আজব দুনিয়া
লেখক: আব্দুল্লাহ আল আতিক
রাত তিনটার সময় হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল তানিমের। জানালা দিয়ে চাঁদের আলো ঠিকরে পড়ছিল ঘরের ভেতর। সব কিছুই স্বাভাবিক, তবুও কেমন যেন একটা অস্বস্তি হচ্ছিল তার। বাইরে তাকাতেই চোখ আটকে গেল — পেছনের মাঠে এক গোল চকচকে আলো!
"কে ওখানে?" — বলে তাড়াহুড়ো করে জানালা খুলে তাকাল তানিম। একটা বৃত্তাকার বস্তু মাঠের মাঝখানে থেমে আছে। আর আশ্চর্যের ব্যাপার, সেটার রঙ এক মুহূর্তে নীল, পরক্ষণে বেগুনি! সে ভাবল, এটা নিশ্চয়ই স্বপ্ন। কিন্তু ঘাড় ঘুরিয়ে দরজার পাশে রাখা পানির বোতল ছুঁয়ে দেখল — একদম বাস্তব।
কৌতূহল তানিমকে থামতে দিল না। চুপিচুপি দরজা খুলে, পায়ের নিচে শব্দ না করে মাঠের দিকে এগিয়ে গেল সে। যতই এগিয়ে যায়, ততই আশ্চর্য হতে থাকে। গাছপালাগুলো যেন নিঃশব্দে দুলছে, আর বাতাসে মিষ্টি লেবুর মতো গন্ধ। যানটার দরজা আপনা থেকেই খুলে গেল, ভিতর থেকে বের হলো একটা অদ্ভুতদর্শন প্রাণী — গায়ের রঙ হালকা সবুজ, চোখ দুটো বড়, আর ঠোঁটের কোণায় একধরনের হাসি।
"তুমি মানুষ?" প্রাণীটি বাংলা বলল।
তানিম চমকে উঠল।
— "তুমি বাংলা জানো?"
— "আমরা সব ভাষাই জানি। আমি এলাম আজব দুনিয়া থেকে।"
— "আজব দুনিয়া?" তানিমের চোখ ছানাবড়া।
— "হ্যাঁ, এক গ্রহ যেখানে স্বপ্ন আর বাস্তবের কোনো পার্থক্য নেই। যেখানে গাছ গল্প বলে, বৃষ্টি গান গায়, আর মানুষ শুধু ভালোবাসা ছড়ায়। চলো, তোমাকে নিয়ে যাই।"
তানিম দ্বিধায় পড়ল। এটা কি কোনো ফাঁদ? নাকি সত্যিই কোনো অন্য জগৎ? কিন্তু তার মনে হলো, বাস্তবের দুঃসহ জগৎ থেকে পালানোর এ এক বিরল সুযোগ। সে উঠে বসল যানটির ভিতর।
হঠাৎ চারপাশে আলো ঝলসে উঠল। চোখ বন্ধ করে ফেলল সে। একটু পর চোখ খুলতেই দেখল — সে এক সম্পূর্ণ অচেনা জায়গায়।
চারপাশে রঙিন মেঘের ভেলায় ছোট ছোট বাড়ি। রাস্তার পাশে আইসক্রিম গাছে শুঁটি ঝুলছে। বাচ্চারা ঘুড়ির পিঠে চড়ে উড়ছে। বয়স্কদের কেউ মন খারাপ করে না। এই দুনিয়ায় দুঃখ বলে কিছু নেই।
তানিম হাঁটতে লাগল এক পথ ধরে। হঠাৎ একটা গাছ বলে উঠল,
— "স্বাগতম, তানিম! আমরা জানি তুমি আসবে।"
সে থমকে দাঁড়াল।
— "তোমরা জানো আমার নাম?"
— "এই দুনিয়ায় নাম উচ্চারণ করলেই গাছেরা চিনে ফেলে।"
এরপর দিনের পর দিন তানিম আজব দুনিয়ায় থাকল। প্রতিদিন ছিল নতুন রঙ, নতুন অভিজ্ঞতা। সে এক রোবট বানাল, যে তাকে গল্প শোনাত রাতে ঘুমানোর আগে। সে এক পাখির পিঠে চড়ে সমুদ্র পেরোল, যেখানে জল ছিল তরল সোনা।
কিন্তু একদিন হঠাৎ সে শুনল — আজব দুনিয়ার নিয়ম অনুযায়ী, একজন মানুষ একবারই আসতে পারে। তার সময় শেষ।
তানিম কেঁদে ফেলল।
— "আমি তো ফিরে যেতে চাই না।"
প্রাণীটি বলল,
— "আজব দুনিয়া চিরস্থায়ী নয়। এটা তোমার কল্পনা ও বিশ্বাসের সৃষ্টি। কিন্তু এই দুনিয়া থেকে পাওয়া ভালোবাসা, হাসি আর শিক্ষা — তুমি সঙ্গে নিয়ে যেতে পারো।"
তানিমকে আবার যানটিতে তুলে দেওয়া হলো। চোখে জল, মনে আবেগের ঢেউ। ফেরার সময় সে প্রতিজ্ঞা করল — পৃথিবীতে ফিরে গিয়েও সে আজব দুনিয়ার মতো এক দুনিয়া গড়ার চেষ্টা করবে। যেখানে মানুষ হাসবে, গাছ রক্ষা পাবে, আর ছোট ছোট স্বপ্ন বাঁচবে।
সকালবেলা, সে ঘুম ভাঙল নিজের বিছানায়। জানালার পাশে রোদ পড়ছে। কিন্তু টেবিলের ওপর একটি ছোট আইসক্রিম শুঁটি রাখা — প্রমাণ, সবটাই কল্পনা ছিল না।
শেষ।
যদি তুমি চাও, আমি এই গল্পের সিকুয়েল বা আজব দুনিয়ার ভেতরের আরো চরিত্র নিয়েও গল্প বানাতে পারি।