Posts

চিন্তা

ইশরাকে উত্তপ্ত রাজনীতি!

May 22, 2025

ফারদিন ফেরদৌস

221
View



বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দেওয়া গেজেটের কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে করা রিট খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। আজ বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। 

আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ইশরাককে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করে গত ২৭ এপ্রিল গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। মেয়র হিসেবে ইশরাকের শপথের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশন থেকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়। চিঠির পরও কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় ইশরাকের সমর্থকেরা আজ পর্যন্ত টানা বিক্ষোভ করেছে। 

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র পদে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে গড়িমসি নিয়ে রাজপথে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। কাকরাইল ও মৎস্য ভবনের আশপাশে গতকাল বুধবার সকাল থেকে আজ পর্যন্ত বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। তাঁরা নির্বাচন কমিশনের কাছে আদালতের রায় অনুযায়ী ইশরাককে দ্রুত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। 

ইশরাক হোসেন গতকাল সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, ‘শপথ অনুষ্ঠানে দেরি করে নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছে। আদালতের রায় কার্যকরের পথে যে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে, তার দায় নির্বাচন কমিশনের।’ 

এদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নির্বাচন কমিশনের ওপর অনাস্থা জানিয়ে মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর বাংলামোটরে এক সংবাদ সম্মেলনে ইসি পুনর্গঠনের দাবি জানায়। এনসিপি নেতাদের দাবি, ‘এই কমিশনের ওপর দেশের মানুষ আস্থা রাখতে পারছে না। নির্বাচনী ব্যবস্থা পুনরুদ্ধারে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন অপরিহার্য।’ 

ঘটনার আরেকটি মাত্রা যোগ হয় যখন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া ও বিএনপি কর্মীদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। বিএনপির অভিযোগ, শপথ অনুষ্ঠান ঠেকাতে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনে লিখিতভাবে আপিলের চাপ দেওয়া হয়েছে।
অপরদিকে বিএনপির রাজনৈতিক অবস্থান ও ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে এনসিপি জানায়, 'বিএনপি একটি জনগণবিচ্ছিন্ন, কৌশলহীন ও আত্মস্বার্থপর রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে।' 

এনসিপি বলছে, রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর অপসারণ কিংবা 'জুলাই ঘোষণাপত্র'-এর মতো যে কোনো জাতীয় রূপান্তরের মুহূর্তে বিএনপি হয় নীরব থাকছে, নয়তো বাধা দিয়েছে। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণার প্রশ্নেও দলটির অবস্থান ছিল অস্পষ্ট। ফলে বিএনপিকে অনেকেই একটি 'পুরনো বন্দোবস্ত রক্ষাকারী' রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে দেখছেন, যারা জনআকাঙ্ক্ষা নয়, কেবল নিজেদের ক্ষমতার এজেন্ডা নিয়ে রাজপথে নামে।' 

এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী এক বিবৃতিতে বলেন, 'বিএনপি এখন ঢাকার মানুষকে অবৈধ নির্বাচনের বৈধতা দিতে জিম্মি করে রেখেছে। একটি মেয়র পদ নিয়েও তারা নাটক করছে। এই দলটি আবারো এক-এগারোর পথে হাঁটতে চায়। তারা বুঝতে পারছে না, পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান হয়েছে। এখন যদি কেউ আরেকটি মাফিয়াতন্ত্র কায়েম করতে চায়, তাহলে দ্বিতীয় অভ্যুত্থান অনিবার্য হয়ে উঠবে।’ 

অথচ সব জল্পনাকল্পনা এক পাশে রেখে আজকের আদালতের রায় বিএনপির পক্ষেই গেল। তরুণ নেতা ইশরাক হোসেনের মেয়র হিসেবে শপথ নিতে আর বাধা রইল না। এমন বাস্তবতায় বিশ্লেষকদের মতে, দেশের রাজনীতিতে বিভাজন আরও গভীরতর হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরও দলগুলোর মধ্যে সহাবস্থান কিংবা জাতীয় ঐকমত্যের কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। নির্বাচন কমিশন, আদালত ও মন্ত্রণালয়গুলোর দ্বৈত ভূমিকা -সব মিলিয়ে রাজনৈতিক সংস্কৃতি আরও অনিশ্চয়তার দিকে যাচ্ছে। 

এনসিপি হুঙ্কার দিচ্ছে, 'জুলাই প্রস্তুতি নিচ্ছে। রাজপথে আবারো দেখা হবে!' এই আহ্বান বাংলাদেশের রাজনীতিকে অনিবার্য এক সংঘাতের দিকে টেনে নিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দেয় কি? খুব শিগগিরই সরকার সমর্থিত দল এনসিপির সাথে বিএনপির বোঝাপড়া শুরু হয়ে যাবে কি? 

লেখক: সাংবাদিক 
২২ মে ২০২৫
 

Comments

    Please login to post comment. Login