Posts

গল্প

তোমার নামে

May 24, 2025

Tina islam

Original Author আনিকা ইসলাম

87
View

ঢাকার ব্যস্ত এক সন্ধ্যায় রিকশার শব্দ, গাড়ির হর্ণ আর মানুষের কোলাহল যেন প্রতিদিনের মতোই আজও শহরটাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। অফিস শেষে ক্লান্ত পায়ে হাঁটছিল রাফি। সারাদিনের কাজ, বসের বকাঝকা, আর মেট্রোতে ঠাসাঠাসি ভিড়—সব মিলিয়ে মনটা খুব বিষণ্ন। কিন্তু আজকে বিষণ্নতার একটা বিশেষ কারণও ছিল—আজ তার পুরনো প্রেমিকা, নীলার বিয়ে।

নীলা আর রাফি—এক সময়ের অদ্ভুত সুন্দর সম্পর্ক। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষে প্রথম দেখা, তারপর বন্ধুত্ব, ভালোবাসা, স্বপ্ন... সবই ছিল। কিন্তু সময়ের সাথে অনেক কিছু বদলায়। বাস্তবতার দেয়ালে ঠেকে সম্পর্কটা থেমে যায়। একদিন হঠাৎ করেই নীলা জানায়, তার বিয়ে ঠিক হয়েছে পরিবারের পছন্দে, রাফিকে না জানিয়েই।

রাফি প্রথমে ভেবেছিল নীলাকে বোঝাবে, সময় চাইবে। কিন্তু নীলা স্পষ্ট বলেছিল, "সব সম্পর্কের একটা শেষ থাকে রাফি, আমাদেরটাও ছিল। তুমি আমার প্রথম ভালোবাসা, কিন্তু শেষটা নয়।"

রাফি অনেকদিন নিজেকে সামলাতে পারেনি। নীলার কথা ভাবলে এখনও বুকটা ভার হয়ে আসে। আজ রাতে সে ভেবেছিল ঘরে গিয়ে একা থাকবে, মুঠোফোনটা বন্ধ করে দেবে, কারো সঙ্গ চায় না।

কিন্তু ঠিক তখনই একটা কফি শপের সামনে থমকে দাঁড়ায় সে। “Café Melancholy” — নামটাই যেন তার বর্তমান মনের প্রতিচ্ছবি। ভাবল, একটা কফি খেলে হয়তো মাথাটা একটু ঠাণ্ডা হবে।

দোকানের ভেতরে ঢুকতেই, কাচের দেয়ালের পাশে জানালার ধারে একটা টেবিলে বসে থাকা মেয়েটিকে দেখে থমকে যায় রাফি। মেয়েটা জানালার বাইরে তাকিয়ে, হাতে একটা পুরোনো ডায়েরি। মুখটা অচেনা, কিন্তু চোখদুটি যেন চিরপরিচিত কারো।

সে অনিচ্ছাসত্ত্বেও মেয়েটির উল্টো পাশে গিয়ে বসে। মেয়েটি একটু চমকে উঠে তাকায়।

— "সরি, এখানে বসতে পারি? জায়গা খালি দেখে..."

মেয়েটি একটু হেসে মাথা নাড়ে, “অবশ্যই।”

কিছুক্ষণ নীরবতা। দুজনেই নিজেদের মতো কফির অর্ডার দেয়। তারপর হঠাৎ মেয়েটিই কথা বলে।

— “আপনার মুখটা কেমন যেন পরিচিত লাগছে। আগে কোথাও দেখা হয়েছে?”

রাফি একটু থেমে, মৃদু হাসে।

— “আমি তো তাই ভাবছিলাম। আপনি ডায়েরি লিখছেন?”

— “হ্যাঁ, পুরনো অভ্যাস। যখন মন খারাপ থাকে, তখন ডায়েরিটাই আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু।”

রাফির বুকটা ধক করে ওঠে। ঠিক এমনভাবেই তো নীলা লিখত ডায়েরি। “মন খারাপের শব্দ” বলে সে একটা অধ্যায় রাখত।

— “আজ মন খারাপ?” রাফি জিজ্ঞেস করে।

— “হ্যাঁ, কারো চলে যাওয়ার দিন। আপনার?”

রাফি একটু হেসে বলে, “একই কারণে, কারো চলে যাওয়া। কিন্তু তার নাম শুনলেই এখনও বুকটা কাঁপে।”

মেয়েটি তাকায়। চুপচাপ কিছুক্ষণ।

— “আমি আয়রা। আপনি?”

— “রাফি।”

আয়রার চোখে একধরনের কৌতূহল। সেই চোখে কোনো প্রেম নেই, কিন্তু একধরনের বোঝাপড়া আছে।

— “আমরা কি অচেনা হলেও একসাথে মন খারাপ করতে পারি?” মেয়েটা হঠাৎ প্রশ্ন করে।

রাফি একটু চমকে ওঠে, কিন্তু তারপর হাসে। এমন কিছু কারো মুখে শুনবে, কখনও ভাবেনি।

— “পারব হয়তো। কফি শেষ করে হাঁটতে যাবেন?”

আয়রা একটু ভেবে বলে, “চলেন।”

দুজনেই কফি শেষ করে কফি শপ থেকে বেরিয়ে আসে। ঢাকা শহরের রাতে, স্ট্রিটলাইটের আলোয় ভিজে থাকা পথ ধরে তারা হাঁটে। কথা হয়, জীবন নিয়ে, পুরনো স্মৃতি নিয়ে, ভালোবাসা আর তার হারিয়ে যাওয়ার গল্প নিয়ে।

রাফি বুঝে ফেলে, আয়রাও কেউ একজনকে হারিয়েছে, কিন্তু সে সেই হারিয়ে যাওয়া থেকে পালায়নি। সে বেঁচে থাকার নতুন মানে খুঁজে নিচ্ছে।

রাফির চোখে কিছুটা আলোর রেখা পড়ে। হয়তো ভালোবাসা ফিরে আসে না, কিন্তু ভালোবাসার মতো অনুভব নতুন কারো সাথে তৈরি হতে পারে। হয়তো আয়রা সেই নতুন অধ্যায়ের শুরু।

হঠাৎ আয়রা বলে,

— “আপনার সাথে আবার দেখা হবে?”

রাফি বলে, “তোমার ডায়েরিতে জায়গা রাখো, হয়তো আমি আবার আসব।”

আয়রার মুখে একরাশ হাসি।
 

Comments

    Please login to post comment. Login