Posts

চিন্তা

অদম্য ইচ্ছাশক্তি: রাজুর সংগ্রাম

May 26, 2025

Atik

67
View

অদম্য ইচ্ছাশক্তি: রাজুর সংগ্রাম

লেখক: আব্দুল্লাহ আল আতিক

রাজু এক ছোট্ট গ্রামে জন্মানো সাধারণ ছেলে। তার পরিবার ছিল খুবই গরীব। তার বাবা একজন কৃষক, মা বাড়ি Sambal করতেন। রাজুর স্কুলের টাকা জোগানো, বই কেনা, পোশাক মেরামত করা—সবই ছিল পরিবারের জন্য এক বিশাল চ্যালেঞ্জ। কিন্তু রাজুর মনে ছিল একটি স্বপ্ন—সে বড় হয়ে একদিন একজন সফল মানুষ হবে এবং তার পরিবারকে দুঃখ থেকে মুক্তি দেবে।

শুরুটা সহজ ছিল না। স্কুলে গেলে অনেক সময় খাবার না থাকার কারণে মনোযোগ রাখতে পারত না রাজু। অন্য ছেলেমেয়েরা খেলাধুলা করে আর সে বসে বই পড়ে বা কাজ করতে বাধ্য হত। গ্রামে কেউ তার স্বপ্নকে গুরুত্ব দিত না। সবাই বলত, “তুই তো গরীব, তোর পড়াশোনার কি হবে?”

রাজু এসব কথা শুনে হাল ছাড়েনি। সে আরও কঠোর পরিশ্রম করতে লাগল। স্কুল শেষে বিকেলে কাজ করতে যেতে লাগল, জমিতে বাবার সাহায্য করত, কখনো বাজারে ছোট ছোট কাজ করত। বিকালে আবার ক্লাসে ফিরে আসত, পড়াশোনা করত।

তিন বছর কেটে গেল। রাজুর অধ্যবসায় ও কঠোর পরিশ্রমের ফল দেখা দিল। সে তার স্কুলে সর্বোচ্চ নম্বর পেল। গ্রামের অনেকেই অবাক হল—এক গরীব ছেলে এত বড় সাফল্য পাবে কার ভাবেনি।

রাজু জানতে পারল একটি বড় শহরের কলেজে স্কলারশিপ দেওয়া হচ্ছে, যারা মেধাবী কিন্তু আর্থিকভাবে অসহায়। রাজু আবেদন করল, এবং তার মেধা ও সংগ্রামের কথা শুনে স্কলারশিপ পেল।

শহরে এসে নতুন পরিবেশে রাজু প্রথমে মানিয়ে নিতে পারেনি। শহরের জীবন পাড়ার থেকে আলাদা। এখানে পড়াশোনার চাপ ছিল অনেক বেশি, বন্ধু বানানো কঠিন, আর অনেক সময় তার বাড়ি থেকে দূরে থাকতে হত। তার পকেট খালি, খাবার, বাসার খরচ—সবই ঝুঁকির মধ্যে ছিল। কিন্তু সে কখনো ভয় পেল না।

রাজু দিনরাত পড়াশোনা করত, কাজ করত—শহরের এক ক্যাফেতে ওয়েটার হিসেবে কাজ করতে শুরু করল। সন্ধ্যার পর ক্লাস শেষে সে ক্লান্ত শরীরে ক্যাফেতে গিয়ে কাজ করত। অনেক সময় হোটেলের মালিকদের কাছ থেকে অবহেলা পেত, কিন্তু রাজু নিজের লক্ষ্যকে কখনো ভুলতে পারেনি।

একদিন কলেজে বড় একটি পরীক্ষা হতে চলল, যা রাজুর ভবিষ্যত ঠিক করে দেবে। কিন্তু পরীক্ষার ঠিক আগে রাজু অসুস্থ হয়ে পড়ল। তাকে হাসপাতালে যেতে হলো। অনেকেই বলল, “বাতিল করে দাও পরীক্ষাটা, আর পরে করবি।” কিন্তু রাজু একবারও হাল ছাড়েনি।

অসুস্থতা সত্ত্বেও, পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে সে পরীক্ষা দিল। তার মন ছিল একটাই—লক্ষ্যে পৌঁছানো। পরবর্তীতে জানা গেল, রাজু সেই পরীক্ষায় প্রথম স্থান লাভ করেছে। সবাই তাকে শ্রদ্ধা জানাল। তার এই সাফল্য শুধু নিজের জন্য নয়, তার গ্রামের মানুষের জন্যও গর্বের বিষয়।

রাজু তার স্কলারশিপ বাড়ানোর জন্য আরও কঠোর পরিশ্রম করল। অধ্যয়ন শেষে সে একটি বড় কোম্পানিতে চাকরি পেল। সেখানে সে তার দক্ষতা ও সততার মাধ্যমে দ্রুত পদোন্নতি পেল।

কিন্তু রাজুর জীবন শুধু নিজের সাফল্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। সে তার গ্রামের শিশুদের জন্য একটি ছোট বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করল, যেখানে যারা দরিদ্র তাদের বিনামূল্যে শিক্ষা দেওয়া হত। সে গ্রামের সড়ক, পুকুর সংস্কারে সাহায্য করল, যাতে গ্রামের মানুষের জীবনমান উন্নত হয়।

রাজুর জীবনের গল্প থেকে আমাদের শেখার মতো অনেক কিছু আছে—

  • হাল ছাড়বে না কখনো: জীবনে যতই সমস্যা আসুক, মনোবল হারাতে পারো না।
  • পরিশ্রমের বিকল্প নেই: স্বপ্ন পূরণে ধৈর্য ও পরিশ্রম অপরিহার্য।
  • আত্মবিশ্বাসই শক্তি: নিজের প্রতি বিশ্বাস হারালে সাফল্য অনিবার্য।
  • সাফল্যকে ভাগ করে নাও: নিজের সাফল্যের মাধ্যমে অন্যদের সাহায্য করাও গুরুত্বপূর্ণ।
  • পরিবর্তন আনো নিজের মধ্য থেকে: সমাজের উন্নতির জন্য নিজের দায়িত্ব পালন করো।

রাজুর গল্প আমাদের প্রমাণ করে যে গরীব বংশ থেকে আসা একজন সাধারণ ছেলে, সঠিক মনোভাব, পরিশ্রম এবং ধৈর্যের মাধ্যমে জীবনে অসাধারণ সফলতা অর্জন করতে পারে।

তোমার জীবনে যদি কোনো প্রতিবন্ধকতা বা সমস্যা থাকে, তাহলে রাজুর মতো অদম্য ইচ্ছাশক্তি ধরে রেখো। যেকোনো কঠিন সময় পার করে তুমি নিজের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে।

তুমি কি রাজুর মত একটি গল্প শুনতে পছন্দ করো? তোমার জীবনের কোনো গল্প বা স্বপ্ন আছে কি? আমি শুনতে আগ্রহী।

Comments

    Please login to post comment. Login