Posts

গল্প

সংগ্রামী রাকিবা

June 4, 2025

Tanjila Islam

62
View

বাবা-মায়ের আদরের মেয়ে রাকিবা। তারা নদীর ধারে একটি ছোট্ট কুঁড়েঘরে বসবাস করে। রাকিবা সদ্য স্কুল শেষ করে কলেজে ভর্তি হয়েছে। তার বাবা আজাদ একজন কৃষক এবং মা রহিমা স্থানীয় জমিদার বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করেন। অনেক কষ্টে, অঢেল ভালোবাসা আর ত্যাগের বিনিময়ে তারা মেয়েকে পড়াশোনা করিয়ে এসেছে।রাকিবার পরিবার স্বপ্ন দেখে—একদিন সে বড় হয়ে ডাক্তার হবে। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে রাকিবাও দিন-রাত পরিশ্রম করে। সে বরাবরই মেধাবী ছাত্রী। তার একমাত্র লক্ষ্য—এই অভাব-অনটনের সংসারের অবস্থার পরিবর্তন করা। ঘর ছাড়া তাদের আর কোনো স্থাবর সম্পদ নেই।আজাদ মিয়া চিরকাল অন্যের জমিতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তিনি স্থানীয় এক প্রভাবশালী জমিদার মজিদের জমিতে চাষ করতেন, আর রহিমাও সেই জমিদার বাড়িতে কাজ করতেন। কিন্তু মজিদ ছিল অত্যন্ত লোভী ও স্বার্থপর। সে তাদের প্রতি সবসময় অপমানজনক আচরণ করত। রাকিবা সব দেখেও কিছু করতে পারত না, নিজেকে অনেক সময় অসহায় মনে হতো।তবু সব কিছু পাশ কাটিয়ে সে কলেজ শেষ করে মেডিকেল কলেজে ভর্তির প্রস্তুতি নেয় এবং ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। তার বাবা-মায়ের খুশির সীমা থাকে না।
কিন্তু সুখ যেন বেশিদিন সঙ্গ দেয় না। হঠাৎ একদিন রহিমা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। ডাক্তার জানান, তার বড় ধরনের অস্ত্রোপচার প্রয়োজন, যার খরচ অনেক। রাকিবার পড়ালেখার খরচেই ইতিমধ্যে আজাদ মিয়ার হাতে তেমন কিছু অবশিষ্ট ছিল না। বাধ্য হয়ে তিনি জমিদার মজিদের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা ধার নেন।
রাকিবার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। বাবা-মেয়ে দিনরাত খেটে সেই ঋণ শোধে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে রহিমা সুস্থ হয়ে ওঠেন।
একদিন হঠাৎ এক অচেনা লোক এসে রাকিবার হাতে একটি চিঠি দিয়ে যায়। ওটা ছিল তার কলেজ থেকে পাঠানো চিঠি। রাকিবা এত ভালো ছাত্রী হওয়া সত্ত্বেও হঠাৎ কলেজে না গেলে কলেজ কর্তৃপক্ষ খোঁজখবর নেয়। সব কিছু জানার পর তারা তার পড়ালেখার সমস্ত খরচ বহনের দায়িত্ব নেয় এবং তাকে আবার কলেজে ফিরে আসতে অনুরোধ জানায়।
রাকিবার চোখে জল আসে—আনন্দ আর কৃতজ্ঞতায়।সে আবার নতুন উদ্যমে পড়াশোনা শুরু করে।
এই গল্প আমাদের শেখায়—জীবনে যতই বাধা আসুক না কেন, যদি লক্ষ্য স্থির থাকে আর চেষ্টা অব্যাহত রাখা যায়, তাহলে কোনো স্বপ্নই অধরা থাকে না। তাই কখনোই হাল ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়।

Comments

    Please login to post comment. Login

  • Md parves islam 6 months ago

    অসাধারণ, এগিয়ে যান, অসাধারণ বুদ্ধিমাত্তা 🥰🥰🥰