কেনিয়ান লেখক নগুগি ওয়া থিয়োঙ্গো ৮৭ বছর বয়সে মারা গেছেন। আফ্রিকান সাহিত্যের কিংবদন্তি এই লেখক বুধবার (২৮ মে) যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়ার বেডফোর্ডের একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছেন। তার মেয়ে ওয়ানজিকু ওয়া নগুগি ফেসবুকে দেওয়া একটি পোস্টে এই তথ্য জানিয়েছেন।
ওয়ানজিকু লিখেছেন, ‘দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আমরা আজ বুধবার সকালে আমাদের বাবা নগুগি ওয়া থিয়োঙ্গোর মৃত্যুর সংবাদ ঘোষণা করছি। তিনি একটি পূর্ণ জীবন যাপন করেছেন এবং দারুণ এক লড়াই করেছেন।'
১৯৬৪ সালে ‘উইপ নট, চাইল্ড’ উপন্যাস দিয়ে নগুগির লেখালেখির জীবন শুরু হয়। এটি মাউ মাউ বিদ্রোহের সময় ঔপনিবেশিক কেনিয়ায় বসবাসকারী একটি পরিবারের গল্প, যারা ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল। বইটি আফ্রিকান সাহিত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে ওঠে।
তিনি স্থানীয় আফ্রিকান ভাষায় লেখালেখির পক্ষে একজন জোরালো সমর্থক ছিলেন। ১৯৮০ সালে লেখা তার উপন্যাস ‘ডেভিল অন দ্য ক্রস’ গিকুয়ু ভাষায় প্রকাশিত হয়েছিল। কেনিয়ার গিকুয়ু জাতির প্রায় ৬০ লাখ মানুষ (কেনিয়ার জনগণের প্রায় ২২%) এই ভাষাতে কথা বলেন।
২০১৩ সালে মার্কিন সংবাদমাধ্যমে এনপিআরকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নগুগি ওয়া থিয়োঙ্গো বলেছিলেন, ‘আফ্রিকার সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডিগুলোর মধ্যে একটি হলো অভিজাতদের তাদের ভাষাগত ভিত্তি থেকে সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া। যদি আফ্রিকা বিশ্বে মৌলিক কিছু অবদান রাখতে চায়, তাহলে এটি কেবল অভিজ্ঞতার মধ্যেই নয় বরং তাদের নিজস্ব ভাষার অন্তর্নিহিত সম্ভাবনার মধ্যেও নিহিত থাকতে হবে।'
নগুগি ১৯৭০ এর দশক পর্যন্ত ইংরেজিতে লেখালেখি করেছিলেন। ‘অ্যা গ্রেইন অব হুইট’ এবং ‘পেটালস অব ব্লাড’ এর মত উপন্যাস তিনি ইংরেজিতে লিখেছিলেন। এরপর তিনি মাতৃভাষায় সাহিত্য করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু কেনিয়ার সরকার তার লেখা নিষিদ্ধ করে। এছাড়া বিনা বিচারে সুরক্ষিত কারাগারে তাকে এক বছর আটকে রাখা হয়।
ডেভিল অন দ্য ক্রস উপন্যাসটি লেখার সময় তিনি জেলে বন্দী জীবন কাটাচ্ছিলেন। কেনিয়ার সরকারের সমালোচনা করে ইংরেজিতে লেখা একটি নাটকের কারণে তাকে জেলে যেতে হয়েছিল, যদিও তার বিরুদ্ধে কখনও অভিযোগ আনা হয়নি।
নগুগি ওয়া থিয়োঙ্গো ১৯৩৮ সালে কেনিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। সে সময় এটি একটি ব্রিটিশ উপনিবেশ ছিল। শৈশবে তিনি মূলত জেমস নগুগি নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি অ্যালায়েন্স হাই স্কুলে পড়াশোনা করেছিলেন, এটি একটি অভিজাত বোর্ডিং স্কুল ছিল। সেখানে তিনি ইউনিফর্ম পরতেন, দাবা খেলতেন এবং শেক্সপিয়ার পড়তেন। তিনি তার স্মৃতিকথা ‘ইন দ্য হাউস অব দ্য ইন্টারপ্রেটার’ বইয়ে এই সময়ের বর্ণনা দিয়েছেন। সমসাময়িক আফ্রিকান সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ এই লেখক ২০১৯ সালে নোবেল পুরস্কার পাবেন বলে অনেকেই ধারণা করেছিলেন।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, এনপিআর