Posts

পোস্ট

টাইটানিকের নিঃসঙ্গ নায়িকা — Jenny একটি বিস্মৃত ইতিহাসের কল্পপটভূমি

May 19, 2025

Raisa Chowdhurani

102
View

টাইটানিকের নিঃসঙ্গ নায়িকা — Jenny
একটি বিস্মৃত ইতিহাসের কল্পপটভূমি
শব্দসংখ্যা: প্রায় ২০০০ 


“ইতিহাস তার সব বীরকে মনে রাখে না…
কখনো কখনো, এক বিড়ালও নায়ক হয়ে ওঠে নিঃশব্দে।
যদি মনে পড়ে যায়—একটা লাইক দিয়ো।”
 

১৯১২ সালের এপ্রিল।
সাউদ্যাম্পটনের বন্দর তখন কানায় কানায় পূর্ণ। শত শত যাত্রী, মালপত্র, কর্মী আর সাংবাদিকদের ভিড়ে হট্টগোল পড়ে গেছে। টাইটানিক—বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও আধুনিক জাহাজ—প্রথম যাত্রায় নামছে। কেউ জানত না, এই জাহাজই ইতিহাস হয়ে থাকবে; একদিকে গর্বের, অন্যদিকে সর্বনাশের প্রতীক হয়ে।

জাহাজে উঠছে অভিজাত যাত্রী থেকে শুরু করে নিম্নবর্গের শ্রমজীবী মানুষ। কিন্তু এই ইতিহাসের ছায়ায় আরেকটি ছোট্ট প্রাণ চুপচাপ উঠে পড়ে—একটা বিড়াল। নাম তার Jenny

Jenny ছিল আসলে জাহাজের রান্নাঘরের পোষ্য। অনেক দিন ধরে সে Harland and Wolff শিপইয়ার্ডে থাকত, যেখানে টাইটানিক তৈরি হয়েছিল। শোনা যায়, সেখানকার এক বাবুর্চি Jenny-কে খুব ভালোবাসত এবং টাইটানিক যখন প্রস্তুত হচ্ছিল, তখন সে বিড়ালটিকে সঙ্গে করে জাহাজে তুলে নেয়।

Jenny সাধারণ কোনো বিড়াল ছিল না। রান্নাঘরের কোণায় বসে সে ইঁদুর তাড়াত, মাঝে মাঝে নাবিকদের হাঁটুর ওপর উঠে বসত। তার চোখ দুটি ছিল গভীর, যেন সে মানুষকে বুঝতে পারত। বাবুর্চির ঘরের এক কোনায় সে ঘুমাত, কিন্তু জাহাজ যখন সাগরে চলত, Jenny হেঁটে বেড়াত—মাঝেমাঝে ডেকে উঠে সমুদ্রের দিকেও তাকিয়ে থাকত অনেকক্ষণ।

শুরুটা ছিল নিঃশব্দে

জাহাজ যখন সাউদ্যাম্পটন থেকে নিউইয়র্কের দিকে রওনা হয়, তখন Jenny ছিল সম্পূর্ণ অচেনা এক যাত্রী। কেউ তাকে নিয়ে খবর করত না, কেউ তার ছবি তুলত না। অথচ সেই সময় তার মতো এক বোধশক্তিসম্পন্ন প্রাণী খুব কমই ছিল।

Jenny অদ্ভুত রকম সচেতন ছিল। জাহাজে ওঠার পর সে একদিন এক জায়গায় বসে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। রান্নাঘরের বাবুর্চি অনেক ডাকলেও সে যায় না। চোখ দুটি উন্মুখ হয়ে তাকিয়ে থাকে উত্তরের দিকে—যেদিকে বরফের ভূমি।

একদিন বাবুর্চি মজা করে বলে,
— “Jenny, তুমি বুঝি কিছু আঁচ করছ?”
বিড়ালটা একবার তার দিকে তাকায়, তারপর আবার দৃষ্টি ফেরায় সাগরের দিকে।

বিপদের পূর্বাভাস?

যাত্রার তৃতীয় দিন থেকেই Jenny-র আচরণ অদ্ভুত হয়ে যায়। আগে সে এক জায়গায় শান্তভাবে থাকত, হঠাৎ এখন রান্নাঘর ছেড়ে ঘন ঘন ঘুরে বেড়াতে থাকে। এমনকি এক রাতে জাহাজের এক নাবিক তাকে ডেকে দেখে, সে ৩য় শ্রেণির ডেকের নিচে গিয়ে ছুটোছুটি করছে।

আরও অদ্ভুত ঘটনা ঘটে এক সকালে। Jenny-র চারপাশে আরও ছয়টি ছোট বিড়াল শাবক দেখা যায়। জাহাজে কেউ জানত না Jenny অন্তঃসত্ত্বা ছিল। অথচ এই বিপদের মুহূর্তে তার বাচ্চাগুলি জন্ম নিল—সমুদ্রের বুকেই।

বাবুর্চি বলেন, “এটা তো অশুভ লক্ষণ নয় তো?”
কেউ হাসে, কেউ অবিশ্বাস করে। কিন্তু Jenny-র চোখ তখন আর আগে মতো ছিল না।

১৪ এপ্রিল ১৯১২ — রাত ১১টা ৪০ মিনিট

বরফখণ্ডের সঙ্গে টাইটানিকের সংঘর্ষ। ইতিহাসের পাতায় লেখা সেই ভয়াল মুহূর্ত। চারদিকে হাহাকার, আতঙ্ক, জলমগ্ন ডেক আর ঠান্ডায় জমে যাওয়া বাতাস।

কিন্তু সেই ভয়াবহ সময়েও একজন প্রাণী সম্পূর্ণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজের বাচ্চাগুলিকে কামড়ে কামড়ে টেনে নিচে নামিয়ে আনছিল—Jenny।
তার নখরে গামছা গাঁথা, মাথায় হালকা চুল, চোখে ভয় নয়, বরং স্পষ্ট দায়িত্ববোধ।

একজন নাবিক পরবর্তীতে বলেন,
“আমি দেখেছি বিড়ালটা তার বাচ্চাগুলিকে একে একে নামিয়ে একটা ছোট কাঠের বাক্সের ভেতর রাখছে। মনে হচ্ছিল, সে জানে কী হতে চলেছে।”

আরও একজন জানান, তারা দেখেছিলেন, এক কাজের লোক Jenny ও তার বাচ্চাদের একটি ছোট নৌকায় তুলে দেন। তবে এই তথ্য নিয়ে বিতর্ক রয়েছে, কারণ টাইটানিকের রেসকিউ রেকর্ডে কোনো বিড়ালের কথা উল্লেখ নেই।

Jenny কি বেঁচে ছিল?

এ প্রশ্নের কোনো নিশ্চিত উত্তর নেই। কেউ বলেন, Jenny ও তার বাচ্চারা জাহাজডুবির আগেই অন্য একটি জাহাজে স্থানান্তরিত হয়েছিল, কারণ রান্নাঘরের বাবুর্চি শেষ মুহূর্তে নিজের পরিবারে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং বিড়ালটিকে সঙ্গে নেন।

আবার কেউ বলেন, Jenny জাহাজেই ছিল, এবং শেষ পর্যন্ত তার বাচ্চাগুলিকে রক্ষা করেও নিজে বাঁচতে পারেনি।

কিন্তু যেভাবেই হোক, Jenny এখন টাইটানিকের ইতিহাসে এক নিঃশব্দ কিংবদন্তি। সে কোনো লিস্টে নেই, কোনো স্মারকে তার নাম নেই, কোনো জাদুঘরে তার ছবি নেই।

নিঃসঙ্গ লাইক

আজ ২০২৫ সালে দাঁড়িয়ে, কেউ যদি সোশ্যাল মিডিয়ায় Jenny-র গল্প লেখে, খুব বেশি মানুষ তা দেখেও না, লাইক তো দূরের কথা।
কারণ মানুষ বিখ্যাত যাত্রীদের, ডুবে যাওয়া সোনা-রুপার, অথবা ডাকার ফিল্ম নিয়ে মাতোয়ারা হয়। কিন্তু এক বিড়াল, যে হয়তো অনেকগুলো জীবন বাঁচিয়ে দিতে চেয়েছিল, তার কথা কেউ মনে রাখে না।

Jenny আমাদের ইতিহাসের এক “unsung hero”। যে ভালোবাসা, সাহস, সচেতনতা আর মমতার এক জীবন্ত নিদর্শন হয়ে রয়ে গেছে অজানার গহীনে।

শেষ কথা

“Jenny টাইটানিকের বেঁচে ফেরা প্রথম আত্মা হতে পারত—যদি আমরা তাকে মনে রাখতাম।

Comments

    Please login to post comment. Login