১.
আমার একটা আধ্যাত্মিক ক্ষমতা আছে।কেউ জানেনা।আসলে আমি নিজেই জানতাম না।প্রথম প্রথম তো খেয়াল করিনি।সময়ের সাথে সাথে দেখি যে,আসলে বিষয়টা সত্যি।বিষয়টা খোলসা করা প্রয়োজন। এরজন্য একটু পেছনে যেতেই হবে।
তখন আমার কচি বয়স। নতুন নতুন ইন্টারনেট নিয়ে ধারণা পাচ্ছি।ফেসবুকে আইডি খুলেছি। মিগ, নিম্বাজ সহ গোটা কয়েক চ্যাটিং এপসে আমার আইডি। বন্ধুরা মিলে যোগাযোগ রাখার জন্যই আমার আইডি গুলো খোলা।
কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই দেখি বন্ধুদের অনেকেই বিভিন্ন অপরিচিত মেয়েদের সাথে চ্যাটিং শুরু করলো। আস্তে আস্তে তারা দিনরাত মেয়েদের সাথে চ্যাট করতে করতে কেউ কেউ তো এতবেশি প্লেবয় টাইপ হয়ে গেল, তাদের সামনে দিয়ে কোন মেয়ের আইডি সাজেশন হিসেবে আসতে পারেনা। দুইদিন পর দেখা যায়,ঐ মেয়ের সাথে প্রেম হয়ে গিয়েছে তাদের!
এমনো হলো,এক বন্ধুর ফেইক আইডিতে ক্রাশ খেয়ে, প্রেমে পড়ে আরেক বন্ধুর রোমিও হয়ে যাবার অবস্থা।
আমি এসবের ধারেকাছে নেই। আমার কাছে কোন মেয়েকে নিজ থেকে নক দিতে ভালো লাগেনা। আর 'বাবু খাইছো' টাইপ লুতুপুতু কথাও আমার ভালো লাগেনা। তাই অন্য সবার মোবাইলে প্রেম,মোবাইলে বিয়ে,মোবাইলে বাসর,মোবাইলে ডিভোর্স হয়ে গেলেও আমি সিঙ্গেল রয়ে গেলাম।
কিন্তু বাদ সাধল অবন্তী। সিলেটে বাড়ি মেয়েটার। ফর্সা,গোলগাল মুখ। কপালে টিপ দেয়া ছবি দেখলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিশ্চিত কবিতা লিখিতেন-
'টিপ টিপ টিপ
হিয়াতে বাজে
বিপ বিপ বিপ'
আমিও একদিন বেসুরো গলায় তাকে নিয়ে গান গেয়ে ফেলেছিলাম-
'তুমি কি কেবল ছবি......'
অবন্তীর সাথে কথা বলে দেখলাম,সে আমার মত। প্রেম পছন্দ করেনা। আমার সাথে কথা বলে তার ভালো লেগেছে। সাধাসিধে একটা মেয়ে। এই মেয়ে নির্ঘাত স্বামী সেবা করে দিন কাটিয়ে দিবে।
এভাবে চলতে চলতে যখন তারসাথে আমার প্রেম হবে হবে ঠিক তখন একদিন অবন্তী বলল-
'আগামী শুক্রবার আমার বিয়ে। হুট করেই বিয়ে ঠিক হয়ে গেল। '
তারপর ভালোমন্দ কয়েকটা কথা হলো।
তাকে উইশ করলাম। রাতে আবার অনলাইনে আসবে বলেছিল অবন্তী।
আসেনি।
তারপর কিছুদিন আমার যথানিয়মে ভালো লাগেনি। যে অবন্তীকে নিয়ে একসাথে হাঁটব ভেবেছি, সে ব্যাথা পেলে আমি বলব 'ওহ,ব্যাথা পেয়েছি' সে অবন্তী হারিয়ে গেল? বিয়ের দাওয়াত টা পর্যন্ত দিল না!
তারপর আমি সব ভুলে আবার নতুন নিয়মে ইন্টার পরীক্ষার কথা চিন্তা না করে নিয়মিত চ্যাটিং করতে লাগলাম।
২.
নাফিজা চট্টগ্রামের মেয়ে। একটু শ্যামলা,তবে লম্বা। অবন্তীর বিরহ সবে ভুলেছি। তারপরেই নাফিজার আগমন।
তারসাথে কিছুদিন কথা বলে দেখলাম,নাফিজা আমার মত।প্রেম পছন্দ করেনা। আমার সাথে কথা বলে তার ভালো লেগেছে। সাধাসিধে একটা মেয়ে। এই মেয়ে নির্ঘাত স্বামী সেবা করে দিন কাটিয়ে দিবে।
নাফিজাকে নিয়ে একসাথে ছাদে হাঁটব ভেবেছি। সে ব্যাথা পেলে আমি ব্যাথা পাব। জোরে বলব,' ওহ,ব্যাথা পেয়েছি'।
কিন্তু না। তারসাথে আমার প্রেম প্রেম হবে যখন তখনই সে একদিন বলল-
'নিশান,সামনের শুক্রবার আমার বিয়ে।হুট করেই সব হয়ে গেল। কেমন যেন লাগছে।'
আমি বুকে পাথর চাপা দিয়ে,তাকে সাহস দিলাম। শুভকামনা জানালাম। তবে অবন্তীর মত ভুল করেনি নাফিজা। রাতে অনলাইনে এসে বিয়ের দাওয়াত দিয়েছিল। আমি যাব বলেছি।
যাইনি।
কেন যাব? আমার মন খারাপ। নাফিজা কি আমার হতে পারত না? তার কপালে একটা চুমু দিয়ে একসাথে চাঁদ দেখব ভেবেছি। সেটা কল্পনা করে কোলবালিশে কত চুমু খেয়েছি,সেটা কি নাফিজা জানে?
এগুলো ছিল মিগ আর নিম্বাজের সময়ে। এরপর আমি নিয়মিত ফেসবুকার হয়েছি। ইন্টারে বিশাল আন্ডা টাইপ রেজাল্ট করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে টিকে গিয়েছি কিভাবে কিভাবে যেন!
বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠে সবার প্রথম টার্গেট প্রেম করা। আমি এখানেও সেই পথে হাঁটলাম না। আমার কাছে 'বাবু খাইছো' টাইপ লুতুপুতু প্রেম ভালো লাগেনা।
৩.
সামিয়ার সাথে পরিচয় হলো হুট করেই। মেয়েটা বোটানিতে পড়ে। সামনাসামনি পরিচয়ের এক সপ্তাহ পরে দুজনে ফেসবুকে বন্ধু হলাম।
আইডি ঘুরে ঘুরে বুঝলাম, সেও আমার মত।
প্রেম পছন্দ করেনা। চ্যাট করে বুঝলাম,আমার সাথে কথা বলে তার ভালো লেগেছে। এই মেয়ে নির্ঘাত স্বামী সেবা করে দিন কাটিয়ে দিবে।
সাময়ার সাথে আমার প্রেম হবে হবে যখন তখনই সে আমাকে বলল-
'নিশান,আগামী শুক্রবার আমার বিয়ে। হুট করে ঠিক হয়ে গেল। কেমন যেন লাগছে।'
আমি সামিয়াকে যথারীতি অভয় দিলাম। শুভকামনা জানালাম।
তখন আমার মনে সন্দেহ হল। না, এটা সামিয়ার পরে ফাইজা,না,না, স্নিগ্ধার বিয়ে ঠিক হবার পর খেয়াল করেছি।
যে মেয়ে আমার সাথে কথা বলা শুরু করে, কয়েকদিন পরেই তার বিয়ে ঠিক হয়ে যায়!
এরপরে সেটা নিশ্চিত হলাম পুষ্পিতার সাথে যখন প্রেম হবে হবে করেও তার বিয়ে হয়ে গেল তখন। আমি পুরোপুরি নিশ্চিত হলাম। কারণ সবচেয়ে বেশি কথা হয়েছে পুষ্পিতার সাথেই। ৬ মাসের মত।
তবু ১০০% শিওর হবার জন্য যুথির সাথে প্রেম করব বলে ঠিক করলাম। জানতে পেরেছি,কি একটা কারণে তার বিয়ে ভেঙ্গে গেছে দুবার। তাই ভাবলাম,ওকে দেখতে বেশ লাগে আমার। তাই তার সাথেই প্রেম করব। ততদিনে আমি প্রেমে আগ্রহী হয়ে উঠেছি। যুথির সাথে কথা বলে বুঝলাম,সেও আমার মত। আগে প্রেম করতে চাইত না। প্রেম ভালো লাগেনা। এখন প্রেম করতে চায়৷ আর আমার সাথে কথা বলে তার ভালো লেগেছে।
একদিন সিদ্ধান্ত নিলাম,যুথিকে প্রপোজ করব। সে রাতে যুথি আগে থেকেই নক দিল। বলল-
'নিশান'
আমি বললাম,'তোমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে? '
যুথি অবাক হওয়ার ইমো দিয়ে বলল, 'হু,তুমি জানলে কিভাবে?'
আমি বললাম,'হুট করে?তোমার কিছু ভালো লাগছে না?'
যুথি স্যাড ইমো দিয়ে বলল,'হু'
আমি ১০০+১০০ মানে ২০০ % নিশ্চিত হলাম,আমার সাথে কোন অবিবাহিত মেয়ে কথা বললে,প্রেম প্রেম ভাব হলেই সে মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়ে যায়। বিয়েও হয়ে যায়।
৪.
অতীত কাহিনী বলা শেষ। এখন বর্তমানের কথা।
আমি এখন পড়াশোনা শেষ করে অনলাইনে আধ্যাত্মিক ক্ষমতার কথা প্রচার করে পেজ খুলেছি।
'আধ্যাত্মিক প্রেমিক নিশান'
বিজ্ঞাপন দিয়েছি বিভিন্ন জায়গায়।বিজ্ঞাপনের ভাষা-
'আপনার কি বিবাহ যোগ্য কন্যা আছে? বিয়ে হচ্ছেনা? বিয়ে ভেঙ্গে যাচ্ছে? কিছুতেই ছেলে জুটছে না? তবে এখনই নিম্নের ঠিকানায় যোগাযোগ করুন।৬ মাসের মধ্যে আপনার মেয়ের বিয়ে হয়ে যাবে। গ্যারান্টি। (ইশাল্লাহ।)
যোগাযোগ ঠিকানা হিসেবে,আমার ইমেইল,মোবাইল আর পেজের নাম দিলাম।
ইনকাম খারাপ না। ইদানীং মেয়ের চেয়ে মেয়েদের অভিভাবকদের লাইন লেগে গেছে। গতকালকে একজন এসেছে মেয়ের বিয়ের ব্যাপারে। বলেছি, ৬ মাস পরে মেয়ের ফেসবুক আইডি,মোবাইল নাম্বার নিয়ে এসে যোগাযোগ করতে৷
আর কারো যদি প্রয়োজন হয় তবে এই পেজে যোগাযোগ করুন-
'আধ্যাত্মিক প্রেমিক নিশান'
বিফলে মূল্য ফেরত........