একটা সুন্দর গ্রামে বাস করত ইমরান নামের এক ছেলে। ইমরান ছিল বেশ ভালো মনস্ক আর সদয়। সে সব সময় চেষ্টা করত অন্যদের সাহায্য করতে আর সবাইকে ভালো ব্যবহার করতে। তার বাবা-মা ছোট থেকেই তাকে ভালো শিক্ষা দিয়েছে। তারা বলত, “ইমরান, তোমার জীবনের সবচেয়ে বড় সম্পদ হলো তোমার চরিত্র। সদয় হও, সবাইকে সালাম দাও, আর আল্লাহর পথে চলো।”
ইমরান খুব ভালো ছাত্র ছিল। সে সবসময় স্কুলে পরিশ্রম করত আর শিক্ষক ও বন্ধুদের সাহায্য করত। কিন্তু সে জানত, জীবনের বড় শিক্ষা আসলে মানুষকে ভালোবাসা আর সাহায্য করা।
একদিন বিকেলে ইমরান বাড়ি ফিরছিল। পথে সে দেখতে পেল এক বৃদ্ধা মহিলা রাস্তার ধারে বসে রয়েছেন। তার চোখে জল, আর মুখে দুঃখের ছাপ। ইমরান দ্রুত এগিয়ে গেল এবং বলল, “আসসালামু আলাইকুম আত্তি মা! আপনি কি ঠিক আছেন? আমি কি আপনার সাহায্য করতে পারি?”
বৃদ্ধা একটু অবাক হয়ে ইমরানের দিকে তাকাল। তারপর ধীরে ধীরে বলল, “ওয়ালাইকুম আসসালাম বাচ্চা। ধন্যবাদ, আমি একটু ক্লান্ত আর পথ হারিয়ে ফেলেছি। আমার বাড়ি অনেক দূরে, আর আমার পায়ে ব্যথা হয়েছে।”
ইমরান বলল, “আপনি চিন্তা করবেন না, আমি আপনাকে বাড়ি পৌঁছে দেব।” বৃদ্ধা একটু হাসল, আর তারা একসাথে বাড়ির পথে চলল।
পথে ইমরান বৃদ্ধাকে জিজ্ঞেস করল, “আত্তি মা, আপনার নাম কী?”
বৃদ্ধা বলল, “আমার নাম ফাতেমা।”
“আপনি কী করতেন?” ইমরান কৌতূহল করে জিজ্ঞেস করল।
ফাতেমা বলল, “আমি গ্রামের সবাইকে ভালোবাসি আর আমার জীবনের অনেক শিক্ষার গল্প আছে তোমাদের জন্য।”
ইমরান চোখ বড় করে বলল, “দয়া করে আমাকে গল্প বলুন।”
ফাতেমা হাসল, “অবশ্যই। একদিন নবী মুহাম্মদ (সা.) আমাদের শিখিয়েছেন, ‘সকল মানুষের প্রতি সদয় হও, আল্লাহ তোমাদের প্রতি সদয় হবেন।’ তোমাদেরকে কখনো কাউকে ছোট করে দেখতে হবে না। বরং সবাইকে সম্মান দিতে হবে।”
ইমরান শুনছিল খুব মনোযোগ দিয়ে।
ফাতেমা আরও বলল, “আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো সালাম। যখন তুমি কাউকে সালাম দাও, তখন তুমি তাদের প্রতি শান্তি ও ভালোবাসা পাঠাও। সালাম আমাদের মধ্যে বন্ধুত্বের সেতুবন্ধন তৈরি করে।”
ইমরান মাথা নেড়ে বলল, “আমি জানতাম না সালামের এত বড় গুরুত্ব আছে।”
তারা যখন ফাতেমার বাড়ির কাছে পৌঁছাল, ইমরান বলল, “আমি খুব খুশি যে আপনাকে সাহায্য করতে পেরেছি। আমাদের নবী (সা.) বলেছেন, ‘একজন মুসলিম আরেক মুসলিমের জন্য ভাই। সে তাকে সাহায্য করে, তাকে ভালোবাসে।’ আমি চেষ্টা করব সবসময় এই কথা মেনে চলতে।”
ফাতেমা বলল, “আল্লাহ তোমাকে অনেক বরকত দিন, ইমরান। তুমি সত্যিই একজন দয়ালু ছেলে।”
ইমরান ফিরে যাওয়ার আগে ফাতেমা তাকে সুন্নাহ মতো এক টুকরো খেজুর দিল। “খেজুর খাও, এটি শরীরের জন্য খুব ভালো।”
ইমরান খেজুর নিয়ে হাঁটতে লাগল। সে ভাবছিল, এই ছোটো কাজগুলোই বড় ফল দেয়। আল্লাহ তাকে সাহায্য করুক যাতে সে সবসময় অন্যদের সাহায্য করতে পারে।
পরদিন স্কুলে ইমরান তার বন্ধুদের বলল, “আমাদের সবাইকে একে অপরকে সালাম দিতে হবে। এটা শুধু একটা কথা নয়, এটা আমাদের হৃদয়কে শান্ত করে আর বন্ধুত্ব গড়ে তোলে।”
তার বন্ধুরা অবাক হল, “সত্যিই? আমরা জানতাম না।”
ইমরান বলল, “আসুন আমরা সবাই চেষ্টা করি, দিনে কমপক্ষে পাঁচবার একে অপরকে সালাম দেব এবং মিষ্টি কথা বলব।”
সেইদিন থেকে ইমরান ও তার বন্ধুরা গ্রামের সবচেয়ে বন্ধুবৎসল দল হয়ে উঠল। তারা স্কুলের বাইরে ও বাড়ির পাশে থাকা মানুষদের সাহায্য করত। তারা বৃদ্ধদের গাছ থেকে ফল তোলায় সাহায্য করত, পথ থেকে ময়লা পরিষ্কার করত, আর সব সময় সবাইকে সালাম দিত।
একদিন গ্রামের মসজিদে ইমরানের শিক্ষক বললেন, “বাচ্চারা, আমাদের নবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অন্যদের জন্য হাসি ফোটায়, সে আল্লাহর কাছে প্রিয়।’ তুমি যারা হাসি ছড়ায় আর সাহায্য করে, তারা আল্লাহর নিকট বিশেষ সম্মান পায়।”
ইমরান তখন বুঝল, তার ছোট ছোট কাজগুলো আল্লাহর সামনে বড়ই গুরুত্বপূর্ণ।
বছর কেটে গেল। ইমরান বড় হলো, কিন্তু তার সদয় মন আর আল্লাহভয় তার থেকে কখনো যায়নি। সে গ্রামে একটা স্কুল খুলল যেখানে শুধু পড়াশোনা নয়, বরং অন্যদের প্রতি ভালোবাসা, সহযোগিতা আর সদয় হওয়া শেখানো হতো।
গ্রামের সবাই তাকে ভালোবাসত আর তাকে একটা সৎ মানুষ হিসেবে শ্রদ্ধা করত। আর তারা সবাই জানত, ইমরানের জীবনের সফলতার গোপন রহস্য ছিল—সদয়তা, সালাম আর আল্লাহর পথে চলা।