নিচে আমি "আলোচোর পেনসিল" গল্পটির একটি বিস্তৃত সংস্করণ দিলাম, প্রায় ১০০০ শব্দের একটি বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি (sci-fi) রূপে। আশা করি এটি আপনাকে আনন্দ দেবে।
আলোচোর পেনসিল
লেখক: আব্দুল্লাহ আল আতিক
(একটি বৈজ্ঞানিক কল্পগল্প)
রাফি ক্লাস সেভেনে পড়ে। সে একজন সাধারণ ছাত্র, কিন্তু অসাধারণ ছিল তার কৌতূহল। বইয়ের পাতায় বিজ্ঞানের যত জটিল বিষয়, রাফির কাছে সবকিছুই ছিল রোমাঞ্চকর। তার ঘরের কোণে একটা ছোট্ট বিজ্ঞান ল্যাব ছিল—দাদুর পুরোনো যন্ত্রপাতি, টিনের বাক্সে সার্কিট, ব্যাটারি, লাইট, ম্যাগনেট আর তারে ভরা।
একদিন সে দাদুর স্টোরঘরে খুঁজতে খুঁজতে পায় একটি কাঠের বাক্স। সেই বাক্সে ছিল একটি কালো রঙের পুরোনো পেনসিল। তবে সেটা সাধারণ ছিল না। সেটার গায়ে লেখা ছিল এক অদ্ভুত বাক্য—
"যা আঁকবে, তাই হবে!"
রাফি প্রথমে হাসল। "পুরোনো আমলের কোনো খেলনা বোধহয়," সে ভাবল। কিন্তু বিজ্ঞানী মন থেমে থাকল না।
সে তার ডেস্কে বসে একটা ছোট্ট সার্কিট ডায়াগ্রাম আঁকলো—একটা ব্যাটারি, সুইচ, আর একটা এলইডি বাতি। ঠিক তখনই সামনে রাখা পুরোনো ব্যাটারিটার পাশে আলোর ঝলক! পেনসিল দিয়ে আঁকা বাতিটা বাস্তব হয়ে গেল!
রাফির চোখ কপালে!
সে আঁকল একটি ছোট মোটর… সেটা গোঁ গোঁ করে ঘুরতে লাগল! এরপর সে একে একে আঁকল ছাতা, বেলুন, এমনকি একটি ছোট রোবট। এবং সবই সামনে বাস্তব হয়ে উঠল।
পেনসিলটা ছিল আসলেই জাদুকরী। তবে রাফি জানত, এটা কোনো ম্যাজিক না—এটা বিজ্ঞানেরই কোনো অজানা আবিষ্কার, হয়ত কোয়ান্টাম প্রযুক্তির ফল।
গবেষণা শুরু
রাফি প্রতিদিন নতুন কিছু আঁকত। কিন্তু এবার সে পেনসিলটার গঠন বুঝতে চাইল। সে সেটিকে মাইক্রোস্কোপে পরীক্ষা করল। অবাক হয়ে দেখল, পেনসিলের গ্রাফাইট অংশে ছোট ছোট ন্যানো-চিপ বসানো! প্রতিটি আঁকা রেখা কোনো কোডে রূপান্তর হয় এবং বাস্তব বস্তুতে রূপ নেয়!
রাফি এটাকে বলল—“আলোকচিপ পেনসিল”।
সে ভাবল, এই পেনসিল দিয়ে কি মানবতার উপকার করা যায়? সে একটা ছোট পানিশোধন যন্ত্র আঁকল, যা যেকোনো নোংরা পানি বিশুদ্ধ করে ফেলে। এবার সে সেটা গ্রামের মানুষের কাছে নিয়ে গেল। সবাই বিস্ময়ে তাকিয়ে রইল—নদীর নোংরা পানি এক নিমিষে বিশুদ্ধ!
রাফি খুশি, কিন্তু তার মন জানত—বড় আবিষ্কার মানেই বড় দায়িত্ব।
বিপদের শুরু
একদিন, খেলাচ্ছলে সে তার খাতায় একটা বিশাল প্রাণী আঁকল—একটা ডাইনোসর! তখন তার মা ডাকছিল, তাই সে তাড়াহুড়ো করে খাতা বন্ধ করে বেরিয়ে গেল।
কিছুক্ষণ পর ঘরে ফিরে সে শুনল বিকট শব্দ! ঘরের মেঝে কাঁপছে, জানালার কাচ ভেঙে পড়ল। সে দৌড়ে ছাদে গিয়ে দেখল—একটি বিশাল ডাইনোসর হাঁটছে শহরের রাস্তায়!
রাফি অবাক—“না! এটা তো আমি আঁকিনি ভালো করে, শুধু দুষ্টুমি করে এঁকেছিলাম…”
কিন্তু আলোচোর পেনসিল যা আঁকে, তা গুরুত্ব দিয়ে বাস্তবে রূপ নেয়!
ডাইনোসরটা রাস্তায় ভয় ছড়াচ্ছিল। রাফি জানত, তাকে থামাতেই হবে। সে দৌড়ে নিজের ঘরে এল, পেনসিল হাতে নিল। এবার সে আঁকল একটি ঘুমের গ্যাস ছোঁড়ার যন্ত্র। এবং সেটা দিয়ে সে ডাইনোসরের দিকে তাক করে ছুঁড়ে দিল।
কিছুক্ষণ পর বিশাল প্রাণীটা হেলে পড়ে ঘুমিয়ে গেল।
শহরের মানুষজন চমকে গেল—এই ছোট ছেলে কীভাবে এমন দানব থামাল?
গোপন সংস্থা
পরদিন, রাফির স্কুলে আসে একদল অপরিচিত মানুষ। তারা নিজেকে পরিচয় দিল—“বিশ্ব বিজ্ঞান প্রতিরক্ষা বিভাগ”।
তারা জানাল, বহু বছর আগে এক বিজ্ঞানী আলোচোর পেনসিল বানিয়েছিল, কিন্তু সেটা হারিয়ে যায়। এখন সেই প্রযুক্তি রাফির হাতে।
তারা রাফিকে আমন্ত্রণ জানাল একটি গোপন গবেষণাগারে। সেখানে রাফি আরও জানল—এই পেনসিল একটি শক্তিশালী কোয়ান্টাম-জেনারেটর ব্যবহার করে যা চিন্তাকে বাস্তবে রূপ দিতে সক্ষম।
কিন্তু, তারা বলল, “এর ব্যবহার খুব সীমিত হওয়া উচিত। কারণ যদি ভুল কিছু আঁকা হয়, তবে তার ফল হতে পারে ভয়াবহ।”
রাফি বুঝে গেল, তার প্রতিভা একটা দায়িত্ব।
শেষ অধ্যায়: ভবিষ্যতের রাফি
বছর কেটে গেল। রাফি এখন একজন তরুণ বিজ্ঞানী। আলোচোর পেনসিলের মাধ্যমে সে বানিয়েছে ভূমিকম্প সতর্ক যন্ত্র, ফসল বাঁচানোর যন্ত্র, এবং এমন অনেক প্রযুক্তি যা বিশ্বের উপকারে আসছে।
কিন্তু পেনসিল সে তালাবদ্ধ করে রেখেছে। কারণ সে জানে—“সত্যিকারের বিজ্ঞানী সবসময় বুঝে কাজ করে, শুধু কৌতূহলে নয়।”
একদিন একটা ছোট ছেলে তার কাছে এসে বলল, “ভাইয়া, আপনি যেভাবে আঁকলে, আমি কি পারি?”
রাফি হাসল, তার হাতে একটা সাধারণ পেনসিল ধরিয়ে বলল—
“বিজ্ঞান মানে শুধু ম্যাজিক না, মন দিয়ে জানলে সেটাই সবচেয়ে বড় ম্যাজিক!”