই পারবে না।”
কিন্তু পিংকু তো পিংকুই! সে একে একে খেতে লাগল—১, ২, ৩… ১৫… ১৯…
বিকট একটা শব্দ হল—“ঢুকুড়ঢুকুড় ঢুঁক!”
সবাই তাকিয়ে দেখে পিংকু উল্টে পড়ে গেছে। পেট এমন ফুলেছে, মনে হচ্ছে কেউ বলের মত ফোলায় দিয়েছে। মুখে চুপচাপ আরেকটা সন্দেশের টুকরা। সে কাঁদছে, “আমি পারব... শুধু একটা… একটুখানি…”
ডাক্তার ডেকে আনা হলো। গ্রামের ডাক্তার বলল, “এই ছেলের পেট এখন চিনির রাজ্য। আরও কিছু খেলে ওর শরীর মিছরির দোকানে পরিণত হবে!”
হাসপাতালে এক সপ্তাহ
পিংকুকে নিয়ে যাওয়া হল হাসপাতালে। ডাক্তারের কড়া নির্দেশ—এক সপ্তাহ শুধু স্যুপ আর পানির উপর থাকবে। কোনো মিষ্টি, না, কিছুই না!
পিংকুর চোখে পানি। হাসপাতালের বেডে শুয়ে সে শুধু একটাই কথা বলত—“জিলাপি, আমি তোমাকে ভালোবাসি, কিন্তু তুমি আমাকে ঠকালে…”
শিক্ষা
সপ্তাহখানেক পর বাড়ি ফিরল পিংকু। এখন সে আগের মত নয়। খেতে চায়, কিন্তু ভাবনা করে। আর সবচেয়ে বড় ব্যাপার—সে এখন স্কুলে ভালো পড়াশোনা করে!
বন্ধুরা জিজ্ঞেস করলে বলে—“জানিস, রসগোল্লা ভালো, কিন্তু বেশি খেলেই বিপদ। জীবনে মিষ্টির পাশাপাশি শিক্ষাও দরকার!”
শেষ কথা
পিংকু এখন বড় হয়ে গ্রামের সবচেয়ে ভালো খাদ্য-বিশেষজ্ঞ। সে বলে, “সুষম খাবার খাও, অতিরিক্ত কিছু ভালো না!”
আর হ্যাঁ, পিংকু এখনো মিষ্টি খায়—তবে সপ্তাহে একদিন, মেপে খায়। কারণ সে জানে, পেট খালি থাকলেও, মগজ ভর্তি থাকা চাই!
শেষ।