Posts

উপন্যাস

নির্জন বিকেলের চিঠি

June 2, 2025

BD WORLD 4K

69
View

নির্জন বিকেলের চিঠি     

 পর্ব ১: সেই প্রথম দেখা শরতের আলোটা অন্যরকম হয়। যেন আকাশের রঙে হালকা বিষণ্নতা মিশে থাকে, আর বাতাসে থাকে এক অপূর্ব নিঃশব্দ সুর। সেই সুরেই ভেসে থাকে মেঘের দল, আর গ্রাম্য গলির ধুলো জমে থাকে কাশফুলের গায়ে। অনুরাধা এই গ্রামেই বড় হয়েছে—নির্জনপুর। নামটা শুনলেই বোঝা যায়, এখানে কোলাহল নেই, নেই শহরের ব্যস্ততা। কিন্তু আছে একটা অদ্ভুত শান্তি। সকালগুলো ময়ূরের ডাকে আর রাতগুলো ঝিঁঝিঁর গানে ভরে থাকে। মাঝেমাঝে কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ে পুরো গ্রামটা, তখন অনুরাধার মনে হয়, পৃথিবীটা বুঝি একটুখানি থেমে গেছে।অনুরাধা ছিল নরম স্বভাবের, স্বল্পভাষী মেয়ে। তার চোখে এক গভীরতা ছিল, যেন চুপ করে থাকা একটা কবিতা। সে প্রতিদিন সকালে উঠেই বাবার সঙ্গে সবজি তুলতে যেত বাগানে। বই পড়ার খুব শখ ছিল তার। কিন্তু সে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসত চুপচাপ নদীর ধারে বসে আকাশ দেখতে। তার স্বপ্ন ছিল—একদিন নিজের লেখা দিয়ে কারও মন ছুঁয়ে যাবে।একদিন হঠাৎ, সেই নদীর পাশেই দেখা হল এক ছেলের সঙ্গে।ছেলেটার নাম অরিন্দম। শহর থেকে এসেছে, গ্রামের স্কুলে নতুন শিক্ষক হিসাবে যোগ দিতে। পিঠে ব্যাগ, পরনে সাদা হালকা শার্ট, চোখে চশমা। দেখে শহুরে, কিন্তু হেঁটে চলার ভঙ্গিমায় ছিল একরকম শান্ত লয়ে ভরা সরলতা। অনুরাধা তাকে প্রথম দেখেই বুঝে ফেলল—এই মানুষটা অল্প কথায় অনেক কিছু বলতে পারে।সেই দিন দুপুরে, নদীর ধারে দু’জনের চোখে চোখ পড়ে যায়। কেউ কিছু বলেনি, কিন্তু চারপাশটা হঠাৎ করে খুব নীরব হয়ে যায়। যেন হাওয়াও থমকে দাঁড়ায়।এরপর থেকে, প্রতিদিন বিকেলে দেখা হতে লাগল। কখনও কাশফুলের মাঠে, কখনও গাছতলায়, কখনও নদীর পাড়ে। কথা হত খুব কম, কিন্তু সেই অল্প কথার মধ্যেই জমে উঠত এক অদ্ভুত বন্ধন।একদিন অরিন্দম বলেছিল——“তুমি চুপ করে থাকো কেন এত?”অনুরাধা একটু হেসে বলেছিল——“সব কথা বলার জন্য নয়, কিছু কথা বোঝার জন্য হয়।”অরিন্দমের চশমার আড়াল থেকে তখন একধরনের মুগ্ধতা দেখা গিয়েছিল। সে ধীরে বলেছিল——“তুমি ঠিক আমার মতোই—নীরব, কিন্তু ভিতরে শব্দে ভরা।”সেই বিকেলে নদীর ধারে বসে, তারা প্রথমবার একসঙ্গে সূর্যাস্ত দেখেছিল। চারপাশটা লালচে রঙে ভরে উঠছিল, আর দু’জনের ভিতর জেগে উঠছিল এক অনামী অনুভূতি।সেই অনুভূতিই ছিল এই গল্পের শুরু।

Comments

    Please login to post comment. Login