সুনীলপুর- একটি জনবহুল গ্রাম, যেখানে প্রায় ২০০টি পরিবার পাশাপাশি বাস করে। লোকসংখ্যা অনেক কিন্তু মতের মিল ততটাই কম। গ্রামের একমাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থা দিন দিন করুণ থেকে করুণতর হয়ে উঠেছে- ছাদের ফাটল দিয়ে চুঁইয়ে পড়ে বৃষ্টির জল, বেঞ্চগুলো ভাঙাচোরা, বইয়ের অভাব চরমে আর শিক্ষকরা নিয়মিত উপস্থিত থাকেন না।
গ্রামবাসীরা সবাই অভিযোগ তো করে কিন্তু কেউই একত্র হয়ে সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসে না।
যেন প্রতিটি কণ্ঠস্বরে আছে হতাশা কিন্তু নেই কোনো সম্মিলিত প্রয়াস।
একদিন গ্রামে এলো এক আশার আলো- সরকারি নোটিশ। ঘোষণা করা হলো,
যদি গ্রামবাসীরা একমত হয়ে জমি বরাদ্দ দেয়, তাহলে সরকার আধুনিক মডেল স্কুল নির্মাণ করে দেবে।
শুরু হলো আলোচনা, তারপর ধীরে ধীরে রূপ নিল তর্কে।
কেউ বললো, আমার পুকুরের পাশে স্কুল হলে আমার ছেলেমেয়েদের সুবিধা হবে।
অন্যজন মুখ গম্ভীর করে বলল, আমি জমি দেব না, বিনিময়ে ক্ষতিপূরণ চাই।
কারো ইচ্ছা ছিল, স্কুল তার জমির পাশেই হোক- নিজ স্বার্থে উপকারের আশায়।
মতবিরোধ এতটাই বেড়ে গেল যে কেউ কারো কথাই শুনতে চাইল না।
শেষে একসময় সবাই নিশ্চুপ হয়ে গেল।
কেউ বিরক্ত হয়ে বলল, এইসব নিয়ে আর সময় নষ্ট করবো না!
আর একে একে সরে গেল সবাই, একতা হারিয়ে হার মানল সম্ভাবনা।
ওদিকে পাশের ছোট্ট পাড়া আলোকপাড়া, যেখানে মাত্র ৭টি পরিবার বসবাস করে। তারা কোনো ঝামেলা না করে, বিনা শর্তে নিজেদের ছোট্ট খেলার মাঠটি স্কুল নির্মাণের জন্য সরকারকে দিয়ে দেয়।
সবাই একত্র হয়ে, পরস্পরের মতের সম্মান রেখে, হাতে-হাত রেখে একটি সম্মিলিত আবেদন পাঠায় ইউনিয়ন অফিসে।
ফলাফল?
মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই আলোকপাড়ায় গড়ে ওঠে এক আধুনিক মডেল স্কুল।
বড় লাইব্রেরি, আধুনিক কম্পিউটার ল্যাব, খেলার মাঠ- সবকিছুতেই পরিপূর্ণ।
আর আজ, সেই আলোকপাড়ার স্কুলেই সুনীলপুরের শত শত ছেলেমেয়ে প্রতিদিন ভোরে এসে পড়াশোনা করে, যেখানে তারা কখনো ভাবেনি তাদের ভবিষ্যৎ গড়ে উঠবে অন্যের ঐক্যের ছায়ায়।
একদিন গ্রামের প্রবীণ রহিম চাচা আধুনিক স্কুলের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। চোখের কোণে জল, কণ্ঠ কাঁপছে।
তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বললেন-
আমরা ছিলাম সংখ্যায় অনেক কিন্তু অন্তরে ছিল না একতা। আর ওরা? হাতে গোনা কয়েকজন হয়েও ছিল ঐক্যের শক্তিতে বলীয়ান।
ফলে আজ ওদের ঐক্যের শক্তিতেই গড়ে উঠছে আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ।
যদি একতার অভাব থাকে তবে সংখ্যাগরিষ্ঠও পরাজিত হয় আর ঐক্য থাকলে অল্প কয়েকজনই হয়ে ওঠে ইতিহাসের কারিগর।
তাং- ০৪/০৬/২০২৫ ইং