অদ্ভুত ঘড়িটার রহস্য
তানিশা ছোটবেলা থেকেই পুরনো জিনিসপত্র ঘাঁটতে খুব ভালোবাসত। তার দাদুর ছিল একটা ছোট অ্যান্টিক শপ, যেখানে ধুলো জমা পুরনো বই, ঝনঝন করা ঘড়ি, আর অদ্ভুত সব মূর্তি থাকত। তানিশার কাছে এই দোকানটা ছিল এক রহস্যময় জাদুর জগত।
একদিন দাদুর দোকানের এক কোণায় সে একটা অদ্ভুত ঘড়ি দেখতে পেল। ঘড়িটা ছিল কালো রঙের, তার কাঁটাগুলো ছিল সোনালি, কিন্তু সবচেয়ে অদ্ভুত ছিল তার ডায়াল। সেখানে সাধারণ সংখ্যার বদলে ছিল অদ্ভুত কিছু চিহ্ন, যা তানিশা আগে কখনো দেখেনি। আর ঘড়িটার কাঁটা চলছিল উল্টো দিকে!
তানিশা ঘড়িটা হাতে তুলে নিয়ে দাদুকে জিজ্ঞেস করল, "দাদু, এই ঘড়িটা এমন কেন? এটা তো উল্টো দিকে চলে!"
দাদু হাসলেন, "আহ, এটা 'সময়-উল্টো' ঘড়ি, মা। এটা খুব বিশেষ। এটা শুধু সময় দেখায় না, এটা অতীতকে মনে করিয়ে দেয়।"
তানিশার কৌতূহল আরও বেড়ে গেল। সে ঘড়িটা কেনার জন্য বায়না ধরল। দাদু প্রথমে একটু ইতস্তত করলেও, শেষ পর্যন্ত নাতিকে নিরাশ করতে পারলেন না।
তানিশা ঘড়িটা বাড়িতে নিয়ে এলো। প্রতিদিন সে ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে থাকত, তার অদ্ভুত চিহ্নগুলো বোঝার চেষ্টা করত। একদিন, সে খেলার ছলে ঘড়িটার পেছনে একটা ছোট বোতাম দেখতে পেল। বোতামটা চাপ দিতেই ঘড়িটা হঠাৎ করে খুব উজ্জ্বল হয়ে উঠল, আর ঘরটা এক অদ্ভুত সোনালি আলোয় ভরে গেল।
আলোটা নিভে গেলে, তানিশা দেখল তার ঘরের চেহারা বদলে গেছে। তার মনে হলো, সে যেন তার ছোটবেলার ঘরে ফিরে এসেছে। তার খেলনাগুলো ঠিক সেভাবেই সাজানো আছে, যেভাবে সে ছোটবেলায় রাখত। এমনকি তার পুরনো টেডি বিয়ারটাও তার বিছানার পাশে বসে আছে!
তানিশা ঘাবড়ে গেল। সে দৌড়ে তার মায়ের কাছে গেল, কিন্তু তার মাও যেন ছোট হয়ে গেছেন! তার বয়স এখন আর তেমন বেশি মনে হচ্ছে না। মা তানিশাকে দেখে হাসলেন, "কী রে রূপা, আজ এত সকালে উঠেছিস?" রূপা তানিশার ছোটবেলার নাম ছিল।
তানিশা বুঝল, এই ঘড়িটা তাকে সত্যিই অতীতে নিয়ে এসেছে। সে সেই দিনটা উপভোগ করতে শুরু করল। তার মা তাকে তার প্রিয় প্যানকেক বানিয়ে দিলেন, যা সে অনেকদিন খায়নি। সে তার পুরনো খেলনাগুলো নিয়ে খেলল, যা সে বড় হওয়ার পর আর ছুঁয়েও দেখেনি। সেই দিনটা ছিল তার কাছে এক অদ্ভুত সুন্দর স্মৃতি।
সন্ধ্যায়, যখন ঘড়িটার আলো আবার জ্বলল, তানিশা আবার তার বর্তমানের ঘরে ফিরে এলো। ঘড়িটা আবার তার নিজস্ব উল্টো দিকে চলতে শুরু করল, কিন্তু তার কাঁটাগুলো এবার একটু বেশি উজ্জ্বল মনে হলো।
এই ঘটনার পর থেকে, তানিশা যখনই মন খারাপ করত বা কোনো কিছু নিয়ে হতাশ হয়ে যেত, সে সেই অদ্ভুত ঘড়িটার বোতামটা চাপত। ঘড়িটা তাকে তার অতীতের কোনো সুন্দর মুহূর্তে নিয়ে যেত। কখনও শৈশবের বন্ধুদের সাথে খেলার সময়, কখনও দাদুর কোলে শুয়ে গল্প শোনার মুহূর্তে, আবার কখনও প্রিয় শিক্ষকের কাছে প্রথম প্রশংসা পাওয়ার দিনে।
এই অভিজ্ঞতাগুলো তানিশাকে শিখিয়েছিল যে, অতীত শুধু স্মৃতির পাতায় সীমাবদ্ধ নয়। এর মধ্যে লুকানো আছে অগণিত অনুপ্রেরণা আর আনন্দের মুহূর্ত, যা বর্তমানের হতাশা দূর করতে পারে। অদ্ভুত ঘড়িটা তানিশাকে শিখিয়েছিল, জীবন যতই এগিয়ে যাক না কেন, আমাদের সুন্দর স্মৃতিগুলো সবসময়ই আমাদের সাথে থাকে, যা আমাদের বর্তমানকে আরও রঙিন করে তুলতে পারে। আর সেই সোনালী মুহূর্তগুলোই হলো আমাদের আসল সম্পদ।
78
View