খুব যত্ন করে গড়ে তোলা স্বপ্নগুলো যখন ভেঙে পড়ে, তখন শুধু স্বপ্নগুলোই নয়—ভেঙে যায় নিজের অস্তিত্বের একটা বড় অংশও। অনেকটা সময়, অনুভব, ভালোবাসা আর বিশ্বাস ঢেলে যে স্বপ্নগুলো বুনে নেওয়া হয়েছিল, সেগুলো যখন এক মুহূর্তে ধুলায় মিশে যায়, তখন বেঁচে থাকাটাই এক বিষাদময় যন্ত্রণা হয়ে দাঁড়ায়।
চোখে পানি না থাকলেও ভিতরের কান্না যেন থামে না। মানুষ দেখে না—দেখতে পায় না, ভিতরে প্রতিটি নিঃশ্বাস কেমন ভারী হয়ে ওঠে। প্রতিটা সকাল শুরু হয় হেরে যাওয়ার ভয় নিয়ে, আর প্রতিটা রাত শেষ হয় একা থাকার নির্মম সত্যকে বুকে চেপে ধরে। বুকের ভেতর একটা শূন্যতা জন্ম নেয়, যেটা কোনো কিছু দিয়েই পূরণ করা যায় না।
বন্ধুরা ভাবে তুমি আগের মতোই আছো, তোমার হাসি দেখে কেউ টের পায় না—এই হাসির নিচে চাপা পড়ে আছে কতটা হতাশা, কতটা অসমাপ্ত ইচ্ছে, আর কতটা অপূর্ণ ভালোবাসা। ভিতরে ভিতরে একা হয়ে যাও, এমন একা, যে একাকিত্ব ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। মনের গভীরে এক বিষাদ ঘর বাঁধে, যেখানে আশার কোনো আলো ঢোকে না।
স্বপ্নের মৃত্যুটা এমন, যে সেটা মানুষকে জীবিত লাশে পরিণত করে। চলাফেরা করো, কথা বলো, হাসো, এমনকি কাজও করো, কিন্তু কিছুই তোমার না—সব কিছু যেন কোনো যান্ত্রিক নিয়মে চলছে। জীবনের মানে তখন কেবল একটা প্রশ্নবোধক চিহ্নের মতো দাঁড়িয়ে থাকে সামনে—‘এভাবে আর কতদিন?’
এ যন্ত্রণা বাইরে থেকে দেখা যায় না। কেউ বোঝে না। কেউ জানেও না, তুমি প্রতিদিন একটু করে ভেঙে পড়ছো, একটু করে মরে যাচ্ছো। কেউ বুঝতে পারে না, তুমি কেন হঠাৎ চুপ করে গেলে, কেন আগের মতো প্রাণ খুলে হাসো না, বা কেন মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গিয়ে নির্জনে তাকিয়ে থাকো অন্ধকারে।
স্বপ্ন ভাঙার যন্ত্রণা শুধু স্বপ্ন হারানোর নয়, বরং নিজের একটা অংশ চিরতরে হারিয়ে ফেলার মতো। এবং সে ক্ষত এমনই, যা বাইরে থেকে কেউ দেখতে পায় না—শুধু তুমি জানো, প্রতিটি নিঃশ্বাসের মধ্যে কতটা বিষ জমে আছে।