Posts

ফিকশন

চাঁদোয়া রাত

May 26, 2025

Meghla Megh

147
View

তাকে প্রথম দেখি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার দিন। ভীড় আর অচেনা মুখের ভেতর সে ছিল এক আলাদা আলো। আমি পথ হারিয়ে দিশেহারা, আর সে এগিয়ে এসে বলল,
“চলেন, আমি পৌঁছে দিচ্ছি।”
তার কণ্ঠে ছিল এক অদ্ভুত ভরসা, চোখে যেন আশ্বাস।
পরীক্ষার কেন্দ্রের সামনে পৌঁছে দিয়ে বলল,
“কিছু হলে ফোন দিয়েন।”
একটা নম্বর হাতে তুলে দিয়েছিল, আর বলেছিল  সে, এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই ছাত্র।

পরীক্ষা শেষে যখন বেরিয়ে এলাম, পেছন থেকে সেই পরিচিত কণ্ঠ—
“দোলা!”
আমি চমকে তাকালাম।
“আপনি এখনও আছেন?”
সে হাসল, “তোমাকে রেখে যাই কেমন করে?”

একটা বেঞ্চে বসে সে ব্যাগ থেকে কেক আর কলা বের করল।
“খেয়ে নিন। কিছু খাননি নিশ্চয়ই।”
আমি মুখ ফিরিয়ে বললাম, “না, খাবো না।”
সে অবাক, “কেন?”
“এমনিই,” বললাম।

বললাম কোক খাবো

সে হেসে বলল, “আপনি কোক খাবেন?”
আমি জেদ করে বললাম, “হ্যাঁ।”
সে মাথা নেড়ে বলল, “খালি পেটে কোক খাওয়া ঠিক না।”
আমি রেগে উঠে চলে গেলাম।
কিছুক্ষণ পর এসে বলল, “চলেন।”
আমি বললাম, “না।”
সে হেঁটে গেল, তবে কিছু দূর গিয়ে থেমে বলল, “চলেন না প্লিজ।”

আমরা এক দোকানে গেলাম। সে বলল, “মামা, পরোটা আর মাংস দেন।”
আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকি।
সে বলল, “এক মিনিট আসছি।”
আমি ভাবলাম সিগারেট খেতে গেছে। লুকিয়ে দেখলাম—ঠিকই ধরেছিলাম।
ফিরে এসে সে বলল, “, খাননি কেন এখনো।”
আমি বললাম, “আপনি সিগারেট খান, আপনার আনা খাবার খাবো না।”
সে বলল, “আপনাকে নিয়ে মুশকিলে পড়লাম!”

শেষমেশ অনেক বোঝানোর পর আমি খেতে রাজি হলাম।
সে নিজ হাতে পানিও এনে দিল।
সব শেষে হলে পৌঁছে দিলো৷ পরীক্ষা শেষ করে ১ দিন পর তাকে  না বলে ক্যাম্পাাস থেকে চলে আসি


এরপর কেটে গেল কিছু দিন।
একদিন হঠাৎ ফোন করে বলল,
“তুমি কিছু বললে না কেন? আমি চেয়েছিলাম লেকের পাশে তোমাকে নিয়ে গিয়ে মনের কথা বলবো।”

“তোমার জন্য মায়া হয়। ভালো লাগে তোমাকে।”

আমি তাকে বারবার এড়িয়ে গেছি। ফোন ধরিনি, ব্লক করেছে আবার কথা বলেছে পরে।
তবুও এক রাত তার মেসেজ এলো—
“তুমি তাই আমাকে ভালোবাসলে না?”
মনে এক অজানা কষ্ট। তবুও চুপচাপ আমি । 

২ বছর  পর আবার দেখা। আমি তার বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশেই এক প্রোগ্রামে গিয়েছিলাম। ফোন করে বললাম,
আপনার ক্যাম্পাসের কাছেই এসেছি।”
সে বলল,
“আমি তো বিয়ে করছি, তোমার দাওয়াত!”
রাগে ফোন কেটে দিলাম।

দুপুরে ঘুমাচ্ছিলাম, বিকেলে ফোন দিলো সে
“একটু বের হতে পারবে?”
আমি বললাম, “জানি না।”
সে বলল, “প্লিজ একটু দেখা করো।”
আমি রাজি হলাম।

গেটের সামনে গিয়ে ফোন করতেই,
সে উত্তেজনায় বলল,
“তুমি এসেছো! বিশ্বাস হচ্ছে না।”

আমরা হাঁটতে হাঁটতে লেকের ধারে গেলাম।
সে বলল,
“তুমি আগের থেকেও সুন্দর হয়েছো। শুকিয়ে গিয়েছো”
আমি হেসে বললাম,
“আমি তো আগেও শুকনাই ছিলাম।”
সে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে বলল,
“তবুও আজ তোমাকে দেখে মন ভরে যায়।”

এক বন্ধু ফোন করতেই সে বলল,
“আমার এলাকার এক মেয়ে এসেছে, সুন্দরী খুব, কিন্তু শুধু কষ্ট দেয়।”
আমি নীরবে তাকিয়ে থাকি।

লেকের পাড়ে বৃষ্টি হয়েছিলো, পিছলে যাচ্ছিলাম।
সে হাত বাড়িয়ে বলল,
“আমার হাত ধরো, পড়ে যাবে।”

চাঁদের আলো লেকে পাড় যেন রূপকথার রাজ্যে পরিণত  হয়ে উঠেছে।
সে বলল,
“তুমি চাঁদের রাজকন্যা। যদি কোনো চাঁদের রাজ্য থাকতো, তুমি সেখানকার রাজকন্যা  হতে।”
একটা ছোট ফুল এনে আমার কানে গুঁজে বলল,
“আমি ভালোবাসি তোমায়।”

আমি বললাম,
“আপনি আমাকে কষ্ট দেন কেন?”
সে বলল,
“তুমি জানো না, তুমি আমার জীবনে কী এক আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছো।”
সে বললো তোমার ভালো লাগছে?  আমি বললাম এত সুন্দর  জায়গা  আমি  আগে দেখিনি কল্পনাও করিনি কখনো এমন সুন্দর মুহূর্ত  আসবে আমার জীবনে ।  বললো চলো তোমাকে ওইপাড়ে নিয়ে যাই  একটা সারপ্রাইজ আছে

আমরা লেকের উল্টো পাড়ে হেঁটে গেলাম।
বৃষ্টিভেজা গন্ধে মন ভরে উঠেছিল। এত সুন্দর জায়গা, গাছগুলো হেলে আছে  গাছে ফুল সামনে লেকের পানিতে জ্বলজ্বল করছে  সব মিলিয়ে মনে হলো এই হলো পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ চাঁদোয়া রাত
আমি দৌড়াতে লাগলাম—সে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল।

তার চোখে ছিল ভালোবাসার দীপ্তি।
সে বলল,
“তুমি আমার হও। আমি তোমার স্বপ্ন হয়ে থাকতে চাই।”

আমি চুপ।

“। রিকশায় চড়ে ফিরছিলাম।
হালকা বৃষ্টিতে চুল ভিজে যাচ্ছিল।
সে বলল,
“তুমি চুড়ি পছন্দ করো? কিনে দেই?”
আমি হেসে মাথা নাড়লাম।

গেটের সামনে এসে থেমে গেল রিকশা।
সে বলল—
“তুমি আমার গল্প হলে না, দোলা।
তুমি হতে পারলে না আমার শেষ পৃষ্ঠা।
তবে আমায় নিয়ে তুমি এক অসমাপ্ত গল্প লেখো।
ভালো থেকো।”

তার চোখ কথা বলছিলো 
আর আমি শুধু ভাবছিলাম—
যে মানুষটা আমায় এভাবে ভালোবাসে,
আমি কেন তাকে ভালোবাসতে পারছি না?
 

Comments

    Please login to post comment. Login