Posts

কবিতা

স্ব-নির্বাচিত ৭ | কবিতা

May 23, 2024

অদ্বিত অদ্রি অনন্ত

Original Author অদ্বিত অদ্রি অনন্ত

স্বপ্নপ্রবণ

এই যে, আমার নিকটবর্তী নারীর চিন্তা;
জেনে রাখুন, আমি কল্পনায়ও বিশেষ দক্ষ।

ফ্যান্টাসাইজড মেঘ আমি রাতের বেলায়ও আনতে পারি।
বৃষ্টি যদি দ্যাখেন ; মিরর ইমেজ দেখতে পাবো। আর;
চোখগুলো প্লিজ খোলা রাখবেন, স্বপ্নপ্রবণ দৃষ্টি যাবে।

বৃষ্টি যেদিন নামবে, নাম বলে দেই কাদের কথা ভাববেন?
বারান্দায় এসে দাঁড়ালে সেই সুযোগ হতেও পারে।
কবিতা পড়েন না, কবিতা হয়ে স্বশরীরে
হেঁটে বেড়ান ঢাকা শহরে।
হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ করে
হাঁটা থামাবেন প্লিজ; নতুন কোনো ছন্দ দেওয়া যাবে।

ফ্যান্টাসাইজড দূরত্ব আমি কমায়ে রাখতে পারি
তাই দূরত্বে গেলেও কাছে আসবেন ঠিক।
এই কথাটা মনে রাখবেন।

আজকে ঘুম থেকে উঠবেন, স্বপ্নদৃশ্যের এইসব উদ্ভট কথা
আপনার মনে থাকবে ঠিকই। 

আপনি আমাকে খোঁজার আগেই
এই যে, আমার নিকটবর্তী নারীর চিন্তা;
জেনে রাখুন,

আপনি কল্পনায়ও বিশেষ দক্ষ।

মেঘের বিবাহ

বৃষ্টি-বৃষ্টি গন্ধ, মেঘের শরীরে।
প্রায় সন্ধ্যাবেলা, ঝড়ের গতি বৃদ্ধির দিকে।

মনে পড়ে যায়,
এমনই বৃষ্টিমুখর আধো-সন্ধ্যাবেলায় 
তোমাকে কবুল করেছি, প্রিয়তম মুখ।

এরপর তো অনেক হেঁটেছি, বিশ্রামহীন। 
তুমিও হেঁটেছ, গান গেয়েছ, হোঁচট খেয়ে রাস্তায়—
বলেছ আল্লাহ্পাক আছেন। আমি মনে মনে মেনে নিয়েছি।

পরস্পরের জানালা খুলেছি আমরা। দেখেছি বৃষ্টি তখনও মেঘ।
আর মেঘ, আমাদের সম্পর্কের নাম। আকাশ ঘর-বাড়ি।

তারপর এখন, কেমন বৃষ্টি-বৃষ্টি গন্ধ।
প্রায় সন্ধ্যাবেলা, ঝড়ের গতি বৃদ্ধির দিকে। 

মনে পড়ে যায়,
এমনই বৃষ্টিমুখর আধো-সন্ধ্যাবেলায়,
মেঘের বিবাহ-দিনে

আমরা আমিন বলেছি, সকল সূরার শেষে।

নৌকাডুবি

জুন মাস। তীব্র গরম। অসহ্য সকাল...

ঢাকা শহরে আমার যে ব্যক্তিগত বারান্দা— তার কোলে
একটা শিশু-রোদ বসে আছে।

আমি ঠিক তার পাশে এসে বসলাম আর ভাবলাম
প্রাক্তন সকল বৃষ্টির কথা।
ফলে, একটা বৃদ্ধ-বৃদ্ধ রোদ আমার দিকে ছুঁড়ে দিয়ে দৃষ্টি—
ভাবল শঙ্কার যত মেঘ।

আমি উঠে দাঁড়ালাম। স্ত্রীর পাশে এসে বসলাম।
বললাম চলো ঘুরতে যাই। সে বলল,

জুন মাস। তীব্র গরম। অসহ্য সকাল...

আমি ঠিক সেখানেই দাঁড়িয়ে গেলাম। ভাবলাম—
ফেলে আসা সেই নদীর কথা; যার গায়ে আমরা নৌকা
ভাসিয়েছিলাম—

মধ্যনদীতে ডুববে না ভেবে।

জীবাণুর মতো

পরজীবী হয়ে বাসার ভেতরে হাঁটি।
আয়নার দিকে তাকানোর আগে দশ-বারো বার ভাবি
আমার চেহারা মানুষের মতো কেন?

জীবাণুর মতো জীবনযাপন আমি করি,
মানুষ দেখতে বড় বড় লাগে খুব।
সবার তালে তাল মিলিয়ে
নিজেকে ব্যাঙের সাথে তুলনা করি আমি
আর ভাবি
সঠিক কাজটা করা হল বোধহয়, আমার।

অনাসৃষ্টির ভেতরও সুখের দৃষ্টি থাকে
আমি সেটা জানি। তবে টের পাই না একদমই।
আমার ইচ্ছা করে, ছাদে বসে থেকে
একটা রাস্তায় দেখবো আমার
প্রথম সড়ক দুর্ঘটনা।
আর ভাববো গাড়ির এই চাকাটি ছিল
আমার পরিবারের মতো।

অনেক বড় মাপের
চাকার মতো
আমার পরিবার।

আর আমি জীবাণুর মতো
ব্যাঙের মতো
মানুষ দেখি বড় দৃশ্যে মাঠের মতো অনেকটা,
যেখানে আমি আমার সাথে নিশ্চিন্তে
শুধুই আত্মহত্যা করি
আর ভাবি

সঠিক কাজটা করা হল বোধহয়, আমার।

অযথাই যুবক হওয়া, কায়সার…

কায়সার, আপনি গোলাবারুদের পথে খালি-পায়ে প্রখর রোদ
হেঁটে হেঁটে কই যান ঐখানে কি নির্জন ইগোর পাশে
এসে বসে থাকে কোনো অদ্ভুত লোনলি পারকাশন্‌?

কায়সার, আপনি ঢাকা শহরের পথে জুতা পরা প্রথম কাক
প্রেমে প্রেমে কই যান ঐখানে চায়ের দোকানে নাকি
খালি গায়ে বসে থাকে
প্রেমিকার টেলিপ্যাথি সমেত টেনশন?

কায়সার, আপনি অযথাই অস্থির, কোলাহলে ক্লান্ত

আপনার চাকরি হয়ে যাবে, কায়সার ।।

কায়সার, আপনি পরিবারতন্ত্রে বাধা পড়া জেনেসিস
ভাঙচুর করা শেষে ঐদিকে নাকি দারুণ ফোকাস্‌ড হয়ে
চিৎ হয়ে পড়ে থাকে আপনার লোনলিনেস?

কায়সার, আপনি ইউনিভার্সিটিতে ইউনিটি খোঁজা লোক
গোপনে অ-গোপনে নাকি টিচার্স রুমের দিকে, ঐদিকে, সবদিকে
উঁচা-উঁচা থাকে কিছু বুক-ফোলা পলিটিক্স?

কায়সার, আপনি সঙ্গত-অস্থির, কোলাহলে ক্লান্ত

আপনার চাকরি হবে না, কায়সার ।।

সঙ্গত-অস্থির— কোলাহলে ক্লান্ত— পরিবারতন্ত্র—
কোনোকিছু হবে নাকি হবে না, নিশ্চিত জানি না
তবে ক্লান্তিতে-অবসাদে হলেও হতে তো পারে

অযথাই যুবক হওয়া, কায়সার…

বর্ষাকালের ব্যাঙেরা

বর্ষাকালের ব্যাঙেরা আমার নাম ধ'রে ধ'রে ডাকে।

আমি দৌড়ে গেলে তাদের কাছে, তারা চিনতে পারে নাআমাকে;
আমি স্বভাবে লাফ জানি না ব'লে। বর্ষাকালের ব্যাঙেরা আমার নাম ধ'রে ধ'রে ডাকে।
আমি ওদের গা-ঘেঁষে দাঁড়ালে ওরা লাফিয়ে সরে যায় দূরে; আমি লাফ দেই না প্রকৃত-পুরুষ ব'লে।
যদিও আমার আদি-পুরুষের অনেকেই দারুণ লাফ দিতেন।
তবে তারা সকলেই নানান কটূক্তির মাটিতে মৃত্যুবরণ করেছেন,
এ-কথাও আমি জানি।

তাই বর্ষাকালের ব্যাঙেরা আমাকে ডাকলে আমি মাথা নত করি না। আমি দৌড় দিয়ে যাই তাদের কাছে,
তাদের লাফ দেখে মাথায় বদচিন্তা জাগলেও আমি প্রশ্রয় দেই না মোটেও।

লাফানোর মতো যেকোনো চিন্তা আমাকে লজ্জায় ডুবিয়ে মারে, ভগবান!

প্রলাপ ব্যতীত কিছু নয়

একটা গলাকাটা মুরগি ছটফট করছে আমার সামনে।

প্রতি শুক্রবার, বাদ-জুম্মা, এই মুরগিটাকে
জবাই করি আমি— নামাজ পড়ার পর।
আমার মাবুদের নামে এইটুকু উৎসর্গ আমি করি।
মুরগিটা যখন ছটফট ছটফট করে— আমি শান্তি পাই।

আমি শুধু মুরগির মাংসটুকু খাই।
কষানো ঝোল আমার প্রিয়; আলু সমেত। 
সাথে সাদা ভাত আর চিংড়ি মাছ।

খেতে বসি, তখনও মুরগিটা ছটফট ছটফট করে।
আমি শান্তি পাই।
বাদ-জুম্মা। আমার মাবুদের নামে।
উৎসর্গ করি তো, তাই।

মুরগিটা আবার হুটহাট কথাও বলে উঠে মাঝেমধ্যে।
এই যেমন এখন, মুরগিটা কথা বলল।
গলাকাটা মুরগিটা— কথা বলল।

আমি শুনলাম ওর কথা। ও নাকি একটাই মুরগি,
ফিরে ফিরে আসে, রোজ শুক্রবার, বাদ-জুম্মা,
নামাজের পর। আমারই নিকট।

আমি তো তা জানি।
তবুও বললাম, তোমারে তো জবাই করি আমি
ফিরে আসো কেন তাও বারবার— কেবলই শুক্রবার?

মুরগিটা ছটফট করতে করতে বলল
আমার মাবুদের জন্য, এইটুকু আমি করি।
ফলত, শান্তি পাই।

একটা গলাকাটা মুরগি ছটফট করছে আমার সামনে।
আমি যার মাবুদ
সেই মুরগি গলাকাটা
আর, সে যা বলে, তা তো— প্রলাপ ব্যতীত

আর কিছু নয়।

Comments

    Please login to post comment. Login