কোলকাতা নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মিজু। শান্ত, ভাবুক স্বভাবের ছেলে। তার গল্পটা শুরু হয়েছিল নিঝুমের সঙ্গে প্রথম দেখা হওয়ার দিন থেকেই। নিঝুম ছিল খুব প্রাণবন্ত, হাসিখুশি এক মেয়ে। তারা একসঙ্গে পড়াশোনা করত, আর সময়ের সাথে সাথে গড়ে ওঠে এক নীরব প্রেম—যার নাম কেউ মুখে আনত না, কিন্তু চোখে চোখে চলত সব কথা।
ক্লাসের ফাঁকে কাজী স্যার প্রায়ই বলতেন, "ভালোবাসা যদি মায়ার মতো হয়, তাহলে সে অনায়াসে হারিয়ে যায়।" মিজু সেই কথা তখন বুঝতে পারেনি। এখন বুঝতে পারছে, যখন নিঝুম আর তার সঙ্গে নেই।
বজলু চাচা ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলের কেয়ারটেকার। নিঝুমের প্রতি তার একটা আলাদা টান ছিল। প্রায়ই বলতেন, “এই মেয়ে একদিন অনেক বড় কিছু করবে।” হামিদ চাচা, যিনি ক্যাম্পাসের পাশের চায়ের দোকান চালাতেন, তিনিও জানতেন মিজু আর নিঝুমের নীরব প্রেমের গল্প। তাঁর দোকানের এক কোণেই তো প্রতিদিনের গল্প লেখা হতো!
তবে গল্পটা ঠিক সেভাবে এগোয়নি, যেমনটা হয় সিনেমায়।
স্নাতক শেষের আগে হঠাৎ করে নিঝুম এক চিঠি দিয়ে মিজুকে জানাল যে সে দেশ ছেড়ে যাচ্ছে—বিদেশে পড়তে। মিজু স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। তাদের ভালোবাসা ছিল, কিন্তু কোনো দিন তা নিয়ে কথা হয়নি। সে চিঠিতে নিঝুম লিখেছিল,
"মিজু, তুমি হয়তো কখনো বলো নি, আমিও না। কিন্তু আমাদের মাঝে কিছু একটা ছিল—যা শুধু অনুভবেই ধরা যায়। আমি যাচ্ছি, কিন্তু মায়াটা রেখে যাচ্ছি তোমার জন্য। তুমি ভালো থেকো।"
বছর তিনেক কেটে গেছে। কোলকাতার রাস্তাগুলো এখনও সেই মায়া বহন করে। কাজী স্যারের ক্লাসে আর নিঝুম নেই, হামিদ চাচার দোকানেও কমে গেছে আগের হাসাহাসি। মিজু এখনও বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করছে। মাঝে মাঝে, কেউ একটা চিঠি রেখে যায় তার ডেস্কে, নামহীন, পরিচয়হীন। কালি দিয়ে লেখা দু’এক লাইন কবিতা।
মিজু জানে, প্রেম কখনও নিঃশেষ হয় না, সে সময়ের সঙ্গে রূপ পাল্টায়—কখনও মায়া হয়, কখনও বিচ্ছেদ।
আর কোলকাতা? এই শহর জানে, ভালোবাসা কখনও শুধু দু’জনের গল্প না—এটা শহরটারও একটা অংশ হয়ে যায়।