ঢাকার ব্যস্ত জীবনযাত্রায়, গুলশানের এক ক্যাফেতে প্রতিদিন বিকেলে বসে থাকত আমাকা। তার চোখে ছিল এক অদ্ভুত শূন্যতা, যেন কিছু খুঁজে ফেরে। ক্যাফের কোণে বসে, সে প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অপেক্ষা করত। কেউ জানত না, সে কার জন্য অপেক্ষা করে।
একদিন, ক্যাফেতে ঢুকল একজন তরুণ, নাম তার রাফি। উচ্চতায় লম্বা, চোখে গভীরতা, আর মুখে এক ধরনের নির্লিপ্ততা। সে এসে আমাকার পাশে বসে, নীরবে কফি অর্ডার করল। প্রথম দিন কোনো কথা হয়নি। তবে প্রতিদিন তারা একই সময়ে, একই জায়গায় বসত। ধীরে ধীরে, তাদের মাঝে এক ধরনের বোঝাপড়া গড়ে উঠল, যদিও কেউ কিছু বলত না।
একদিন, হঠাৎ করে আমাকা বলল, "তুমি কি কখনো কাউকে ভালোবেসেছো, কিন্তু বলতে পারোনি?" রাফি একটু চমকে উঠল, তারপর মৃদু হেসে বলল, "হ্যাঁ, ভালোবাসা সবসময় প্রকাশ পায় না। কখনো কখনো, তা চোখের ভাষায় থাকে।"
এই কথার পর, তাদের মাঝে নীরবতা নেমে এল। কিন্তু সেই নীরবতা ছিল আরামদায়ক, যেন তারা একে অপরের অনুভূতি বুঝতে পারছিল।
দিনগুলো কেটে যাচ্ছিল। একদিন, রাফি ক্যাফেতে এল না। আমাকা অপেক্ষা করল, কিন্তু সে এল না। পরের দিনও না। এক সপ্তাহ কেটে গেল, রাফির কোনো খোঁজ নেই। আমাকা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ল।
অবশেষে, একদিন রাফি এল। কিন্তু সে ছিল ভিন্ন। চোখে ক্লান্তি, মুখে বিষণ্ণতা। সে বলল, "আমাকে যেতে হবে, আমাকা। আমার মা অসুস্থ, আমাকে তার পাশে থাকতে হবে।"
আমাকা কিছু বলল না। শুধু বলল, "আমি অপেক্ষা করব।"
রাফি চলে গেল। আমাকা প্রতিদিন ক্যাফেতে বসে থাকত, তার ফিরে আসার অপেক্ষায়। মাস কেটে গেল, বছর কেটে গেল। রাফি আর এল না।
একদিন, ক্যাফেতে একটি চিঠি এল আমাকার নামে। চিঠিতে লেখা ছিল, "আমাকা, আমি জানি, আমি তোমাকে কখনো বলিনি, কিন্তু আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমি ফিরে আসতে পারিনি, কিন্তু তুমি সবসময় আমার হৃদয়ে থাকবে।"
আমাকা চিঠি হাতে নিয়ে, চোখে অশ্রু নিয়ে ক্যাফের জানালার বাইরে তাকিয়ে রইল। বাইরে সূর্য ডুবে যাচ্ছিল, আর তার হৃদয়ে একটি গোপন ভালোবাসার গল্প চিরকালীন হয়ে রইল।