শেষ চিঠি
রাত্রি তখন গভীর, ছাদের কোণে বসে কাঁদছিল নীলু। হাতে তার একটি পুরনো চিঠি। চিঠির কাগজটা একটু ছেঁড়া, অক্ষরগুলো একটু ফ্যাকাসে — কিন্তু প্রতিটি শব্দ যেন আগুনের মতো জ্বলছে তার বুকে।
চার বছর আগে, হঠাৎ করেই নিখোঁজ হয়ে যায় আরিয়ান। শহরের সবাই ভেবেছিল, হয়তো কোনো দুর্ঘটনা, অথবা সে নিজেই চলে গেছে কাউকে কিছু না জানিয়ে। কিন্তু নীলু বিশ্বাস করতে পারেনি। আরিয়ান তাকে কথা দিয়েছিল — "কখনো হারিয়ে যাব না, যদি হারিয়ে যাই… তাহলে চিঠি পাঠাব।"
তখন সবাই হেসেছিল। কিন্তু আজ, চার বছর পর, ঠিক রাত ১টা বেজে ৪৫ মিনিটে, নীলুর দরজায় এক টুকরো কাগজ এসে পড়ে।
কাগজটা খুলে দেখে —
_"নীলু,
আমার চলে যাওয়ার পেছনে একটা সত্য লুকিয়ে আছে, যা কাউকে বলা যায় না।
কিন্তু তোমার জন্য আমার ভালোবাসা আজও ঠিক আগের মতোই।
যদি তুমি সত্যিই জানতে চাও — রাত ২টায় পুরনো রেলস্টেশনে এসো।
- আরিয়ান"_
নীলুর মনজুড়ে কাঁপুনি। সত্যি কি ফিরে এসেছে সে? নাকি কেউ খেলছে?
সে দ্বিধা না করে ছুটে যায় পুরনো রেলস্টেশনের দিকে। চারপাশে নিস্তব্ধতা। বাতি জ্বলছে না, কেবল একটা অদ্ভুত ঠাণ্ডা বাতাস।
হঠাৎ… ধোঁয়ার মতো করে আবির্ভূত হয় আরিয়ান। কিন্তু… তার চোখে কোনো দৃষ্টি নেই। মুখে নেই হাসি, শুধু গভীর বিষণ্ণতা।
"তুমি কি সত্যি আরিয়ান?" — কাঁপা গলায় জিজ্ঞাসা করে নীলু।
আরিয়ান শুধু বলে, "আমি কথা রেখেছি, নীলু। শেষবারের মতো দেখতে এসেছি তোমায়। আজ থেকে চার বছর আগে আমি মারা গিয়েছিলাম… ঠিক এই স্টেশনের কাছেই। কিন্তু তোমার ভালোবাসা আমাকে এত সহজে যেতে দেয়নি। এবার আমাকে বিদায় দাও।"
নীলুর চোখ বেয়ে নেমে আসে অশ্রুধারা।
আরিয়ান ধীরে ধীরে মিলিয়ে যায় অন্ধকারে।
শুধু একটি কাগজ উড়ে এসে পড়ে তার পায়ের কাছে —
"ভালোবাসা কখনো মরে না, নীলু। তুমিই আমার চিরন্তন প্রিয়।"