Posts

নন ফিকশন

আফিয়া আইশা বিনতু আয়াছ

May 21, 2025

ওমর ফারুক আশরাফি

153
View

শীতের হালকা কুয়াশায় ঢাকা এক সকালের গল্প এটি—চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার একটি ছোট গ্রাম। এখানেই একদিন জন্ম নেয় এক কন্যাশিশু, নাম রাখা হয় আফিয়া আইশা বিনতু আয়াছ। পিতা আয়াছ উদ্দীন, পেশায় শিক্ষক; মাতা ফারজানা বেগম, গৃহিণী হলেও সাংস্কৃতিক চর্চার দারুণ অনুরাগী। তারা জানতেন না, তাদের মেয়ে একদিন আশেপাশের মানুষদের জন্য অনুপ্রেরণার প্রতীক হয়ে উঠবে।

আফিয়া ছোটবেলা থেকেই কিছুটা আলাদা ছিল। খেলাধুলার ফাঁকে অন্য বাচ্চারা যখন হাসি-তামাশায় ব্যস্ত, আফিয়া তখন বাগানে বসে পাতা ও গাছপালার নাম জানার চেষ্টা করে। বই ছিল তার প্রিয় বন্ধু। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় সে একটি বিজ্ঞান প্রকল্পে অংশ নেয়—বিষয়: “ঘরে ঘরে সবুজ ছায়া।” সে প্রমাণ করে দেয়, পুরোনো বোতল, কাপড় আর রান্নাঘরের ফেলে দেওয়া জিনিস দিয়েও কিভাবে ছাদে বা বারান্দায় ছোট সবজি বাগান গড়ে তোলা যায়। সে ছিল তখন মাত্র আট বছরের শিশু।

তার এই চিন্তা দেখে প্রথমে স্কুলের শিক্ষকরা চমকে যান। পরে উপজেলা বিজ্ঞান মেলায় বিচারকরাও তাকে পুরস্কার দেন "ভবিষ্যতের ভাবুক" হিসেবে।

আফিয়া কেবল পড়াশোনায় নয়, মানবিক গুণেও আলাদা। একদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে সে দেখে, এক ছোট ছেলে রাস্তার পাশে বসে আছে, গায়ে ঠিকমতো কাপড় নেই। সে নিজের টিফিনের খাবার দিয়ে দেয়, তারপর বাসায় ফিরে নিজের সঞ্চয়ের টাকা থেকে ছেলেটির জন্য গরম কাপড় কিনে দেয়। এই ঘটনা আফিয়া কখনো বড় করে বলেনি, কিন্তু সেই পথশিশু একদিন স্কুলে এসে আফিয়ার নাম উচ্চারণ করে কেঁদে ফেলে। তখন সবাই বুঝে যায়, আফিয়া কেবল মেধাবী নয়, তার হৃদয়ও বড়।

২০২৪ সালে, স্থানীয় শিশু ম্যাগাজিন নব কিশোর–এ তার লেখা একটি প্রবন্ধ ছাপা হয়—“আমার গ্রামের দায়িত্ব।” সেখানে সে শাহরাস্তি উপজেলার পরিবেশ, রাস্তার ধুলা, শিশুদের পড়াশোনা, এবং পরিচ্ছন্নতা নিয়ে নিজের মতামত দেয়, কিছু ছোট বাস্তবধর্মী উদ্যোগের প্রস্তাবও রাখে। একজন মাত্র ১০ বছরের শিশু যে এমন বিশ্লেষণধর্মীভাবে নিজ গ্রামকে দেখতে পারে, তা দেখে অনেকেই মুগ্ধ হন।

এখন সে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। সময় পেলে সে পড়ে—পরিবেশবিজ্ঞান, ইতিহাস, এবং শিশুদের বিজ্ঞানবিষয়ক বই। সে চায় বড় হয়ে একজন পরিবেশবিজ্ঞানী হতে, যাতে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে কিছু করতে পারে।

আফিয়া এখনও বড় হয়নি, তার পথ চলা শুরু হয়েছে মাত্র। তবে তার প্রতিটি পদক্ষেপই বলে—এই মেয়েটি সমাজকে বদলাতে পারবে। সে বিশ্বাস করে, ছোট মানুষরাও বড় পরিবর্তন আনতে পারে—শুধু দরকার ইচ্ছা আর নিষ্ঠা।

Comments

    Please login to post comment. Login