মিরাজ আর শ্রাবণ, দুই বন্ধু। মিরাজ ছিল ধনী পরিবারের ছেলে, আর শ্রাবণ গরিব। ছোটবেলা থেকেই ওদের বন্ধুত্ব ছিল গভীর। মিরাজের বাবা যখন নতুন খেলনা কিনে আনতেন, মিরাজ সেগুলো শ্রাবণের সাথে ভাগ করে নিত। শ্রাবণও মিরাজকে তার হাতের তৈরি মজার মজার জিনিস উপহার দিত। পড়াশোনা থেকে খেলাধুলা, সব কিছুতেই ওরা একসাথে ছিল। যদিও ওদের আর্থিক অবস্থা ভিন্ন ছিল, তবুও তাদের বন্ধুত্বে কখনও তার প্রভাব পড়েনি।
৩০ বছর পর
ত্রিশ বছর পর, ভাগ্য তাদের দুজনকে ভিন্ন পথে নিয়ে এসেছে।
মিরাজ এখন একজন সফল ব্যবসায়ী। তার অনেকগুলো কলকারখানা, বিলাসবহুল গাড়ি, আর বিশাল বাড়ি। তার জীবন প্রাচুর্যে ভরা, কিন্তু সেই ছোটবেলার সারল্য আর হাসি যেন কোথাও হারিয়ে গেছে। কাজের চাপ আর ব্যবসার জটিলতায় সে প্রায়ই একা অনুভব করে। তার চারপাশে অনেক মানুষ থাকলেও, আসল বন্ধুর অভাব সে তীব্রভাবে অনুভব করে।
অন্যদিকে, শ্রাবণ তার ছোটবেলার স্বপ্ন পূরণ করেছে। সে এখন একজন নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক। অল্প বেতনে একটা ছোট্ট স্কুল চালায় সে, যেখানে গরিব শিশুরা বিনামূল্যে পড়াশোনার সুযোগ পায়। তার জীবন হয়তো প্রাচুর্যময় নয়, কিন্তু তার মুখে সব সময় হাসি লেগে থাকে। ছাত্রছাত্রীদের ভালোবাসা আর তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার আনন্দই তার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।
একদিন মিরাজ তার পুরনো দিনের কথা ভাবতে ভাবতে শ্রাবণের কথা মনে করল। অনেক বছর পর সে শ্রাবণের খোঁজ নিতে চাইল। অনেক খুঁজে সে জানতে পারল শ্রাবণ কোথায় আছে। মিরাজ তার বিলাসবহুল গাড়ি নিয়ে শ্রাবণের স্কুলের সামনে এসে দাঁড়াল।
শ্রাবণ তখন বাচ্চাদের সাথে মাঠে খেলছিল। মিরাজকে দেখে প্রথমে চিনতে পারল না। কিন্তু যখন মিরাজ নিজের পরিচয় দিল, শ্রাবণ অবাক হয়ে গেল। ৩০ বছর পর দুই বন্ধু আবার মিলিত হলো।
মিরাজ শ্রাবণের সহজ, সুন্দর জীবন দেখে মুগ্ধ হলো। শ্রাবণও মিরাজের সাফল্যের গল্প শুনল। মিরাজ বুঝতে পারল, আসল সুখ হয়তো অর্থ বা প্রাচুর্যে নয়, বরং ভালোবাসায় আর মানুষের জন্য কিছু করার মধ্যেই নিহিত। শ্রাবণ মিরাজকে তার স্কুলে কিছু সময় কাটানোর অনুরোধ করল। মিরাজ রাজি হলো।
মিরাজ বাচ্চাদের সাথে কথা বলল, তাদের হাসি-খুশি মুখ দেখে তার মন ভরে গেল। সে অনুভব করল এক অদ্ভুত শান্তি। সেদিন মিরাজ শ্রাবণকে প্রস্তাব দিল তার স্কুলে আর্থিক সাহায্য করার জন্য, যাতে আরও বেশি গরিব শিশু শিক্ষার আলো পায়। শ্রাবণ সানন্দে মিরাজের প্রস্তাব গ্রহণ করল।
এরপর থেকে মিরাজ আর শ্রাবণ প্রায়ই দেখা করত। তাদের বন্ধুত্ব আবার নতুন করে জেগে উঠল, আরও দৃঢ় হয়ে। মিরাজ তার ব্যস্ত জীবনের ফাঁকে শ্রাবণের স্কুলে আসত, বাচ্চাদের সাথে সময় কাটাত আর শ্রাবণকে বিভিন্নভাবে সাহায্য করত। শ্রাবণও মিরাজকে জীবনের আসল মূল্যবোধগুলো স্মরণ করিয়ে দিত।
তাদের বন্ধুত্ব প্রমাণ করে দিল যে, অর্থ বা সামাজিক অবস্থান কোনো সত্যিকারের বন্ধুত্বের পথে বাধা হতে পারে না। সত্যিকারের বন্ধুত্ব সময় আর দূরত্বের ঊর্ধ্বে, যা কেবল হৃদয়ের বন্ধনে টিকে থাকে।
70
View